E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মংলা বন্দরে লাইটারেজ জাহাজ সংকটে পণ্য খালাস ব্যাহত

২০১৬ আগস্ট ১৭ ১৬:২৯:০৯
মংলা বন্দরে লাইটারেজ জাহাজ সংকটে পণ্য খালাস ব্যাহত

বাগেরহাট প্রতিনিধি: মংলা বন্দরে লাইটার জাহাজ বার্জ,কার্গো ও কোস্টার সংকটে বন্দরে আগত বিভিন্ন পণ্যবাহী বিদেশী জাহাজের মালামাল খালাস দারুর ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লাইটারের অভাবে বুধবার বন্দরে অবস্থানরত ক্লিংকার, সার, পাথর, কয়লা ও গমসহ খাদ্যশস্য বোঝাই ১৩টি জাহাজের মধ্যে বেশ কয়েকটি জাহাজে পণ্য খালাস কাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানীকারক, পণ্য খালাসকারী প্রতিষ্ঠানসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।

একারণে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে মংলা বন্দরের। পর্যাপ্ত লাইটারেজ জাহাজ না থাকায় পণ্য খালাস করতে না পেরে দীর্ঘদিন ধরে দীর্ঘ দিন ধরে জাহাজগুলো এ বন্দরে অলস অবস্থায় পড়ে থাকছে হচ্চে। এতে বন্দর ব্যবহারকারীরা মংলা বন্দর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এছাড়া অনেক জাহাজ মালিক তাদের জাহাজ এ বন্দরে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারী নেতারা জানান, বিগত বছরগুলোতে মংলা বন্দরে জাহাজ সংকটের কারণে মন্দাভাব বিরাজ করায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ বার্জ, কার্গো ও কোস্টার মালিক তাদের নৌযান বিক্রি করে দিয়েছেন অথবা অন্য রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত করেছেন। এ কারণে বর্তমানে এ অঞ্চলের মালিকদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নৌযান নেই। এরপরও মাঝে মধ্যে স্বল্প সংখ্যক বার্জ-কার্গো-কোস্টার জাহাজে পণ্য পরিবহনের জন্য পাওয়া গেলেও অধিক ভাড়া এবং অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার আশায় সেগুলো ভারত থেকে আমদানি করা সিমেন্ট, ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। ফলে মংলা বন্দরে লাইটারেজ জাহাজ সংকট লেগেই আছে। গতকাল বুধবার মংলা বন্দরে সার, ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, গাড়ী, গ্যাস ও গমবাহী ১৩টি জাহাজ অবস্থান করছিল। বর্তমান সংকটে পড়ে বেশ কয়েকটি জাহাজের পণ্য খালাস কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

মংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও ষ্টিভিডরস মেসার্স নুরু এন্ড সন্স এর মালিক এইচ এম দুলাল এবং ইউনিক মেরিটাইমের লিঃ এর পরিচালক শেখ বদিউজ্জামান টিটু বলেন, লাইটার সংকটের কারণে মংলা বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে বিলম্ব ঘটছে। একেকটি জাহাজ এ বন্দরে দিনের পর দিন অলস পড়ে থাকছে। এতে বর্হিবিশ্বের কাছে মংলা বন্দরের সুনাম যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি এ বন্দরে জাহাজ মালিকরা তাদের জাহাজ পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। পণ্যবাহী বিদেশী জাহাজ এ বন্দরে অলস পড়ে থাকায় প্রতিদিন এক একটি জাহাজকে প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলার লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে বিদেশী জাহাজ মালিকেরা এ বন্দরে জাহাজ পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া পণ্য খালাস কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যখনই পণ্য খালাসের জন্য কোন লাইটার জাহাজের পাশে ভিড়ে থাকে তখন তাকে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য লোকবল পাঠাতে হয়। আবার যখন লাইটার না থাকে তখন ওই লোকজনকে জাহাজে অলস বসিয়ে রেখে অতিরিক্ত শ্রম মজুরী দিতে হয়। এ সকল কারণে পণ্য খালাস কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো এ বন্দরে পণ্য বোঝাই খালাস কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অপরদিকে লাইটারের অভাবে আমদানী পণ্য সময় মত খালাস করে নির্ধারিত স্থানে পৌছাতে না পারায় পণ্যের বাজারজাত ও দাম বেড়ে যাচ্ছে বহুলাংশে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নৌযান মালিক জানান, লাইটার সংকট নিরসনে কোন কোন আমদানীকারক ও বন্দর ব্যবহারকারী নিজ উদ্যোগে নৌযান নির্মাণ করতে চাইলেও নানা জটিলতায় নতুন করে লাইটারেজ জাহাজ নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে এ সমস্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় নৌযান মালিকেরা সিন্ডিকেট করে নতুন লাইটার জাহাজ নির্মাণের অনুমতি না দেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে নানাভাবে ম্যানেজ করে রেখেছে। এ সকল অসাধু নৌযান মালিকেরা মংলা বন্দরে লাইটার সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও অধিক হারে ভাড়া আদায় করে আসছে। তাদের চাহিদানুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া না দিলে তারা নৌযান সরবরাহ না করে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত করছে। আর এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে মংলা বন্দরসহ বর্হিবিশ্বে।
আমদানীকারক মেসার্স শেখ ব্রাদার্সের মালিক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এ বন্দরে তার গম ও সারবাহি দু’টি জাহাজ রয়েছে। লাইটার সংকটের কারণে সময়মত পণ্য খালাস করতে না পারায় তাকে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর আগে আরো তিনটি জাহাজে একই কারণে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ধারাবাহিক এ লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে নিজস্ব লাইটার জাহাজ নির্মাণ করার ইচ্ছা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তাও পারছি না, যার কারণে আমি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে বাধ্য হয়ে আমরা এ বন্দর আর ব্যবহার করব না।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে লাইটার সংকটের কারণে পণ্য খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। যেহেতু এ বন্দরে আমদানী রপ্তানী পূর্বেও তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। সেক্ষেত্রে নতুন করে লাইটার নির্মাণের অনুমতি থাকা প্রয়োজন। আগ্রহী আমদানীকারক কিংবা ব্যবসায়ীদের দ্রুত নতুন লাইটারেজ জাহাজ নিমার্ণের সুযোগ দেয়া হলে এ সংকট কেটে যাবে।



(এসএকে/এস/আগস্ট১৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test