E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এশিয়া মহাদেশের প্রথম পাকা সড়ক বাগেরহাটে

২০১৬ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৮:০৫:৩০
এশিয়া মহাদেশের প্রথম পাকা সড়ক বাগেরহাটে

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ বছরের পুরানো খানজাহান (র:) আমলের হ্যারিটেজ পাকা সড়কটি সংস্কার শেষে এ মাসের শেষে খুলে দেয়া হচ্ছে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য। বিশ্ব ঐতিহ্যের শহর বাগেরহাটে আবিষ্কৃত এশিয়া মহাদেশের প্রথম এই হ্যারিটেজ পাকা সড়কটি পোড়া মাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। এশিয়া মহাদেশের প্রথম এই পাকা সড়ক ৯৫৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ০.২৭ মিটার প্রস্থ।

২০১১ সালে এই সড়কটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খননের মাধ্যমে উন্মোচন করেন। এর আগে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ বছর পূর্বে নির্মিত দেশের কোথাও এমন প্রাচীন সড়কের অস্তিত্ব নেই। সড়কটির সড়কটি খননের মাধ্যমে আবিষ্কার কালে বেরিয়ে আসে পনেরো শতকের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রত্নসম্পদসহ কৌতূহল উদ্দীপক কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। সময়ের নির্মিত পোড়া মাটির ইটের পাঁকা সড়কটিতে রয়েছে কালভার্ট, নিরাপত্তা চৌকি, প্রবেশদ্বারসহ বেশ কছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দেশের একমাত্র হ্যারিটেজ সড়কটি আবিষ্কারের পরই একই বছরে সরকার এশিয়া মহাদেশের প্রথম পাকা এই সড়কটিকে রক্ষায় ‘সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে’ এর সংরক্ষণভার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত করে। এরপর এই সড়কটি সংস্কার করে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করার জন্য এগিয়ে আসে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ সাউথ এশিয়া পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়। সংস্কার শেষে এমাসের শেষে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে খানজাহান আমলের এই হ্যারিটেজ সড়কটি। সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. শফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিশ্বখ্যাত কনজারভেশন আর্কিওলজিস্ট স্পেশালিস্ট ড. নিলানকরে’র তত্ত্বাবধানে শ্রীলংকার ৬জন দক্ষ শ্রমিকসহ শতাধিক লোক ১৫ মাস ধরে এশিয়া মহাদেশের প্রথম এই হ্যারিটেজ পাকা সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ করেন।

বাগেরহাটের ষাটগুম্বজ জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. গোলাম ফেরদৌস জানান, ‘খানজাহানের নির্মিত হ্যারিটেজ এই ইটের পাঁকা সড়কটি শতাধিক বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিলো। দেশে আবিষ্কৃত এশিয়া মহাদেশের প্রথম পাঁকা এই সড়কটির ঐতিহ্য ও প্রত্ননিদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।’ এর আগে আবিষ্কৃত শের শাহ সুরির আমলে নির্মিত ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীনতম পাকা সড়ক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসলেও খানজাহান (র:) আমলের ইটের এই পাকা সড়কটি তারও একশত বছর আগে নির্মিত হয়। সে কারণে আবিষ্কৃত এই সড়কটিই এখন এশিয়া মহাদেশের প্রথম পাকা সড়কের হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।

ইতোমধ্যে দু’পাশে বসবাসকারীদের হ্যারিটেজ সড়কটি ব্যবহার ও ভারী যানবাহন চলাচল থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এলাকাবসিসহ পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য গণচিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিকল্প সড়ক স্থাপন, এই অমূল্য প্রত্নসম্পদ সমৃদ্ধ হ্যারিটেজ সড়কটি সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার কাজে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় জনবল নিযুক্ত করা, সড়কটির দু’প্রান্তে টহল চৌকি বসানের পাশাপাশি পুরাকীর্তি সম্পর্কে স্থানীয় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে। প্রাচীন এই সড়কটি সংরক্ষণের জন্য এর পাশদিয়ে একটি বিকল্প আধুনিক সড়ক তৈরি আলোচনা গড়িয়েছে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভাতেও। বিকল্প রাস্তা নির্মাণ না হলে প্রাচীন নিদর্শনটি টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হবে এমন শঙ্কার বিষয়টি উঠে আসে ওই বাগেরহাট জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায়।

খানজাহান (র:) আমলের হ্যারিটেজ পাকাঁ সড়কটি বিষয়ে, ঐতিহ্য-অন্বেষণ ট্রাস্টের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের চলাচলের জন্য কোনো বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করেই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ এই সড়কটির সংস্কারের কোনো মানে হয় না। এভাবে কনজারভেশন (সংরক্ষণ) সম্ভব নয়। এধরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নস্থাপত্য সর্ব সাধারণের চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, যেহেতু সড়কটি স্থানীয়দের চলাচলের প্রধান মাধ্যম। তাই পাশ দিয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা নির্মাণ না হলে ভারি যান চলাচলে মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনটি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দ্রুত দর্শনার্থীদের জন্য সড়কটি উন্মুক্তের পাশাপাশি এটি সংরক্ষণে বিকল্প রাস্তা নির্মাণের অভিমত এই প্রত্ন বিশেষজ্ঞের।

(একে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test