E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় সরকারি সেবালয়ে দলিত জনগোষ্টীর অংশগ্রহণ বাড়ছে

২০১৬ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৫:৫৩:৫৮
সাতক্ষীরায় সরকারি সেবালয়ে দলিত জনগোষ্টীর অংশগ্রহণ বাড়ছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। তবে এখানকার দলিত জনসংখ্যার কোন সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকাারি পরিসংখ্যান অনুযায়ি এর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। যার একটি বড় অংশ সরকারি সেবালয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে।

দলিত নেতা গৌর পদ দাস জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগ কবলিত জেলা সাতক্ষীরা। বেসরকারি সংস্থা পরিত্রাণের সর্বশেষ গণনা অনুযায়ি এখানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দলিত জনগোষ্টীর বসবাস। এ জেলায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ১২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি যক্ষা হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি সরকারি কলেজ, তিনটি প্রক্রিয়াধীন, চারটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে দু’টি পৌরসভা। এ ছাড়া জেলা পশু হাসপাতাল, সাতটি উপজেলার একটি করে পশু হাসপাতাল, একটি সরকারি হাঁস মুরগি পালন কেন্দ্র রয়েছে। জেলা কৃষি অফিস, সাতটি উপজেলায় সাতটি কৃষি অফিস, একটি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সাতটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস রয়েছে। রয়েছে জেলা নির্বাচন অফিস, সাতটি উপজেলা নির্বাচন অফিস, পরিসংখ্রান অফিস, জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও একটি করে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অফিস রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ছাড়াও রয়েছে সাতটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়। এর পাশাপাশি জেলা সাব রেজিষ্টার, উপজেলা পর্যায়ে সাব রেজিষ্টি অফিস, সেটেলমেণ্ট অফিস, জেলা পরিষদ, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তার অফিস। জেলার ৭৮টি ইউনিয়নে রয়েছে একটি করে ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান। রয়েছে নির্বাহী ও বিচারিক আদালত।

তিনি অরো জানান, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দলিত সম্প্রদায়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। প্রায় একই হারে তারা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায়। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে তারা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে তারা প্রায় ৯০ভাগ সরকারি সেবা নিতে যায়। তবে কৃষি , পশু সম্পদ ও মৎস্য বিভাগে সেবা নিতে যাওয়ার সংখ্যা ৬০ শতাংশের একটু বেশি।

তবে দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কার্তিক দাস জানান, সরকারি কলেজে বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি, ভর্তি, হোস্টেল সুবিধার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ কোন ছাড় দেওয়া হয় না। যে টুকু সেবা তারা পেয়ে থাকেন তা সাধারণ ছাত্র ছাত্রী হিসেবেই। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেও কোন লাভ হয় না। কারণ সরকারিভাবে কোন বিশেষ ঘোষণা না থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দলিতদের আবেদন নিবেদন নিয়ে মাথা ঘামান না। একই অবস্থা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের পরিসেবার ক্ষেত্রে। বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা সবক্ষেত্রে তারা যথাযথ পরিষেবা পাচ্ছেন না। জমি ক্রয়, বিক্রয়, নামপত্তন, বন্ধকসহ সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের জন্য কোন বিশেষ সুবিধা নেই। দুর্যোগে ত্রাণ সুবিধার ক্ষেত্রেও তাদেরকে অবহেলার চোখে দেখা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য গোষ্ট বিহারী মণ্ডল জানান, জেলায় দলিত জনগোষ্টী অবহেলিত। বিশেষ করে ন্যয় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ওকালত নামাসহ বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র কিনতে খরচবহুল হওয়ায় তারা আদালতের পরিসেবা ঠিকমত গ্রহণ করতে পারছেন না। লিগাল এইড সম্পর্কে যথাযথ প্রচার না থাকায় সরকারি মহৎ উদ্যোগ ব্যহত হচ্ছে। ফলে দলিত জনগোষ্টীর একটি বড় অংশ এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তবে বিশিষ্ট সমাজসেবক নারায়ন মজুমদার বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনা ও ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে দালিত জনগোষ্টীর জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া গেলে তাদেরকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে এজন্য তিনি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও পৃথক দলিত কমিশন গঠণের দাবিতে দলিত সংগঠণগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ২০০৯-২০১০ সালে দলিত সংগঠণগুলো যেভাবে তাদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছিল ২০১২-২০১৩ সালে ওইসব সংগঠণগুলোর অধিকাংশই ঠুনকো কারণ ভেঙে পৃথক সংগঠনের সৃষ্টি করে। এ বিভাজনের ফলে দলিতদের অধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী দালিত জনগোষ্টীর উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে সরকারি পরিষেবা গ্রহণে দলিতদের অংশগ্রহণ ক্রমশঃ বাড়ছে।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test