E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনিতে শিক্ষককে অপহরণ করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

২০১৬ অক্টোবর ১৯ ২৩:১৮:৪৬
আশাশুনিতে শিক্ষককে অপহরণ করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রার্থীর নাম বিদ্যোৎসাহী সদস্যের তালিকায় না রেখে সাংসদের কাছে পাঠানোয় একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে তাকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আটক রেখে মারপিট করার পর পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে কয়েকটি অলিখিত কাগজে সিল ও সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে তাকে জঙ্গী বানিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে।

এদিকে অপহরণ, মারপিট ও চাঁদাদাবির ঘটনায় খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের বিরুদ্ধে মামলা করায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যরা। ম্মালা তুলে না নিলে পরিণতি ভাল হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আশাশুনি উপজেলার ৫৬নং খাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাহাজ্জাহান আলী জানান, বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে পরিতোষ বিশ্বাস, সঞ্জয় দাস ও পঙ্কজ ঘোষের নাম উল্লেখ করে গত ৫ অক্টোবর সাংসদ ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের কাছে তালিকা পাঠান। বিষয়টি জানতে পেরে গত সোমবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম বিদ্যুৎসাহী সদস্যের নামেরতালিকার প্রথম স্থানে তার মনোনীত অসিত বরণ ঘোষকে কেন রাখা হয়নি তা মোবাইলে জানতে চান। জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় চেয়ারম্যান তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার পেটুয়া বাহিনীর সদস্য রিপন সরদার, লাভলু, নওয়াব আলী, পঙ্কজ ঘোষসহ কয়েকজন তাকে স্কুল সংলগ্ন বাসায় যেয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে এনে চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানে চেয়ারম্যানসহ তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। এ সময় তার কাছে থাকা চাবি নিয়ে স্কুলের আলমারি খুলে ব্যক্তিগত চেক, অফিসের চেকবই, সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ জিসিনিপত্র নিয়ে আসা হয়। রাত ১২ টার দিকে চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে জোরপূর্বক অলিখিত কয়েকটি সাদা কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেওয়ার পর সিল মারেন। এ ছাড়া অসিত বরণ ঘোষকে প্রথম স্থানে রেখে বিদ্যুৎসাহী সদস্য তালিকা তৈরি করে তাতে সাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন চেয়ারম্যান । টাকা না দিলে তাকে জঙ্গি বানিয়ে মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক সুধাংশু মণ্ডল মোবাইল করলে তাকে ধরতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে বাথরুমে যেয়ে তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বিষয়টি আংশিক অবহিত করেন। পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে তাকে শ্যালকের মোটর সাইকেলে তুলে দেওয়া হয়। এর পরপরই পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আশাশুনি সদরে নিয়ে এলে ভোর সাড়ে চারটার দিকে তিনি শিক্ষক আব্দুর রহিমের বাড়িতে চলে আসেন।

মঙ্গলবার সকালে তিনি বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবহিত করেন। রাতে তিনি চেয়ারম্যান ডালিমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা (১১নং)দায়ের করেন। মামলার খবর পেয়ে চেয়ারম্যান তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

আশাশুনি উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাকিব আহম্মেদ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে খাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর বন্ধ স্কুলের তালা খুলে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান তার কাছে চাবি দেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাহাজ্জাহান আলীর উপর হামলা, মারপিট, সরকারি সম্পদ লুটপটের কথা স্বীকার করেন।

খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম প্রধার শিক্ষকের উপর হামলাসহ আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান জানান, গামলা, মারপিট ও চাঁদাদাবির ঘটনায় শিক্ষক রাহাজ্জাহান বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতেই খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে তানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।







(আরএনকে/এএস/অক্টোবর ১৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test