E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর ধামইরহাটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

২০১৬ নভেম্বর ০৭ ১৫:৩১:২২
নওগাঁর ধামইরহাটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলায় চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, খুন বৃদ্ধির পাশাপাশি গোটা উপজেলা জুড়ে এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে  পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সংঘটিত চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ও খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। বরং চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন থানার ওসি। ফলে, গোটা উপজেলা এখন মাদকে সয়লাব হলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে  পুলিশের আটক বাণিজ্য। সব কিছু মিলিয়ে ধামইরহাটের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন থানা থেকেই। উপজেলার অলিগলিতে হাত বাড়ালেই মিলে মাদক। এই নেশার টাকা যোগাড় করতে চুরি ছিনতাই বেড়েছে এলাকায়। অপরাধীদের থানায় আটক রেখে শুরু হয় দর কষাকষি। বিষয়টি ধামইরহাটে এখন সকলের মুখে মুখে ফিরছে। এটি ওসির নাকি ‘রুটিন ওয়ার্ক ’ এমন কথাও দাবী করলেন, সেখানকার এক শিক্ষক।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ নবেম্বর রাতে থানার পার্শে¦ কাশিয়াডাঙ্গার আওয়ামীলীগ নেতা মুকুল হোসেনের বাড়ের গ্রিল গেটে একটি মোটরসাইকেল চুরি যায়। ২ নবেম্বর সন্ধ্যায় বিহারী নগর পুলিশ বক্সের নিকট একদল দুর্বৃত্ত একটি চলন্ত গাড়ি থেকে কামরুজ্জামান বাদল নামে এক দলিল লেখককে অপহরণ করে। রাত ১২ টায় পত্নীতলায় একটি “স” মিল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ৩১ অক্টোবর রাতে বস্তাবর ক্যাম্পের নিকট মশিউর রহমানের কাছ থেকে ১বোতল ফেন্সিডিল পেয়ে তাকে আটক করে থানার পুলিশ। কিন্তু পরে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেন ওসি। এর আগে একই বাড়িতে তল্লাশি করে ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ মশিউরকে আটক করে একই কায়দায় ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

২৪ অক্টোবর দুপুরে উপজেলা সদরের দক্ষিণ চকযদু মহল্লার নারী কাউন্সিলর মমতাজ বেগমের বাসার গ্রিল কেটে ৮ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এব্যাপারে পুলিশ মালামাল উদ্ধারসহ কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি। ১২ অক্টোবর বিহারীনগর টাকার বিনিময়ে জনৈক ব্যক্তির মামলা রেকর্ড করেন ওসি। ৭ অক্টোবর ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাইতাড়া “স” মিলে মারামারির ঘটনার মামলা রেকর্ড করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, টাকা ছাড়া একটি জিডিও থানায় রেকর্ড করা হয়না।

অপরদিকে বিহারীনগরের জনৈক ব্যক্তি নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৮ আগষ্ট ২ মাদক ব্যাপারীকে আটক করে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন ওসি। জমি জমা সংক্রান্ত ঘটনার মিমাংসার নামে এক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে ওসি মশিউর রহমানের নির্দেশে অন্য এক কর্মকর্তা ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। এর পরেও বিষয়টি মিমাংসাও হয়নি, টাকাও ফেরৎ দেয়নি।

২০ অক্টোবর মাহিসন্তোষ চৌঘাট গ্রামের হাসানের ভাই কুদরত (৩৫) নামে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক রেখে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রাত ১১ টায় ছেড়ে দেয়া হয়। চকচন্ডির এক জনসভায় আলমপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করায় তিনি এখন হুমকির মুখে রয়েছেন।

২২ অক্টোবর আমাইতাড়া মোড়ের এক বাসায় চকমহেশ গ্রামের সুবহান (৪০) বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। গ্রামবাসী জানাজার প্রস্তুতি নিলে ওসির নির্দেশে ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় পুলিশ। ৪ অক্টোবর শল্পী (কোকিল) গ্রামের আনোয়ার হোসেনের শিশু পুত্র অপহরণ হলে তার কঙ্কাল আলতাদীঘি থেকে উদ্ধার করা হয়। ওমরপুর গ্রামের আইয়ুব হোসেনকে ২৩ মার্চ টিএন্ডটি থেকে অপহরণ করা হয়। ২৪ মার্চ তাকে বগুড়া থেকে উদ্ধার করা হয়।

২৪ মার্চ থানা সদরের অধ্যাপক ইউনুস আলীর বাসার আলমারী ভেঙ্গে দিবালোকে ১২ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরি যায়। থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওবাইদুল মেম্বারের ভাগ্নে আমিনুল ইসলামের বাসায় দিবালোকে আলমারি ভেঙ্গে ৫ লাখ টাকার স্বর্নালংকার চুরি যায়।

২৯ মার্চ আহাদ আলী মৌলভী সন্ধ্যায় টিএন্ডটির মোড়ের বাসায় ফেরার পথে বিহারীনগর পুলিশ বক্সের নিকট তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জবাই করার উদ্যোগ নেয় দুর্বত্তরা। ওই সময় ট্রাকের আলোর ঝলকানীতে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। ২৫ অক্টোবর টিএন্ডটি মোড় থেকে একজন মাদক সেবীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাত ১০টায় ২ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে থানা থেকেই ছেড়ে দেয়া হয়।

১২ জুন জোতওসমান গ্রামের জনি (২৫) কে ১৭ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করে তাকে ১৯ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ২৬ অক্টোবর মঙ্গলকোঠার দেলোয়ার ও চকময়রামের শাকিলের ২টি সাইকেল চুরি যায়। ৪ আগষ্ট রঘুনাথপুর গ্রামের বাবুকে তাস খেলার অভিযোগে গভীর রাতে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে থানায় আটক রেখে ১ লাখ টাকার দাবি করা হয়।

এছাড়া সালিশীর মাধ্যমে মাদক নির্মূলের নামে চলছে আটক বাণিজ্য। এখানে প্রতিদিন চলছে জমি- জমা সংক্রান্ত সালিশী বৈঠক। বৈঠকে পুলিশের মনোনিত মাতবর বিচারকের আসনে বসেন। থানার ওসি, তদন্ত কর্মকর্তারা মাতবরের কাছে বিচারের ভার তুলে দিয়ে নিজেরা থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে। থানার দালালদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক আদান-প্রদান সম্পন্ন করে নিজেদের পকেট ভারী করলেও সর্বশান্ত হচ্ছেন বিচার প্রার্থী সাধারণ মানুষ।

(বিএম/এস/নভেম্বর ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test