E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর: সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস

২০১৬ নভেম্বর ১৪ ২০:৫২:০৭
আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর: সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস

শেখ আহসানুল করিম,বাগেরহাট : আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর ।ভয়াল সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস।

সিডরের ৯ বছর পূর্ণ হলেও বাগেরহাটে গৃহহীন হাজারো পরিবার। নিশ্চিত করা যায়নি এই জনপদের মানুষগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। দেরীতে হলেও নির্মাণ শুরু হয়েছে টেকসই বেড়িবাঁধ । সৃষ্টি করা যায়নি ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থসামাজিক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

সাইক্লোন সিডরে এই জেলার সুন্দরবন সন্নিহিত একমাত্র উপজেলা শরণখোলাতেই সরকারি হিসেবে মারা যায় ৯০৮ জন । এরমধ্যে বলেশ্বর নদী তীরবর্তী সাউথখালী ইউনিয়নেরই প্রায় ৭শ মানুষ মারা যায়। যার অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। লন্ডভন্ড হয়ে যায়, ঘরবাড়ী, গাছপালা ও ফসলের ক্ষেত। তবে বেসরকারি হিসাবে এই মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয় শরণখোলাসহ বাগেরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় দেড় শত কিলোমিটার এলাকা। সিডরের পর বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের সাহায্যে ছুটে আসে সরকারি- বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সাধারণ মানুষ। সুপার সাইক্লোন সিডরে সেই ভয়াল দু:সহ স্মৃতি নিয়ে আজও তাড়া করছে ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলবাসিকে। উপকুলবাসি কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে ভিটামাটি ছেড়ে জীবন জীবীকার জন্য ছুটে গেছেন অন্যত্র।

পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ, প্রতিশ্রুত ও নিরাপদ আবাসনের দাবি নিয়ে এখনও প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জের ৪লাখ মানুষ। তবে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার বলছেন, টেকসই বেড়ি বাঁধ পেতে বাগেরহাটের সিডর দূর্গোতদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত। সরকারি-বেসরকারি ভাবে অনেক পরিবার সিডর পরবর্তীতে বসবাসের জন্য ঘর পেলেও তার মোটেই ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সহনীয় নয়।

ইতোমধ্যে জিও-এনজিওদের দেয়া অধিকাংশ ঘর ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। শরণখোলার ক্ষতিগ্রস্থ বলেশ্বর পাড়ের মানুষের কাছে গিয়ে স্পস্টই ফুটে ওঠেছে এসকল চিত্র। স্বজন হারোনো মানুষগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মধ্যে ও বাইরের পরিবারগুলো আজও বেঁচে থাকায় স্বপ্ন দেখে । স্বজন ও সম্পদ হারানো এই জনপদের মানুষগুলো নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে আজ পালন করছে ভয়াল এই দিনটিকে। বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দেয়া সাউথখালীর বর্তমান অবস্থা জানতে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী উত্তর সাউথখালী গ্রামের ছত্তার ফকির বলেন, ‘পোলা মাইয়্যাসহ ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নি:স্ব জীবন কাটছে কোন মতে কিন্তু মোগো কেউ কাজের ব্যবস্থা করে দেয় না। মোর ভাইবাগাররা কাজ করতে ঢাকা ও চিটাগাং চলে গেছে। মোগো যদি এহন নিত্য কাজ দেয় তাহলে খেটে পড়ে জীবন বাছবে’।

সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সিড়রে তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী লোক মারা গেছে। এবং সম্পদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। স্বজন হারানো এজনপদের মানুষের প্রানের দাবি বসবাসের জন্য একটু ঘর ও টেকসই বেড়ীবাঁধ। জনসংখ্যা অনুপাতে হয়নি সাইক্লোন সেল্টার। দুর্যোগের পর বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে নির্মিত সেল্টারগুলোর কাজের মান নিম্ন হওয়ায় ইতোমধ্যে তার অধিকাংশ ভবন ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার গুলোরও। এখনও শতশত পরিবার খুপড়ি ঘরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, শরণখোলাবাসীকে রক্ষার জন্য আবাসন ব্যবস্থা, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবিদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং উপকূলীয় এ এলাকার গণমানুষের দাবিরমুখে এ বছরই নির্মান শুরু হয়েছে প্রত্যাশিত টেকসই বেড়ীবাঁধ।



(এসএকে/এস/নভেম্বর ১৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test