E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা: রিভিশন পিটিশনে বিলম্বিত হচ্ছে বিচার কার্যক্রম

২০১৬ নভেম্বর ১৬ ২০:১৩:৪৬
শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা: রিভিশন পিটিশনে বিলম্বিত হচ্ছে বিচার কার্যক্রম

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ২০০২ সালে কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার বিচার কার্যক্রম আসামীদের রিভিশন পিটিশনের বেড়াজালে পড়ে বিলম্বিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষের চেষ্টার পরও বাদি তার জীবদ্দশায় এ বিচারের রায় দেখে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে !

সাতক্ষীরা জজ কোর্টেও পিপি অ্যাড ওসমান গনি জানান, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস(সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়।

হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে একডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হন।

এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে অঅসামী করে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা(সিআরপি-১১৭১/০২) দায়ের করেন। মামলায় ১৮জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বারবার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে যেয়েও তিনি জবানবন্দি না নিয়ে নিজের মনগড়া কথা ১৬১ ধারার জবানবন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফিডেফিড দিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে বিচারককে অবহিত করেন সাক্ষী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, শওকত হোসেন, শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক জাভিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও আলতাফ হোসেন লালু।

বাদী মোসলেমউদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে নারাজির আবেদন জানালে শুনানী শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদি ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা ( ১৭/০৪) দায়ের করেন। ২২ এপ্রিল শুনানী শেষে বিচারক এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। নিরুপায় হয়ে ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন।

দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ফাইলবন্দি থাকার পর ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য্য করেন। ওই দিনই কলারোয়া থানায় মামলাটি কের্ড করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল ইসলাম বিএনপি নেতা হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অস্ত্র, বিষ্ফোরক ও হত্যা চেষ্টার ধারায় পৃথক তিনটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বর্তমানে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে দাখিলকৃত মামলা দু’টি এসটিসি ২০৭/১৫ ও ২০৮/১৫ জেলা ও দায়রা ও জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন রয়েছে।

অপরদিকে হত্যার চেষ্টা মামলাটি টিআর ১৫১/১৫ নং মামলাটি অভিযোগ গঠণ করা হয়। অভিযোগ গঠণের আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের আনীত রিভিশন পিটিশনটি (৪৩৬/১৫) জজ কোর্টে খারিজ হয়ে যায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি মহামান্য হাইকোর্টে ক্রিমিনাল মিস কেস (২২৪৭৯/১৬) করলে সেটিও গত ১২ জুলাই খারিজ হয়ে যায়। একইভাবে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামী বিএনপি কর্মী জহুরুল ইসলাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন পিটিশন করলে সেটিও গত রবিবার খারিজ হয়ে যায়।

জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গণি জানান, সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বুধবার টিআর ১৫১/১৫ নং মামলাটির সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য ছিল। সে অনুযায়ি রাষ্ট্রপক্ষ বাদি বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোসলেম উদ্দিনের সাক্ষী গ্রহণের কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। একইসাথে বাদির বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে সাক্ষী দ্রুত শেষ করার জন্য আবেদন করা হয়। মামলার শুনানীকালে আসামী অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) তার মক্কেলের হাইকোর্টে দায়েরকৃত মিসকেসের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের এপিলেড ডিভশনে দায়েরকৃত লিভ টু পিটিশনটি (৬৮৫/১৬) শুনানী শেষে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে উল্লেখ করে সে পর্যন্ত টিআর-১৫১/১৫ নং মামলার সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রবল আপত্তির একপর্যায়ে মামলার কার্যক্রম স্থগিত না করে আগামি ধার্য্য দিনের মধ্যে লিভ টু আপিলের শুনানী সংক্রান্ত আদেশ আদালতে উপস্থাপন করার জন্য আসামীপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন মুখ্য বিচারিক হাকিম রাফিজুল ইসলাম।

(আরএনকে/এস/নভেম্বর ১৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test