E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা

২০১৬ নভেম্বর ১৮ ১৯:০৩:৫২
সাতক্ষীরায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : কাল্পনিক নামপত্তনের মাধ্যমে মন্দিরের জায়গা কিনে চার বছর পর দখল করতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেথা দিয়েছে। গত তিন সপ্তাহ আগে থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের খলিষাডাঙা গ্রামের ঘটনা এটি।

খলিষাডাঙা কালী মন্দির ও রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমল কুমার বৈরাগী জানান, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজা অর্চনার সুবিধার্থে তাদের গ্রামের কার্তিক মণ্ডল চাঁদপুর মৌজার ডিএস-১৮৩০ ও ১৮৩২, বর্তমান মাঠ জরিপের ১৭০২ ও ১৭০৩ দাগে ১৬ শতক জমির মধ্যে ১৫ শতক জমি মন্দিরের নামে দান করে যান। সে অনুযায়ি কার্তিক মণ্ডলের উপস্থিতিতে ১৯৭৭ সালে ও ১৯৮০ সালে পর্যায়ক্রমে কালীমন্দির ও রাধা হোবিন্দ মন্দির নির্মাণ করা হয়। সেখান থেকে অদ্যাবধি পুজা অর্চনা করার জন্য পরিতোষ মণ্ডল দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কার্তিক মণ্ডল মারা যাওয়ার পর তার দু’ ছেলে দীলিপ ও সুমল পৈতৃক ৩৯ শতক সম্পত্তির মালিক হন। সুমল মণ্ডল ১৮৮৮/৮৯ সালের ১৩৮১ নং কাল্পনিক নামপত্তনের মাধ্যমে তার বউদি তুলসী মণ্ডলের কাছে তার অংশের সাড়ে ১৯ শতক জমি লিখে দেন।

তিনি আরো জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে গত ৩০ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়ের দু’ শতাধিক বাড়িঘর ও ১৬টি মন্দিরে দুর্বৃত্তদের লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাদের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যার পর নেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মন্দির রক্ষায় প্রাচীর দেওয়ার প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ হিসেবে ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাপ জরিপের মাধ্যমে ১৫ শতক জমি বুঝে নেওয়ার জন্য তারা জমির পূর্বতন মালিকপক্ষের সদস্য তুলসী মণ্ডল ও তার ছেলেকে অবহিত করেন। পরদিন ৩১ অক্টোবর ভোরে জনৈক মুজিবুল হক লোকজন নিয়ে মন্দিরের পিছনের রান্না, পরিবশেন ও পরিক্রমার জায়গা জুড়ে ঘেরা ও বেড়া দেওয়া শুর করেন। আপত্তি করায় মুজিবুল হক ওই জমি ২০১২/১৩ সালের ১৩৮১ নং কাল্পনিক নামপত্তনমুলে মন্দিরের জায়গাসহ সাড়ে ১৯ শতক জমি কোবালা মুলে কিনেছেন বলে দাবি করেন। বিষয়টি তিনি(অমল) তাৎক্ষণিক হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানাকে অবহিত করেন। বাবু সানা বিষয়টির সমাধান করে দেওয়ার কথা বললেও যথাযথ ভুমিকা পালন না করায় এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে।

একপর্যায়ে স্থানীয় ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক সৈয়দ আলী বাড়িতে এসে তাকেসহ সভাপতি নির্মল ও সাংগঠনিক সম্পাদক সনৎকে মন্দিরে আগুণ ও ভাঙচুর করার পরিকল্পনা করছেন মর্মে খবর পেয়েছেন বলে এমন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে যান। এমনকি হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের ধমীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষায় পুলিশ সব সময় প্রস্তুত আছে বলে তাদেরকে অবহিত করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। জমি দাতা কার্তিক মণ্ডলের বৃদ্ধা স্ত্রী পদ্ম দাসী মণ্ডল মন্দিরের জমিতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও মুজিবুল হককে অনুনয় বিনয় করে ব্যর্থ হন।

একপর্যায়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ইতিমধ্যে কৌশলী মুজিবুল হক গত ১৭ নভেম্বর ওই জমি তুলসী মণ্ডলের নামে আবারো দানপত্র করে দেন। কাগজে কলমে দখল তুলসী মণ্ডলের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও ঘেরা ও বেড়া অটুট রেখে ওই জমি মুজিবুল হকের দখলে রয়েছে। ফলে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় সহিংসতা ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

এ ব্যাপারে মুজিবুল হক জানান, চার বছর আগে জমি কিনলেও প্রয়োহন না হওয়ায় ঘেরা দেননি। বিষয়টি নিয়ে ঝামেলায় না যেতে তিনি তার ধরম বোন তুলসী মণ্ডলকে নিঃশর্ত দানপত্র করে দিয়েছেন।

ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তিনি সমস্যা সমাধানে সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক সৈয়দ আলী জানান, মন্দির কর্তৃপক্ষ যে কোন অঘটন ঘটিয়ে প্রতিপক্ষদের ফাঁসাতে পারে এমন খবরের ভিত্তিতে তিনি খলিষাডাঙায় গিয়েছিলন। বিষয়টি উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে বলে জানতে পেরে তিনি মুজিবুল হক ও তুলসী মণ।ডলদেও সতর্ক করেছেন। একই সাথে মন্দিও ও হিন্দুদের নিরাপত্তা বিধানে সবধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(আরকে/এএস/নভেম্বর ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test