E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু মেহেদী বাঁচতে চায়

২০১৬ নভেম্বর ২১ ১৬:৪৫:০৩
নওগাঁয় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু মেহেদী বাঁচতে চায়

নওগাঁ প্রতিনিধি: অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের শিশু মেহেদী হাসান (৯) বাঁচতে চায়। সুস্থ হয়ে আর দশটা শিশুর মতো লেখাপড়ার জন্য স্কুলে যেতে চায়। লেখাপড়া শিখে বাবা-মাসহ সমাজের সেবা করতে চায়। কিন্তু অজ্ঞাত জটিল ব্যধি তাকে কতদিন বাঁচতে দেবে, সে ভাবনায় তার বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

সে জন্মের পর থেকে অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে পারে না হাঁটতে, পারেনা খেলাধুলা করতে। নিজের হাতে খেতেও পারে না সে। জন্মের পর থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে খুবই কষ্ট ভোগ করছে এই শিশুটি। এ রোগটি তার জীবনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। সেই সঙ্গে জীবনটও তার বিষিয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছরেও কোন চিকিৎসক মেহেদী হাসান কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেননি। শিশু মেহেদীর বাবা দরিদ্র ভ্যান চালক আবুল কালাম আজাদ ও মা জাহানারা বেগম গৃহিনী। তাদের ছোট ছেলে মেহেদীকে কত দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন তারা এ নিয়ে শংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

মেহেদীর পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোন ভাতা ও আর্থিক সহযোগিতা মেলেনি। তবে মিলেছে শুধুমাত্র তাদের আশ্বাস।

পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান বিগত ২০০৭ সালের ২৮ মে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আবুল কালামের ঘরে জন্ম নেয়। জন্মের পর থেকেই মেহেদীর শরীর ধবধবে সাদা। তখন চিকিৎসকের কাছে গেলে ‘রক্ত শূণ্যতা’ বলে চিকিৎসকরা জানান। জন্মের ১২ থেকে ১৫ দিন পর থেকেই মেহেদীর শরীরে হাত-পায়ে ফাটা ও চর্চারা ( এক ধরনের প্রলেপ) দেখা দেয়। কয়েক দিন পর মেহেদীর অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এরপর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফেটে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয় প্রচন্ড কান্নাকাটি। বাবা-মা বিভিন্ন চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তার রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেননি।

মা জাহানারা বেগম বলেন, দিন দিন মেহেদী বড় হতে থাকে। সঙ্গে বাড়তে থাকে তার শরীর ফেটে যাওয়া। সাধ্যের মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছেলের চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু রোগটি অজানাই থেকে যায়। একা খেতে পারে না। কিছু ধরতেও পারে না। কারো সঙ্গে খেলাধুলা করতে এমনকি ঠিক মতো শুয়ে থাকতেও পারে না। তার সেবা যত্ন নিজেকে করতে হয়। তবে শীতের সময় বেশি সমস্যা হয়। গায়ে জামা কাপড় পরে থাকলে খুবই অসুবিধা হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়। এতে জামা-কাপড়গুলো শরীরে লেগে যায়। এতে ব্যাপক কষ্ট হয়। অন্যদিকে শরীর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়। তবে গরমে একটু ভালো থাকে।

মেহেদী হাসান জানায়, সে অন্য ছেলে-মেয়ের মতো খেলতে, পড়তে, বাঁচতে চায়। মেহেদীর বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, তার বাড়ির জায়গা ছাড়া কিছুই নেই। ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পেয়ে থাকেন সেই টাকা দিয়ে সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে এ পর্যন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ১ বছর থেকে আর চিকিৎসা করানো এবং ভাল কোন ডাক্তার দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি রোগটা অজানা হওয়ায় বিভিন্ন ভাবে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভবও হচ্ছে না। ছেলের জন্য খুবই কষ্ট হয়। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে গিয়েছি তার ছেলের নামে প্রতিবন্ধি ভাতা বা চিকিৎসার জন্যে আর্থিক সাহায্য নেয়ার জন্য। সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে নগদ সামান্য কিছু টাকা পেলেও ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। শুধু আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেবেন বলে।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মোহাজার হোসেন বুলবুল জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে দ্রুত উর্ধতন কর্তপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মেহেদীর জন্য কি করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।



(বিএম/এস/নভেম্বর ২১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test