E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য

শ্রীপুরে সরকারি পুকুর দখল

২০১৬ নভেম্বর ২৬ ১৩:৩২:০২
শ্রীপুরে সরকারি পুকুর দখল

রাজীবুল হাসান,গাজীপুর :৯ বিঘার পুকুর। বহুকাল থেকেই এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে। পুকুরটি কারো পত্রিক সম্পত্তি নয় সরকারি জমি। খাস এই পুরনো  পুকুর ভরাট করে দখল মহোৎসবে মেতেছে একটি চক্র। রাতারাতি পুকুরটির চারদিকে স্থায়ী ভাবে রড সিমেন্টের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।

বাহির থেকে কেউ বুঝতেই পারবে না ভেতরে পুকুর না অন্য কিছু। গ্রীণ ভিউ রিসোর্ট নামের ওই প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটী গ্রামে পুকুরটি দখল করে নিচ্ছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই খাস পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে বলেও জানা যায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুকুরটি গতানুগতিকভাবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হত। ঢাকা কাফরুলের বাসিন্দা সাঈদ আলীর ছেলে কর্ণেল (অব:) মজিবুর রহমান পুকুরটি নিজের মালিকানা দাবী করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে একটি মামলা (নং রেভ ৬-১৮/৮৯) দায়ের করেন। বিভিন্নভাবে পর্যালোচনা করে আদালত শ্রীপুর মৌজাস্থিত ১৭৫৫/২২০৫ দাগের ৩.৫৭ একর এর জমি ও পুকুর সাধারণের ব্যবহার্য্য বলে উল্লেখ্য করেন। মজিবুর রহমানের দাবী করা তপছিলটি বানোয়াট। রায়ে বলা হয়েছে, এসএ ১২৮ নং খতিয়ানের ১৭৫৫/২২০৫ দাগে কিশোরী মোহন পোদ্দারের মাত্র ৪৮ শতক জমি রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। সরকারী কর্মচারীদের যোগসাজশে ০.৪৮ শতকের আগে তিন বসিয়ে ৩.৪৮ একর করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত দাগে ৩ একর ৯ শতক একটি পুকুর রয়েছে যা এ খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত।

গাজীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌসুঁলী আমজাদ হোসেন বাবুল জানান, পরবর্তীতে কর্ণেল মজিবুর রহমান গাজীপুরের দ্বিতীয় সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের (নং ২৫৯/১৫) করেন। মামলায় ওই জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ গাজীপুর জেলা জজ আদালতে একটি মিস আপীল (নং ১৫/১৬) দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি অতিরিক্ত জেলা জজ ১ম আদালতে বদলী করা হয়। ১ম আদালত দ্বিতীয় সহকারী জজ আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন। পরবতী সময়ে কর্ণেল মজিবুর রহমান হাইকোর্টে আপীল করেন।

হাইকোর্ট মামলাটি এক বছরের জন্য স্থগিত করেন। এলাকাবাসী জানান, কর্ণেল মজিবুর রহমানের কাছ থেকে গ্রীণ ভিউ কর্তৃপক্ষের লোকজন জমিটি আমমোক্তারনামা দলিল করে নেয়। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ দেয়ার পর গ্রীণ ভিউ কর্তৃপক্ষ পুকুর পাড়ের চারপাশে প্রথমে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্রাচীর সৃষ্টি করে। এর কিছুদিন পর রড এবং টিন দিয়ে আরেকটি প্রাচীর দেয়া হয়। পরে রাতে দিনে পুকুরের উত্তর পাড়ে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। অন্য পাড়েও প্রাচীর নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়া কিছুদিন যাবৎ পুকুরটির দক্ষিণ পাশ থেকে বালি ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ্যে অনেচ্ছুক এলাকার একজন লোক জানান, খাস পুকুর ব্যক্তি মালিকানায় নেয়ার জন্য কর্ণেল মজিবুর রহমান তার সহযোগীদের দ্বারা জাল দলিলও তৈরী করেন। এজন্য ভাংনাহাটি গ্রামের ছালেহ মোহাম্মদ ও লাল মিয়া দন্ডিত হন।

সাংবাদিক পরিচয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা বাধা দিয়ে বলেন এখানে সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। ভেতরে কর্তৃপক্ষের কেউ নেই বলেও তারা জানান। তাছাড়া মোবাইল ফোনে গ্রীন ভিউ রির্সোটের ম্যানেজারের সাথে টানা তিনদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা জানান, আদালতের স্থগিতাদেশ দেয়ার পর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও মাটি ভরাটের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এর মধ্যে থানায় চিঠিও পাঠানো হয়েছে।







(আরএইচ/এস/নভেম্বর২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test