E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিজিবি’র কড়া নজরদারীতেও ঠেকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

২০১৬ নভেম্বর ৩০ ১৫:৪৬:৪৫
বিজিবি’র কড়া নজরদারীতেও ঠেকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

আল ফয়সাল বিকাশ, বান্দরবান : মিয়ানমারের সহিংস পরিস্থিতির কারণে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র কড়া নজরদারী থাকলেও নানা ভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে জনস্রোতে মিশে যাচ্ছে। নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বোঝা মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকে ৭৮-৯০’র মতো হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর দফায় দফায় বর্বরোচিত হামলার ঘটনার পর সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জেরদার করা হয়েছে। বিজিবি’র কড়া নজরদারীতে রাখা হয়েছে মিয়ানমার-বান্দরবান সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাড়ি, রিজু, মনজয়পাড়া, চাকঢালা, আশারতলী, ফুলতলী সীমান্ত এলাকা। বিজিবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। স্থল সীমান্তের বেশ কিছু এলাকা শান্ত স ও স্বাভাবিক দেখা গেছে। ওপারের লোকজন নিশ্চিন্তে জমিতে কাজ করছেন। তবে সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া ফাঁক করে অনেককে মিয়ানমার যেতে ও আসতে দেখা গেছে।

১৯৭৮ এবং ১৯৯০ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী বর্বরোচিত হামলার কারণে স্থল ও নৌ পথে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহন করে। আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়ার কোন ফলপ্রসু সমাধান এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতা অব্যহত থাকায় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় অধিবাসীরা ৭৮-৯০’র সীমান্ত পরিস্থিতি আশংকা করছেন। শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গ্যারা মোবাইলের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রেখে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গ্যাদের বাংলাদেশের নিয়ে আসার জন্য নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করছে এবং তাদের নির্দেশ মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভাল শার্ট, লুঙ্গি ও প্যান্ট পড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে জনস্রোতে মিশে আত্মগোপন করছে।

স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেছেন, বর্ডারে বিজিবি’র কড়া নজরদারী রয়েছে সত্যি কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড প্রদর্শন বন্ধ রাখায় আগত রোহিঙ্গারা ইচ্ছে মতো বিভিন্ন জেলায় চলে যেতে পারছে। এতে তারা নিবন্ধনের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যা দেশের জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে। এদিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গ্যা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে মিয়ানমার সীমান্তের আশে-পাশে। তার সত্যতা পাওয়া যায় মিয়ানমারের খলিফা পাড়ার অধিবাসি আজিম উল্লাহ’র বক্তব্যে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নির্যাতিতরা তাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আজিম উল্লাহ ও তাদের আতীয় স্বজনদের বাড়ী-ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। ওপারে তার (আজিম উল্লাহ) ও আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে কত রোহিঙ্গ্যা আশ্রয় নিয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি মাথা নত করে এড়িয়ে যান। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জুলুম-অত্যচারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে মিয়ানমারের খলিফা পাড়া বাসিন্দা আজিম উল্লাহ বলেন, “বার্মার মুসলমানদের মারধর করছে, ঘরে আগুন দিচ্ছে, জুলাম করছে তাই তারা থাকতে পারছে না” তারা সব ছেড়ে আমাদের বাড়িসহ সীমান্ত এলাকার আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, ওরা এখন খুব কষ্টে আছে”। মিয়ানমারের তুমব্রু বাজার পাড়ার বাসিন্দা মোঃ হাসান এবং আলী আকবরও এইক কথা জানান। কক্সবাজার এলাকার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের নেতা নুর মোহাম্মদ ফকির জানান, মায়ানমারে মা-বোনদের হত্যা করছে, আগুনে পুড়িয়ে মারছে, ঘর-বাড়িতে আগুন দিচ্ছে, বোমা হামলা করছে, হেলিকপ্টার থেকে মেশিনগান দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে”। তিনি মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে আর্ন্তজাতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, রোহিঙ্গ্যা সমস্যাটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন ব্যাপার। মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। এই ছোট রাষ্ট্রে তাদের জায়গা দিয়ে বার বার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি, ৭৮ এবং ৯০’র ঘটনায় কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা থেকে গেছে, আমরা চাই না ওরা এদেশে এসে আমাদের বোঝা হোক। তিনি আরো বলেন, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনসচেতনতামুলক সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গ্যা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে লোকজন দলবদ্ধ ভাবে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করছেন বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।

অপরদিকে রোহিঙ্গ্যা অনুপ্রবেশের বিষয়ে কক্সবাজার বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম.এম আনিসুর রহমান পিএসসি জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, রোহিঙ্গা যারা ধরা পড়ছে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্ডার একেবারে সীল করা সম্ভব নয়, আমরা চেষ্টা করছি যাতে ওপার থেকে কেউ না আসতে পারে, যদিও ২/১ জন আসছে কিন্তু তাদের সংখ্যা কম, ধরা পরলে চেষ্টা করছি ফেরত দেয়ার।

ধর্মীয় বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থাপনায় বিজিবি প্রেরণ এবং গোয়েন্দা নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে। প্রয়োজনে নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। বিজিবি’র অপর এক সুত্র জানায়, চলতি নভেম্বরের ১ হতে ২৯ তারিখ সকাল ৭ ঘটিকার পর্যন্ত ৩৪ বিজিবি’র আওতায় বান্দরবানের রেজুখাল যৌথ চেকপোষ্ট এবং কক্সবাজারের ফালংখালী বিওপি’র শুণ্য রেখায় মোট ৪৫৩ জন কে সীমান্ত প্রবেশে প্রতিহত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-পশ্রয় দেয়া হলেও তারা ইতিমধ্যে রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধী নানা কর্মকান্ড চালিয়ে নিজেদের কালপিট হিসেবে প্রমান করেছে। নিবন্ধিত ও অনির্বন্ধিত শরনার্থী ক্যাম্প ছাড়াও সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিবেচনায় নতুন করে রোহিঙ্গ্যাদের আশ্রয় দেয়া কতটুকু যৌক্তক তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে এক শ্রেণীর যুবক মাঠে নেমে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা উঠাচ্ছে। উঠানো টাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সহানুভুতি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে উঠানো টাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের কোন সুযোগ নেই। ফলে একটি চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। এলাকার সচেতন নাগরিকরা জানান, এই চক্র থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

(এএফবি/এএস/নভেম্বর ৩০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test