E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় ৭ বছরেও নির্মিত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন

২০১৬ ডিসেম্বর ১০ ১৭:৪২:০৭
নওগাঁয় ৭ বছরেও নির্মিত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন

নওগাঁ প্রতিনিধি : সারা দেশের প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শহরের জনবহুল এলাকায় সরকারি জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ করা হলেও উত্তরের নওগাঁ জেলা সদরে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরেও কমপ্লেক্সের স্থান নির্ধারণ করতে পারেনি নওগাঁর জেলা প্রশাসন।

মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, দফায় দফায় সময় বেঁধে দেয়া হলেও টেন্ডারের কাজ শুরু না হওয়ায় ভবনের নির্মান কাজ নিয়ে তারা আশংকা প্রকাশ করছেন। এজন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই দায়ী করছেন তারা। তবে জেলা প্রশাসন স্থান নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে (৩য় দফায়) মুক্তিযোদ্ধাদের নামে দেয়া জায়গায় স্থান নির্ধারণ করে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায়। অনুমোদন হয়ে আসলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।

সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অবদান থাকলেও এই শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রে বসার কোন জায়গা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জায়গার কথা ভেবে এই জেলা শহরের কেন্দ্র বিন্দু ব্রীজের মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম জননেতা আব্দুল জলিল ১৯৯৮ সালে নিজ উদ্যোগে পৌরসভার অর্থায়ানে ছোট একটি স্বাধীনতা নামে ভাস্কর্য ও তার নীচে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংগ্রহশালা ও গবেষনা কেন্দ্র তৈরি করেন। পরবর্তীতে অর্থাভাবে সেটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সেখানে সংগ্রহ শালায় তেমন কিছইু নেই। আছে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু ছবি। শহরের পশ্চিম দিকে বাইপাস মোড়ে বিগত ২০০০ সালে তিনিই বিজয় নামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করেন। পরে ২০০৪ সালে শহরের মুক্তির মোড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলক তৈরি হলেও নওগাঁয় স্থান নির্ধারণের জটিলতায় এখনও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হয়নি। স্থান নির্ধারণের জটিলতায় আটকে আছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মান কাজ। প্রায় ৭ বছর পূর্বে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলকের এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের স্থান নির্ধারণ করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ে ফাইল চালাচালির অজ্ঞাত কারণে এখনও অনুমোদন না আসায় ভবনের কাজ তৈরি করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

এদিকে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশের মত প্রতিটি জেলায় শহরের জনবহুল সরকারি জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করতে বলা হয় জেলা প্রশাসনকে। নির্দেশনা পেয়ে শহরের জনবহুল জায়গা থেকেও সেখানে না দিয়ে গত বছর শহরের পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথের অত্যন্ত নিচু ও জলাবদ্ধতা সম্পন্ন স্থানে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। এতে ভবন নির্মাণের দ্বিমত পোষণ করেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। ওই নিচু জায়গায় কমপ্লেক্স ভবন করতে নারাজ তারা। তাছাড়া নির্মান ব্যয় দাঁড়াবে নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশী। ফলে স্থান নির্ধারণ না হওয়ায় আটকে আছে কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার, মোঃ হারুন অল রশীদ জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অনেক ভেষ্টেড ল্যান্ড আছে। সেখানে জায়গা দিলে আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করতে পারি। অথচ সেটা নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আমরা কমপ্লেক্স ভবন তৈরি করতে পারছি না।

তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই বলে জানান তিনি। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার, স্বাধীনতার সরকার। অবিলম্বে মুক্তির মোড় অথবা তাদের নিজস্ব জায়গায় এই কমপ্লেক্স তৈরির অনুমতি দেয়ার জন্য প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট অনুরোধ জানান তারা।

সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম সামদানী বলেন, জেলা প্রশাসন যেখানে জায়গা দিয়েছে, সেটা প্রায় মফঃস্বল এলাকা। সেখানে কোন এনজিও অফিস হবেনা, ব্যাংক হবে না। ভাল কোন দোকান পাট হবেনা। কোন মুক্তিযোদ্ধাই সেখানে যেতে পারবে না। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবেননা বলে জানান তিনি।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক, ড. মোঃ আমিনুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য যে স্থান নির্ধারন করা হয়েছিল, সেটা শহরের কিছু দূরে এবং এক প্রান্তে। পরে পুনরায় শহরের মাঝখানে ৩য় দফায় স্থান নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে । অনুমোদন আসলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে এখন কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি আওয়ামীলীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার, স্বাধীনতার পক্ষের সরকার। অবিলম্বে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এই কমপ্লেক্স তৈরির অনুমতি দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার।

(বিএম/এএস/ডিসেম্বর ১০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test