E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'লিটন হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে আরও সময় লাগবে'

২০১৭ জানুয়ারি ১০ ১৫:৩৪:২৫
'লিটন হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে আরও সময় লাগবে'

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের আইজিপি একেএম শহিদুল হক।

তিনি বলেন, ‘একটু সময় লাগলেও আমরা খুনিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর পুলিশ হলে রংপুর বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগদান করতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করছি। এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডর ঘটনায় যেসব বিষয় আমাদের সামনে আসছে সেগুলো আমলে নিয়ে কাজ করছি।’
এমপি হত্যার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, ‘এটাকে আইনশৃঙ্খলার অবনিত বলা যায় না। বরং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে ভালো আছে। যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।

পরে আইজিপি পুলিশ হলে রংপুর বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১০ দিনেও রহস্য কাটেনি এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের

দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের ১০ দিন পার হয়ে গেলেও হত্যারহস্যের কোনও কূলকিনারা করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ হত্যাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হলেও আসল খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যাকাণ্ডের সুরাহা না হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

লিটন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির নেতকার্মীদের আটক করে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। লিটন হত্যার ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।

এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো. আহসান হাবীব মাসুদকে পুলিশ শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) তার নিজ বাসা থেকে আটক করে। পরে তাকে লিটন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে মাসুদ পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যার মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘লিটন হত্যার রহস্য উদঘাটনে দলীয় অনেক নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকে আটক করলেও কোনও সমস্যা নেই।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যার ১০ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু হত্যার রহস্য কিংবা হত্যাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। এমনকি হত্যার কাজে ব্যবহৃত দুটি পালসার মোটরসাইকেলও আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক। এখানে আওয়ামী লীগের সেরকম কোনও বিভেদ ছিল না। অন্য কোনও দলের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কোনও অভিযোগ নেই। আর এমপি লিটন যেহেতু জামায়াত-শিবিরকে এলাকায় রুখে দিয়েছিলেন সে কারণে লিটনকে হত্যার বিষয়ে আমাদের সন্দেহ জামায়াত-শিবির চক্রের দিকেই।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইউনুছ আলী বলেন, ‘লিটন হত্যার ঘটনার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের নিরাপত্তা ও আতঙ্কে রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলীয় কোন্দলে লিটনকে খুন করা হয়নি। মূলত তাকে খুন করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে।’

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন বাবু বলেন, ‘লিটন হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার। কোনও কারণে হত্যাকারী পার পেয়ে গেলে গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগশূন্য হবে। সেই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের দাপট ও তাদের উত্থানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে।’

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যার ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্তকাজ চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আটক, গ্রেফতার ও রিমান্ড এনে বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। আশা করা হচ্ছে, খুব অল্প সময়ে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মাসুদসহ অন্তত ৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এরমধ্যে আটজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’


















(এসআইআর/এস/জানুয়ারি ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test