E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনের আত্মসমর্পন করা বনদস্যু বাহিনীর ৪৮ সদস্য ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে

২০১৭ জানুয়ারি ১৪ ১৮:৫৫:১৫
সুন্দরবনের আত্মসমর্পন করা বনদস্যু বাহিনীর ৪৮ সদস্য ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনে একের পর কুখ্যাত বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পনকৃত ৪৮ সদস্য আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। এসব দেখে সুন্দরবনে থাকা অন্য সব বনদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে বাড়ছে আত্মসমর্পনের প্রবনতা। ইতিমধ্যেই র‌্যাবের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ১৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করেছে সুন্দরবনের ৮ বনদস্যু বাহিনীর ৭২ জন সদস্য। এদের প্রত্যেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারি ভাবে নগদ ২০ হাজার টাকা ও আইনি সহয়তা প্রদান করা হয়েছে। সরকারি ভাবে আইনি সহয়তা পেয়ে ইতোমধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে বাহিনী প্রধানসহ ৪৮ জন বনদস্যু।

র‌্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবির জানান, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার-হাজার জেলে-বনজীবীদের কাছে এক সময়ে মূর্তিমান আতংক ছিল এসব বনদস্যু বাহিনীগুলো। এসব বনদস্যু বাহিনীগুলো মুক্তিপনের দাবিতে জেলে- বনজীবীদের মুক্তিপনের দাবীতে অপহরন করাই ছিলো প্রধান কাছ। এক সময়ে সুন্দরবনের জেলে অপহরন ও বনদস্যুদের নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে-চড়ে বসে র‌্যাবসহ আইনশৃখলা বাহিনীর সদস্যরা।

সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় বনদস্যুদের দমনের লক্ষ্যে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। শুরু হয় বনদস্যুদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান। এসব অভিযানে শুধু ২০১৬ সালেই নিহত হয় বাহিনী প্রধানসহ ৬ বনদস্যু। আর সুন্দরবনে একের পর এক বনদস্যু নিহত হবার পর সুন্দরবনে বনদস্যুদের তৎপরতা কমে আসতে শুরু করে। এক সময়ে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড,বিজিবি ও বন বিভাগের সম্মিলিত অভিযানে কোনঠাসা বনদস্যু বাহিনীগুলো দস্যুরা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পনের পথ বেছে নিতে র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এক সময়ে সুন্দরবন দাঁপিয়ে বেড়ানো ৮টি বনদস্যু বাহিনীর ৭২ জন সদস্য ১৬৪টি আগ্নয়াস্ত্র ৮ হাজার ৬শ ৩৬ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে র‌্যাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসর্মপন করে।

সুন্দরবনসহ উপকূলে বনদস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা রাখাইন মহিলা মার্কেট মাঠে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ১শ ৫ রাউন্ড গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসর্মপন করে ‘নোয়া বাহিনী’র প্রধানসহ ১২ বনদস্যু। এর আগে গত ৩১ মে সুন্দরবনের কুখ্যাত বনদস্যু ‘মাষ্টার বাহিনীর’ ১০ সদস্য ৫২টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ৪ হাজার ৫০০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে প্রথম বারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসর্মপন করে। তার ধারাবাহিকতায় গত ১৪ জুলাই সুন্দরবনের দুই বনদস্যু ‘মজনু ও ইলিয়াস বাহিনী’র ১১ জন জলদস্যু ২৫ টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ২০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর আরো দুই বনদস্যু ‘আলম ও শান্ত বাহিনী’র ১৪ জন জলদস্যু ২০টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৮ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করে। ১৯ অক্টোবর ‘সাগর বাহিনী’ ১৩ সদস্যকে ২০টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৯৬ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ জমা দেয়। গত ২৮ নভেম্বর বনদস্যু ‘খোকাবাবু বাহিনী’র ১২ সদস্য ২২টি দেশী বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৩ রাউন্ড গোলাবারুল’সহ আত্মসমর্পন করে।

র‌্যাব-৮ এর উপ অধিনায় আরও জানান, গত ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারী বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের চরপুটিয়া খালে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় কুখ্যাত বনদস্যু মজনু বাহিনীর উপ-প্রধান সাতক্ষীরা জেলার অধিবাসী মশিউর রহমান। এসময়ে র‌্যাব সদস্যরা সুন্দরবনের মধ্য থেকে বনদস্যুদের ব্যবহৃত ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। ৩ মার্চ সুন্দরববনে কচিখালী কটকা ও পাথরঘাটা সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৭ জেলেকে বনদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এর পর ১০ মার্চ সুন্দরবনের একই রেঞ্জের কচিখালী এলাকার চান্দেশ্বর খালে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকার বনদস্যু মো. মনিরসহ চট্টগ্রাম এলাকার তিন বনদস্যু মো. এনাম, মো. গিয়াস উদ্দিন ও মো. হাসান নিহত হয়।

এ সময়ের দস্যুদের ব্যবহৃত ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। ৬ মে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শ্যালা নদীর আন্দারমানিক মৃগমারী খালে বন্দুকযুদ্ধে আলম বনদস্যু বাহিনীর প্রধান বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মো. আলম খান নিহত হয়। এসময়ে র‌্যাব সদস্যরা ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। সুন্দরবনে র‌্যাব প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে এ পর্যন্ত সফল অভিযানে ৬৭৭টি অস্ত্র, ১৯১৬০ রাউন্ড গুলি উদ্ধারসহ ২৩৮ জন বনদস্যুকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনে এই বাহিনীর সদস্যরা। যার ফলে সুন্দরবন কেন্দ্রিক বনদস্যু বাহিনীর অপতৎপরতা বহুলাংশে কমে এসেছে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test