E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৫০ বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর-লুট

মাগুরায় আ:লীগের দু’পক্ষের সংর্ঘষে ৫০ জন আহত

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৬:৩৪:৩১
মাগুরায় আ:লীগের দু’পক্ষের সংর্ঘষে ৫০ জন আহত

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা থেকে :  মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়ার দক্ষিণ পাড়া গ্রামে আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাড়ে চার ঘন্টা স্থায়ী সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৫০  জন আহত হয়েছেন।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ৪০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বসত ঘরে ব্যাপক হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এতে নারী শিশু ও বৃদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২০ জনকে মহম্মদপুর, মাগুরা ও ফরিদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ১০৮ রাউ- শর্টগানের গুলি ও ১৬ রাউ- টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের গুলিতে নারীসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দুই নেতার বিরোধে নিরীহ সাধারণ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকার চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ একটি পক্ষকে মদদ দেয়ায় তাদের উপস্থিতিতে বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ করেছন। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মাগুরার পুলিশ সুপার মুনিবুর রহমার ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বালিদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা মফিজুর রহমান মিনা ও ইউনুস আলী সর্দারের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর আগে দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ সংষর্ষ সংগঠিত হয়েছে।

ঘটনার দিন সকালে ইউনুস শিকদারের সমর্থক ইউসুফ মোল্যার ঘরজামাই গোলাপ মিয়ার স্ত্রী রেবেকাকে মারধোর ও বাড়িঘর ভাংচুর করে মফিজুর রহমান মিনার লোকজন।

এই ঘটনার সূত্র ধরে ইউনুস সমথর্কেরা দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মফিজুর রহমান মিনার লোকজনের উপর হামলা চালায়। সাড়ে চার ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন আজগার (৩০), ফিরোজ মৃধা (৫০), ইতি (২৫), আতিয়ার মোল্যা (৩৫), ওমর শিকদার (৩০), বকুল মোল্যা (৬০),মোস্তফা (৫০), ইদ্রিস মিনা (৩৫), কাজল মিনা (১৮), হারিম মিনা (৫০), লিটন মিনা (৩০), শরিফুল মিনা (৩৪), শরিফুল মিনা (৩৫), নাজমুল মিনা (২০) ও সামাদমোল্যা (৪০)। এদের কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের কামাল মিনা, জামাল মিনা, হারুন মিনা, রবিউল মিনা, আলমগীর মিনা, খায়রুল মিনা, বাবু মিনা, শাদিক মিনা, মফিজ মিনা, তোছাজ্জেল মিনা, রিজাউল মিনা, ওসমান মিনা, ই¯্রাফিল মিনা, নবির মিনা, নান্নুু মিনা, সাইদ মিনা, চান মোল্যা ও ইউনুস সর্দারসহ অন্তত ৫০টি বসত ঘরে ব্যাপক হামলা ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন ও লুট করা হয় বলে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেন।

এসব বাড়িঘর থেকে ধান পাট নগদ টাকা,স্বর্ণালঙ্কার, সেলাই মেশিন, টিউবয়েল ইলেট্রনিক্স সামগ্রি ও মূল্যবান গৃহস্থালি দ্রব্যাদি লুট করে নিয়ে যায় বলে তারা জানান। হামলাকারিরা বাড়ির নারী,শিশু ও বৃদ্ধদেরও মারধোর করেন। হামলার সময় এসব বাড়ির প্রায় সব বিদ্যুতের মিটার ভেঙে ফেলে হয়।

এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুনরায় সংঘর্ষের জন্য উভয়পক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেেেছ। গ্রামের পুরুষ লোকজন কেউ তেমন বাড়িতে নেই। মূল্যবান মালপত্র আতী¥য় স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
আলমগীর মিনা মিনা (৫০) বলেন, ‘গ্রামে মিনা গোষ্ঠীর বাড়ি ঘরে পরিকিল্পিত হামলা চালানো হছে। বাড়ি ঘর মাটির সাথে মিশে গেছে। ঘরেরভেতরকার সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে । গায়ের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। হামলায় অন্যগ্রামের লোকজনদেরও ভাড়া করে আনা হয় বলে তিনি জানান।’
শারিরীক প্রবিন্ধী নান্নু মিনা (৩৫) কাদতে কাদতে বলেন, ‘আমার কারো সাথে বিরোধ নেই। আমি শারীরিক প্রতিবন্ধ¦ী। আমার বাড়ি ঘর েেভঙে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। ’
নিছার উদ্দিন মিনা (৭০) পুলিশের ছোড়া গুলির খোসা দেখিয়ে বলেন, ‘আমাদেও বাড়ি-ঘর হামলা ভাংচুর ও লুট হলো অথচ পুলিশ আমাদের দিকেই গুলি করল। হামলাকারিদের দিকে পুলিশ একটি গুলিও করল না।

স্থানীয় আ.লীগ নেতা ইউনুছ ও মফিজ এ ঘটনায় পরস্পরকে দায়ি করেছেন।
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম, কোন গ্রুপের পক্ষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
















(ডিসি/এস/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test