E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাইসেন্স ছাড়াই মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট!

২০১৭ এপ্রিল ০৯ ১১:১৯:১২
লাইসেন্স ছাড়াই মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইল জেলা শহর ও ১২টি উপজেলায় লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে এজেন্টের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানাগেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের বিধিমালা ১৯৯৪-এর ৬ ধারা অনুযায়ী ব্যবসা শুরুর আগে নির্দিষ্ট খাতের ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এ সেক্টরে টাঙ্গাইল জেলার কোথাও সে বিধি মানা হচ্ছে না। এতে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও জঙ্গি তৎপরতা সহজতর হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, বাংলাদেশ ব্যাংক পল্লী এলাকাগুলোতে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বিধিমালা জারি করে। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি এক সার্কুলার জারি করে গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। বিগত ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে ১৯টি ব্যাংক মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ৬-৮ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এজেন্সি পেতে হলে এক লাখ টাকা জামানত দিতে হয় ব্যাংককে। এছাড়া বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি নিয়ন্ত্রিত ক্ষদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, সমবায় আইন-২০০১ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত সমবায় প্রতিষ্ঠান, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর এজেন্ট, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র গ্রাম ও শহরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এজেন্ট হওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকিং করতে পারবে।

এছাড়া বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি, ফার্মেসির মালিক, চেইন শপ, পেট্রোল পাম্প বা গ্যাস স্টেশনের মালিক, তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর এই আর্থিক সেবা পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের বিধিমালা ১৯৯৪-এর ৬ ধারা অনুযায়ী যে কোনো ব্যবসা শুরুর আগে নির্দিষ্ট খাতের ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলার অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীর(এজেন্ট) মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট খাতের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। বড় একটি অংশেরই মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট খাতের ট্রেড লাইসেন্স নেই।

মোবাইল ফোন রিচার্জ অ্যান্ড ব্যাংকিং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মোবাইল ফোন রিচার্জ অ্যান্ড ব্যাংকিং ব্যবসায় সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নীতিমালা রয়েছে তা অসম্পূর্ণ। এদিকে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্টদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিধিমালা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা সাংঘর্ষিক। ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা ১৯৯৪-এর ৬ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট খাতের ট্রেড লাইসেন্স ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাসোসিয়েশন বা চেম্বারের সদস্য হতে হবে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় তা উল্লেখ নেই। ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, এর সুযোগ নিয়েই বিকাশ, রকেট (ডাচ্-বাংলা), এম ক্যাশ, সিওর ক্যাশ ইত্যাদি কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছামতো পান-সিগারেটের দোকানদারকেও এজেন্ট নিয়োগ করছে। ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্টরা অবৈধভাবে ব্যবসা করছে এবং দেশের আনাচে-কানাচে অবৈধ সিম বিক্রি করছে। এতে অবৈধ লেনদেনের ফলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও জঙ্গি তৎপরতা সহজতর হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশের শর্তে বিকাশের এক কর্মকর্তা জানান, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যখন যে নির্দেশনা আসবে তারা সেভাবেই এজেন্ট নিয়োগ করে ব্যবসা পরিচালনা করবেন। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশে বিকশিত হচ্ছে। এখনও কিছু কিছু জটিলতা আছে, তবে তা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

নিয়ম অনুযায়ী শুধু মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ মাধ্যমে লেনদেন করার কথা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ এজেন্ট এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠায়। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধ লেনদেন বাড়ছে।

(আরকেপি/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test