E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধান পচে পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি, মারা যাচ্ছে মাছ

২০১৭ এপ্রিল ১৭ ২০:৫৮:৫৫
ধান পচে পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি, মারা যাচ্ছে মাছ

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে বড়লেখা অংশে বিভিন্ন জাতের মাছ মারা যাচ্ছে। ধান ও মাছ পচার কারণে হাওরের পানি দূষিত হওয়ায় বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এদিকে মাছ মরা রোধে মৎস্য বিভাগ হাওরের বিভিন্ন স্থানে চুন ও ওষুধ ছিটিয়ে দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে জাল দিয়ে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে।

মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ‘অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এইসব আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। এছাড়া ধানগাছ এবং ঘাসে নিধনের বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে হঠাৎ পানির (পিএইচ) কমে যাওয়ায় (বর্তমান পিএইচ-৫.৮) অ্যামোনিয়ার পরিমান বৃদ্ধি এবং দ্রবিভূত অক্সিজেন হ্রাস (৫ পিপিএম) হওয়ায় ধান ও মাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।’

মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন স্থানে মাছ মরে পানির ওপর ভেসে ওঠছে। গত শনিবার রাতে ঝড়ের পর পানিতে ভেসে ওঠা মাছের সংখ্যা বেড়ে গেছে। হাওরের চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় লোকজন আধমরা ও তাজা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে মাছের মরা রোধ করতে মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে মাছ না ধরার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এতে আগামী চার/পাঁচদিন সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মরা মাছের মধ্যে আইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা, কাল বাউস, সরপুঁটি, পাবদা, ঘুলশা, টেংরা, পুঁটি, বাইমসহ নানা জাতের মাছ রয়েছে।
বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস সোমবার বলেন, ‘তুফানের পরই মাছ মরতে দেখা গেছে। পানির নিচে বোরো ধান পচে যাওয়ায় প্রচুর মাছ মরছে। অনেক বড় মাছ মানুষ ধরেছে। গতকাল রবিবার বেশি মরছে। পানিতে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া তুফানের পর পরই বাতানে বেশি দুর্গন্ধ পাওয়া গেছে।’

এদিকে বড়লেখা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘গত বছরের চৈত্র মাসে অকাল বন্যায় বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি অংশে প্রায় ১৮০০ হেক্টর বোর ধান তলিয়ে যায়। উপজেলার হাকালুকি অংশে প্রায় ২২৭৫ হেক্টর বোর ধান আবাদ করা হয়। আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হয়েছিল ২২৭৫ হেক্টর। কিন্তু হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাকালুকি হাওর অংশের ১৮০০ হেক্টর ধান পানির ২/৩ ফুট নিচে তলিয়ে যায়। এতে হাকালুকি হাওর অংশের ৩টি ইউনিয়ন বর্ণি, সুজানগর ও তালিমপুর ইউনিয়নের ৪১২০ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকা এইসব ধান গাছ পচে বাতাসে দুর্গন্ধ’র সৃষ্টি হয়েছে।

বড়লেখা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস কর্মকর্তা আবু ইউসুফ হাকালুকি হাওরের বড়লেখা অংশে মাছ মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সোমবার সরেজমিনে হাওর ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মাছ মারা যাবার বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে। হাওরের পানিতে প্রচন্ড গন্ধ। পানির রঙ বদলে গেছে। যেখানে পানি গভীর সেখানে বাদামি রঙ এবং যেখানে কম পানি সেখানকার রং লাল ও কালচে হয়ে গেছে। মানুষ প্রচুর মাছ ধরেছে। কিন্তু সব মাছতো আবার ধরতেও পারেনি। তাই পচা মাছের গন্ধ পানিতে। ধারণা করা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৫-২০ টন মাছ মারা গেছে।’

(এলএস/এএস/এপ্রিল ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test