E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ লক্ষ কাঁচা ইট নষ্ট, ক্ষতির মুখে ভাটামালিকরা

২০১৭ এপ্রিল ২৫ ১৪:২৭:৩৭
বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ লক্ষ কাঁচা ইট নষ্ট, ক্ষতির মুখে ভাটামালিকরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : অসময়ে বৃষ্টির কারনে ঠাকুরগাঁওয়ে তৈরি করা লক্ষ লক্ষ টাকার কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ইটভাটা মালিকরা চলতিবছরে  চরম লোকসানে পরেছে।অন্যদিকে ইটের   অভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সরকারি ভবন নির্মাণের কাজ করা সম্ভব না বলে জানান ইটভাটা মালিক সমিতি।

দৈনিক চাহিদা পুরনে ঠাকুরগাঁও জেলার মৌসুমি ইটভাটা মালিকরা বরাবরের মতো এবারো শ্রমিকদের দিন হাজিরা দিয়ে হাজার হাজার কাচাঁইট তৈরি করে ফেলে রাখে। আর সেই কাঁচা ইটগুলো তাদের সময়মত পুড়িয়ে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করে থাকে।

কিন্তু এবছর অসময়ে বৃস্টি ভাটা মালিকদের লোকসানের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।প্রস্তুতি নেয়ার আগেই জেলার পীরগঞ্জ,হরিপুর, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও সদরসহ ৫টিউপজেলার ইটভাটায় তৈরি করা হাজার হাজার ইট বৃস্টিতে ভিজে নস্ট হয়েগেছে। অসময়ে ঘন ঘন বৃস্টিপাত হওয়ায় লোকসানের বোঝা ভাড়ি হয়ে যাওয়ায় অনেক ইট ভাটার মালিক ভাটা বন্ধ করে দিয়েছে।

এ কারণে ইতোমধ্যে জেলার৫টি উপজেলায় বেকার হয়ে পরেছে জেলার শত শত শ্রমিক। বৃষ্টি না হলেস্থানীয় এসব শ্রমিকরা আরো দুই মাস ইটভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে অনেক শ্রমিক কাজের সন্ধানে ঘুরে ফিরছে।

আবার কিছু ইটভাটা মালিক তাদের লোকসান কাঁটিয়ে উঠতে পুনরায় ভাটা চালু করলেও বৃস্টি যেনো তাদের পিছু ছাড়ছেই না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পরছে তারা। আর এ অবস্থায় ভাটা মালিকরা চলতি মৌসুমে কাঙ্খিতইট পুড়াতে না পারায় জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানরা প্রায় ৫০ কোটিটাকার কাজ (সরকারি ভবন) নির্মাণ করতে পারবেন না বলে আশংঙ্কা করা হচ্ছে ।

অন্যদিকে গেল বছরের তুলনায় এবছর শ্রমিক মুজুরি, মাটি, গাড়িভাড়া, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ সব ধরনের জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কয়েকগুন। তবে আগামীতে আকাশ ভাল থাকলে লোকসান কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ইট ভাটার সাথে জড়িতরা ।

সদর উপজেলার আকঁচা, সালন্দর, গড়েয়া ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ইটভাটা শ্রমিক রফিকুল ইসলাম, রশিদুল, জামাল উদ্দিনসহ অনেকে জানান, বৃস্টির কারণে ভাটা মালিকরা ইট তৈরি করতে না পারায় আমরা সবচেয়ে কষ্টেআছি। আমরা অন্তত আরো দুই মাস ইট ভাটায় কাজ করে খেতে পারতাম। এখন কাজের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে । কোন দিন কাজ পাই আবার কোন দিন ফিরে আসতে হয়। মালিকদের কাছে অনেক শ্রমিক আগাম টাকা নিয়ে মাথায় বোঝা করে রেখেছে। এখন করুন অবস্থায় দিন পার করছি আমরা।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কেয়া ব্রিকসের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম ও সদরউপজেলার খোচাবাড়ি এলাকার এইচ বি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক হেচাবউদ্দিন হেচা জানান, বৃষ্টির কারণে আমাদের তৈরি করা কয়েক লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। ৪ থেকে ৫ দফায় বৃস্টি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে ইটভাটা মালিকরা। আমরা আয় করবো তার পরে ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধ করবো এখনতো আমরা চরম লোকসানে পরে আছি।আমরা আশা করছি সরকার আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

ঠাকুরগাঁও শহরের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার সাদেক কুরাইশী, এসএমএ মঈন জানান,আমরা ইটের অভাবে সময় মত কাজ করতে পারছি না। এছাড়া বেশিদামে ইট কিনতে হচ্ছে। আমরা বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকদের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি অসময়ে বৃস্টির কারণে তারা নিয়মিত ভাবে ভাটা চালু রাখতে পারছে না।

অনেকে ইতোমধ্যে ভাটা বন্ধ করে দিয়েছে।এতে সময় মত ইট না পেয়ে আমরাও বিপাকে আছি। আগামীতে যদি বৃস্টি অব্যাহত থাকে তাহলে ইটের অভাব বেড়ে যাবে। সেই সাথে চলতি বছর প্রায় অর্ধকোটি টাকার ভবন নির্মাণ কাজ ব্যাহত হওয়ায় আংশকা করা হচ্ছে বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরসাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মুরাদহোসেন জানান, জেলায় ছোট বড় ৬৭টি ইট ভাটা রয়েছে। কয়েক দফা বৃষ্টির কারনে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ইট ভাটা মালিকের গড়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছে। বেকার হয়ে পরেছে সজেলার শত শত শ্রমিক।

ইটভাটা মালিক সমিতর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আমাদের ভ্যাট, ট্যাক্স কতটা সিথিল করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিবেন। নইলে আমরা তো লোকসানে আছি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপ-পরিচালক একে এম মাউদুদুল ইসলাম জানান, গত রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।


(এফআইআর/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test