E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৬ বছরেও হয়নি ফরিদপুর জেলা বিএনপি কমিটি

২০১৭ এপ্রিল ২৮ ১৯:০০:৩১
৬ বছরেও হয়নি ফরিদপুর জেলা বিএনপি কমিটি

আহম্মদ ফিরোজ, ফিরোদপুর : গণতান্ত্রিক উপায়ে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের সব প্রক্রিয়াই ভন্ডুল হওয়ার পর ফরিদপুরে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা আশায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা হবে।

অন্তত, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা কমিটির আংশিক হলেও একটি ঘোষনা আসছে এমনই ধারণা তাদের। তবে তাদের এ আশা পুরণ হয়নি দীর্ঘদিনেও। ডিসেম্বরের পর এপ্রিলও শেষ হতে চললো কিন্তু কোন সুখবর আসেনি জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের। যদিও দুই বছর মেয়াদী ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি মেয়াদ হারিয়েছে ৬ বছর আগেই। শেষবার ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর শহরের অম্বিকা হলে জেলা বিএনপির শেষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তবে আভ্যন্তরীণ বিবাদে সে সম্মেলন পন্ড হয়ে গেলে ঢাকা থেকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক করে দু’বছর মেয়াদি একটি কমিটি ঘোষনা করা হয় সেবার।

বাস্তবতা হচ্ছে, বারবার সময় বেঁধে দেয়ার পরেও ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা যায়নি। এতো সময় পর এখন আর সম্মেলন করে কমিটি গঠনের অবস্থাও নেই। শেষমেষ ঢাকা থেকে জেলা কমিটি গঠন হচ্ছে এমনই জানানো হয়েছিল দলের তরফ থেকে। এখনও বলা হচ্ছে শিঘ্রই এ কমিটি ঘোষণা হবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, ফরিদপুর জেলা বিএনপির প্রত্যাশিত কমিটির সভাপতি পদে সাব্যস্ত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদ চুড়ান্ত না হওয়ায় নতুন কমিটি ঘোষনা আটকে আছে। আগামী ৬ মে প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে ফরিদপুরে। শহরের অম্বিকা হলে আয়োজিত এ সভায় সাংগঠনিক টিমে নিযুক্ত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। এ সভা থেকে জেলা কমিটির ব্যাপারে শান্তিপূর্ণভাবে নতুন কোন আশার বাণী আসতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আবার এ সভায় অনেকে গোন্ডগোলের আশংকাও করছেন কমিটি নিয়ে। জানা গেছে, ৬ মে’র প্রতিনিধি সভাকে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে ফরিদপুর অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে মিলিত হন।

এদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দীর্ঘদিন ঝুলতে থাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পালন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জেলার পদধারী নেতারা এখন আর এক হয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পালন করেন না। দলের মধ্যে ক্ষুদ্র দল ও উপদল সৃষ্টি হয়েছে। কতিপয় নেতা বিচ্ছিন্নভাবে নিজ নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক কর্মকান্ড পালন করছেন। সবার অংশগ্রহণ না থাকায় এসব কর্মকান্ড ব্যক্তিগত শোডাউনে পরিণত হচ্ছে। সরকারী দলের বিরুদ্ধে একজোট না হয়ে এসব কর্মকান্ডে নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই বেশি ক্ষোভ ঝাড়া হচ্ছে। দলের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে।

অন্যদিকে, কর্মীদের খবর না রেখে পদ প্রত্যাশীরা পদ পেতে শীর্ষ নেতাদের পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কাঙ্খিত বড় পদের জন্য নেতাকে খুশি করার প্রাণান্ত চেষ্টা তাদের। এব্যাপারে ফরিদপুরের এক বর্ষিয়াণ বিএনপি নেতার বলেন, বড় নেতার কাছে যাওয়ার জন্য হানাহানি এমনকি খুনজখমেরও রেকর্ড রয়েছে ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতিতে। তারপরেও নেতারা দলের আসল নেতাদের চিনলেন না। কমিটিতে জৈষ্ঠদের উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হয় না। জনপদ থেকে গড়ে ওঠা মেধাবী, সাহসী ও জনপ্রিয় নেতৃত্ব তুলে এনে দল গঠন করা হয় না।

সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ফরিদপুর জেলা বিএনপি কমিটি গঠন হচ্ছে না ফরিদপুরের শীর্ষ বিএনপি নেতাদের আভ্যন্তরীণ মতভেদের কারণে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ কে বা কারা পাবেন এ প্রশ্নে তারা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ সম্প্রতি সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়াকে সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম লিটনকে রাশিদুল ইসলাম লিটনকে সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক একে কিবরিয়া স্বপনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে একটি কমিটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছেন। এর বিপরীতে যুবদলের কেন্দ্রিয় নেতা মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোদাররেস আলী ঈসাও সভাপতি পদে জোরালো প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী জেলা যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেন খান পলাশ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল। তারা এখন বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর সাথে যোগাযোগ রাখছেন।

এর বাইরেও ফরিদপুরে বিএনপির একাধিক সক্রিয় নেতা রয়েছেন, যাদের ছাত্র রাজনীতির বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে রুকসুর ভিপি ও জিএস এবং জেলা ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দ্বায়িত্ব পালন করে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত ইমেজে দলের মধ্যে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। বিরুপ আলোচনায় না থাকায় বিতর্কেরও উর্দ্ধে রয়েছেন তারা। এছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক একঝাঁক তরুণ উদিয়মান নেতৃত্ব রয়েছেন যাদের নিয়ে দলে তেমন বিতর্ক নেই। এইসব নেতৃবৃন্দের সমন্বয় ব্যতিত দলকে গতিশীল করা সম্ভব নয় বলে অনেকের অভিমত।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ন সম্পাদক, বিভিন্ন সম্পাদকীয় ও নির্বাহী সদস্য পদ পেতেও জেলার বিভিন্ন স্তরের সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। দলকে চাঙ্গা করতে আগ্রহী এসব রাজনৈতিক কর্মীদের মূল্যায়ন করা জরুরী বলে সংশ্লিষ্টদের নেতৃবৃন্দের অভিমত।

জানা গেছে, বর্তমানে জেলা কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতারা ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের সস্পৃক্ততা ও মামলা-হামলার ব্যাপারে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। আবার কেউ শান্তিপর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি মামলার শিকার নেতাকর্র্মীদের মামলা পরিচালনায় আর্থিক ও অন্যান্যভাবে সাহায্য সহযোগীতা করেছেন সেসব জানাচ্ছেন। এব্যাপারে একজন নেতা জানান, আন্দোলন সংগ্রামে অংশ না নিয়ে বাড়ি বসেও অনেকে মামলার আসামী হয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের সাথে আঁতাত করে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছেন। মামলার কথা বলে আর্থিক সুবিধার পেছনে ছুটেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ফরিদপুরে সরকারী দলের নিউমার্কেট কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে যান কেউ। অনেক নেতা বিরোধী দলের রাজনীতি করে রহস্যজনকভাবে এই আমলেও গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে বলে সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিমত।

বিএনপির সাধারণ কর্মী সমর্থকেরা জানান, বয়স এবং দক্ষতা-যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করতে পারলে দলকে খেসারত দিতে হবে। দলের পদ ব্যবহার করে যারা মনোনয়ন বানিজ্য চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। অন্যথায় আগামী নির্বাচনে বিজয় আনা অসম্ভব হবে। তাদের অভিযোগ, ফরিদপুরের কতিপয় নেতা বিএনপির পরীক্ষিত ও নিবেদিতদের মূল্যায়ন না করে দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন পদে জৈষ্ঠতা লঙ্ঘণ করে আজ্ঞাবহ পছন্দের লোকদের পদ দেয়া হয়েছে। এদের অনেকে দিনের বেলায় বিএনপি আর রাতের বেলায় আওয়ামী লীগ করেন। জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছের লোকেরাও রয়েছে। দলের পরিবর্তে এরা ব্যক্তি বন্দনায় লিপ্ত। কতিপয় ব্যক্তি শীর্ষ নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদে পদ বাগিয়ে নেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। এতে ব্যক্তির লাভ হলেও দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রকারান্তরে। এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে নিবেদিত ও ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের জোর দাবি উঠেছে।

(এফএ/এএস/এপ্রিল ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test