E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারের বোরো চাল সংগ্রহ ঈশ্বরদীতে ব্যাহত হওয়ার আশংকা

২০১৭ মে ২৭ ১৪:২৩:২১
সরকারের বোরো চাল সংগ্রহ ঈশ্বরদীতে ব্যাহত হওয়ার আশংকা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় ঈশ্বরদীর চাউল মিল মালিকরা চলতি বোরো মওসুুমের চাল সরবরাহের জন্য সরকারি খাদ্যগুদামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে না। সরকার চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা। মিল মালিকদের দাবি ৩৮ টাকা। সরকার ও মিল মালিকদের মধ্যে মূল্য নির্ধারণ নিয়ে চলমান সংকটের কারণে ঈশ্বরদী খাদ্য গুদাম ও মুলাডুলি সিএসডি গুদামে চলতি ২০১৭ বোরো মওসুমে সরকারি চাল সংগ্রহ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। 

ঈশ্বরদী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী সরকারি খাদ্য গুদাম (এলএসডি) ও মুলাডুলি কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের (সিএসডি) জন্য সরকার চলতি বোরো মওসুমে ১৮,৪১২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২রা মে থেকে চাল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। ঈশ্বরদী উপজেলায় সরকারী খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত মিলার রয়েছে ৫৮১ জন। খাদ্য গুদামের সাথে মিল মালিকদের চুক্তির মেয়াদ ছিল গত ২০শে মে পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ঈশ্বরদী সরকারি খাদ্য গুদামের সাথে ৪ জন ও মুলাডুলি সিএসডি’র সাথে মাত্র ১২ জন মিল মালিক চাল সররাহের চুক্তি করেছেন। পরবর্তীতে মিল মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সরকার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। এতেও মিল মালিকদের আশানুরূপ সারা মিলছে না।

সম্পদ ট্রেডার্সের মিল মালিক আলহাজ্ব সামশুল আলম জানান, বাজারে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৪ টাকা। দেড় কেজি ধান দিয়ে এক কেজি চাল হয়। এতেই চালের মূল্য হয় ৩৬ টাকা। এছাড়াও পরিবহণ, শ্রমিক খরচসহ প্রতি কেজি চালের মূল্য হয় ৩৮ টাকা। সেখানে সরকার চালের ধান নির্ধারণ করেছে ৩৪ টাকা। মিল মালিকরা এতো লোকসান দিয়ে কখনও সরকারকে চাল দিতে পারবে না। সরকারকে চাল পেতে হলে অবশ্যই চালের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে।

চরমিরকামারী আইকে রোডের মেসার্স মর্ডাণ খান রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম খান জানান, সরকারকে এই দামে চাল দিলে মিল মালিকদের পথে বসতে হবে। জেনে শুনে বুঝে কেউ নিজের লোকসান করতে চাই না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি চালের বাজার দর যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ করার জন্য।

বড়ইচারার মেসার্স আলহাজ্ব ওসমান গণি রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ওয়াহিদ মুরাদ সুজন জানান, সরকারি গুদামে চাল দিলে ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি প্রতি লোকসান হবে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে মিল মালিকরা।

ঈশ্বরদী উপজেলা চাউল কল মালিক সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান মালিথা জানান, চাউল কল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মালিক সমিতি’র পক্ষ থেকে প্রতি কেজি চালের মূল্যে ৩৮ টাকা ও চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১শে মে পর্যন্ত করার আবেদন জানানো হয়। সরকার চুক্তির মেয়াদ ৩১শে মে পর্যন্ত বাড়ালেও চালের দাম পুন: নির্ধারণে এখনও পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। লোকসান দিয়ে মিল মালিকদের সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ৩৮ টাকা কেজি দরের মূল্যের দাবি সরকার মেনে নিলে মিলাররা চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি শুরু করবে।

ঈশ্বরদী সরকারি খাদ্য গুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান জানান, সরকার মিলারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে চুক্তির মেয়াদ ৩১শে মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। মিলারদের সাথে সরকারের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে আশাকরি একটি সূরাহা হবে এবং মিল মালিকরা চুক্তিবদ্ধ হবেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, সরকার সময় বাড়ানোর পর আমরা আশাবাদী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিল মালিকরা চুক্তিবদ্ধ হবেন এবং চাল সরবরাহ করবেন। কোন মিল মালিক খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের নিয়ম আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোন মিল মালিক চাল সরবরাহ না করলে আগামী চার বছর সে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবে না।

(এসকেকে/এএস/মে ২৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test