E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুমতি নদীর উপর নির্মীয়মান সেতু

মহম্মদপুরে অধিগ্রহণ হওয়া জমির অর্থ পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্থরা

২০১৭ জুন ০৭ ১৪:২৩:৪৫
মহম্মদপুরে অধিগ্রহণ হওয়া জমির অর্থ পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্থরা

মাগুরা প্রতিনিধি :  মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে মধুমতি নদীর উপর ‘শেখ হাসিনা’ সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসলেও অধিগ্রহন হওয়া জমির টাকা পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্থরা। দুই বছরেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন এসব জমির মালিকেরা।

এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের জুন মাসে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক দিতে শুরু করেছেন বলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান।

সেতুর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা ইমারত মোল্যা ও কাইয়ুম শেখ জানান,‘এলাকা উন্নয়নে একটা ভালো কাজ হচ্ছে সে জন্য তারা ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত। শুনছি যেকোন সময় বাড়ি ঘর ভেঙে দেবে। অন্যত্র জমি কিনে ঘর তুলে বসতি স্থাপন করতে সময় টাকা দুটোই দরকার। টাকায় না পেলে আমরা কোথায় কী করব।’

মহম্মদপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরের জাঙ্গালিয়ার মধুমতি নদীর বাঁশতলা খেয়াঘাট এলাকায় ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন মাগুরা -২ আসনের সাংসদ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পায় ম্যাক্স-রেনকিন নামের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাটি পরীক্ষা ও মার্চ মাসে সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৫৯ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৫ টাকা ২৫ পয়সা ব্যয়ে ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে ইতোমধ্যে সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। রাত-দিন চলছে কাজ চলছে। চলতি বছরের আগস্টেই শেষ হতে পারে নির্মাণ কাজ।

নদীর মধ্যে মূল সেতু বাদে দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে এলজিইডি। সেতুর পশ্চিম পাড়ের ১ হাজার ৬৭৩ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থ সড়কের জন্য ৫০ জন ব্যক্তির ২০১ দশমিক ৬৩৭ শতাংশ এবং পূর্ব পাড়ের সড়কের জন্য ১ হাজার ২৭৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থ সংযোগ সড়কের জন্য ১৫ জন ব্যক্তির ২৫২ দশমিক ৫৭৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি জমির শ্রেণি ভেদে নদীর পূর্বপাড়ের জমির মালিকেরা শতক প্রতি ৫৭ হাজার ও পশ্চিম পাড়ে ৩৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। জমির উপর বাড়িঘর থাকলে আলাদা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এলজিডি এসব ঘরবাড়ি ভেঙে নিলামে বিক্রি করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পশ্চিম পাড়ে অধিগ্রহনকৃত জমির উপর শতাধিক বসত ঘর রয়েছে। এখানে ঝুপড়িঘর থেকে শুরু করে একতলা,দ্বিতল দালান বাড়ি ও মসজিদ রয়েছে।

পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা সিরু শেখ ও ফুল মিয়াসহ পাঁচজন জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে হলেও দলিলে উল্লেখিত জমির শ্রেণির কারণে আমরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে নামমাত্র মূল্য পাচ্ছি। ব্যক্তি মালিকানায় ৭০ থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া জমি শতাংশ প্রতি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। অথচ পূর্ব পাড়ে চরের কৃষি জমি শতাংশ প্রতি দেওয়া হচ্ছে ৫৭ হাজার টাকা।

অন্যদিকে পশ্চিমপাড়ের বসতি অপসারনের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি এলজিইডি। ক্ষতিপূরনের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় এসব পরিবারকে সরানোর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এতে পশ্চিম পাড়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে এলজিইিড’র সূত্র জানিয়েছে।

পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা শেখ ওয়াজেদ আলী, রাশেদ জোয়াদ্দার ও মোসলেম উদ্দিনসহ আরও দশজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, ‘পঞ্চাশ জন মালিক হলেও অধিগ্রহণকৃত এসব জমিতে শতাধিক পরিবার পৈত্রিক ভিটায় বাস করছেন। তাদের কারো জমি কারো বসতভিটা ছাড়তে হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের অল্প টাকায় উপজেলা শহরে জমি কেনা সম্ভব নয়। এতে অনেক পরিবার বিপদে পড়েছেন। এছাড়া তারা দুই বছরেও ক্ষতিপূরনের টাকা হাতে পাননি।’

পূর্বপাড়ের বাসিন্দা আরিফুজ্জামান আরব বলেন, তাদের পাঁচ ভাইয়ের ১৯ শতক পৈত্রিক ও নিজের ৭ শতক জমি সরকার অধিগ্রহন করলেও কোন টাকা পাননি। মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুই-তিন বার গেলেও বলা হচ্ছে টাকা দেওয়া হবে।’

নদীর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা মজিদ শেখ ও শুকুর শেখ জানান, ‘তারাসহ আরও কয়েকজন জমির অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক হাতে পেয়েছেন।’

মহম্মদপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন,‘গত বছরের জুন মাসে জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের সমুদয় টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে। এই টাকা জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থদের প্রদান করবে। দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন,‘জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের পক্রিয়াটি জটিল। আইন মেনে বেশ কয়েকটি ধাপে কাজ শেষ করতে হয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর শুরু করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে সবাই টাকা পেয়ে যাবেন।’

উল্লেখ্য, এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন মধুমতি নদীর উপর সেতু চালু হলে মাগুরা-নড়াইলের সাথে প্রতিবেশি ফরিদপুর জেলার মেলবন্ধন তৈরি হবে। তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্পসময়ে কম খরচে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারবে। এছাড়া উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এলাকার লাখ লাখ মানুষের যোগাযগ ও কর্মসংস্থানসহ জীবনমান বৃদ্ধির আশার সঞ্চার হবে।

(ডিসি/এসপি/জুন ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test