E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ভূঞাপুরে বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু

২০১৭ জুন ১৫ ১৫:০৯:০৪
ভূঞাপুরে বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : যমুনা নদীর টাঙ্গাইল অংশে বর্ষা শুরুর আগেই ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙনে গত তিন দিনে তিন শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নে প্রায় ৩০০-৪০০ বাড়ি-ঘর ও শ’ শ’ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এবার বর্ষার শুরুর আগেই ভাঙনের তান্ডব দেখা দিয়েছে।

গত সোমবার(১২ জুন) থেকে শুরু হওয়া ব্যাপক ভাঙনে নিজেদের ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ। এখনই উদ্যোগ না নিলে বর্ষায় ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করার আশঙ্কা এসব নদী পাড়ের মানুষের। এদিকে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে গত বছর ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও নানা অনিময় ও দুর্নীতির কারনে তা রসাতলে গিয়েছে। ফলে জিও ব্যাগ কোন কাজেই আসেনি।

সরজমিনে জানা যায়, বর্ষা শুরুর আগেই ভূঞাপুরের গাবসারা ইউনিয়নের ডিগ্রীরচর, রাজাপুর, সরইপাড়া, ফলদা পাড়া, ভূঞাপাড়া ও অর্জুনা ইউনিয়নের অর্জুনা গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনের ভাঙনে এসব এলাকার তিন শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও শ’ শ’ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে গাবসারা ইউনিয়নে ২০০ ও অর্জুনা ইউনিয়নে ১০০ পরিবার রয়েছে।

নিজেদের ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে পরিবারগুলো। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ। প্রতিবছরই বন্যা আসার আগে অর্জুনা গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দায়সারা সংস্কার কাজ করে থাকে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে অভিযোগ আছে বাঁধ সংস্কারের জন্য যত টাকা বরাদ্দ হয়, এর অর্ধেক টাকাও বাঁধ সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হয় না।

সম্প্রতি নদীর পাড় দিয়ে মাটি মিশ্রিত বালু ফেলে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ এ অংশটুকু নামমাত্র মোরামত করেছে কর্র্তৃপক্ষ। গত তিন দিনে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পানির চাপে ভাঙন আরো তীব্র হচ্ছে। গত দশ বছর আগেও পানি উন্নয়ণ বোর্ডের জোকারচর-তারাকান্দী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে মূল যমুনার দূরুত্ব ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে। যতোই দিন গড়াচ্ছে ভাঙনের তীব্রতা ততোই পূর্বদিকে সরে যাচ্ছে। এর ফলে যমুনা নদী মূল প্রবাহ এখন বাঁধ ঘেষে বইছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেটি সাময়িকের জন্য। যখন পানি বৃদ্ধি ও নদী ভাঙন শুরু হয় তখন টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ জামালপুরের পিংনা থেকে টাঙ্গাইলের জোকারচর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। এর আগে স্থানীয় এমপি বাঁধটি নির্মাণের প্রতশ্রিæতি দিলেও পুরো বাঁধ নির্মাণ আর বাস্তবে রূপ নেয়নি।

অর্জুনা গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, আমরা বাবা গরীব মানুষ ভিক্ষা কইরা খাই। যাও কিছু জায়গাজমি ছিল দুই দিন আগে সেই জায়গাও যমুনা নিয়া গেছে। এই যমুনা কারো দোহায়ও মানেনা, কারোও কথাও শুনে না। আর আমাগো চেয়ারম্যানগো চোখেই দেখিনা। বর্ষা অইলে এক-দুইবার আসে তারপর আর দেখা যায় না। কোন খোঁজ নেয় না। আমার স্বামী নাই। চেয়ারম্যান আমারে বয়স্ক ভাতার কার্ডও দেয় না।

একই গ্রামের রাব্বি আহমেদ বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৩০০-৪০০ বাড়ি-ঘর এই যমুনায় নদীর ছোঁবলে বিলীন হয়ে যায়। আমার নিজ চোঁখে দেখা দুই দিনে ৮ টিরও বেশি বসতবাড়ি যমুনা নদী নিয়ে নিয়েছে। আর এই এলাকায় দিয়ে জিও ব্যাগে মাটি মিশ্রিত বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে- তা আমাদের কোন কাজেই আসছে না। এই জিও ব্যাগ দিয়ে যে বাঁধ দেয় তা ক্ষণিকের জন্য স্থায়ী বাঁধ না। এই এলাকায় যদি স্থায়ী বাঁধ হতো তাহলে নদীপাড়ের মানুষেরা শান্তিতে বসবাস করতে পারতো।

এ ব্যাপারে ঢাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৗশলী (সেন্ট্রাল জোন) মো. ফখরুল ইসলাম যমুনার এ অংশ পরিদর্শন করে বলেন, তীব্র ভাঙনে জিও ব্যাগ কার্যকর নয়। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণসহ আগামী বছরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি।

(আরকেপি/এসপি/জুন ১৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test