E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে গাড়ির চাপে যানজট, চার লেনের কাজ বন্ধের দাবি

২০১৭ জুন ১৬ ১৬:৩৯:০৭
বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে গাড়ির চাপে যানজট, চার লেনের কাজ বন্ধের দাবি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রী সাধারণ। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দকের সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল। ফলে এ মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকছে। ঈদের আগ মূহুর্তে এর মাত্রা আরো কয়েকগুন বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা সুগম করতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে চার লেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি করেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে গাজিপুরের ভোগড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চার লেনের কাজ চলছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিদিন ন্যূনতম ২৪ হাজার গাড়ি চলাচল করছে এ মহাসড়কে। ঈদের সামনে এ মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫ হাজারে। এমতাবস্থায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঈদকে সামনে রেখে চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। জেলা পুলিশ বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদে যানজট এড়াতে নানা কর্মসূচি নেয়া হবে।

এদিকে, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এবারও ঈদে বাড়ি পৌঁছানো কিংবা বাড়ি থেকে ফেরা সম্ভব হবেনা বলে মনে করেন গাড়ির চালকরা। বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের অন্তত ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। তাই এ মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকে বেশি। এ কারণে প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে এ সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

এছাড়া টাঙ্গাইলের ধেরুয়া রেল ক্রসিংয়ে উত্তরবঙ্গের ১২টি ট্রেন দিনে ২৪ বার আসা-যাওয়া করে এবং এ কারণে এই রেল ক্রসিংয়ে মহাসড়কের যানবাহনগুলোর প্রায় দেড় ঘণ্টা নষ্ট হয়। এটিও যানজটের কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় রাস্তা বন্ধ রেখে মহাসড়কের চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুধু টাঙ্গাইল নয়, গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মহাসড়কে চার লেনের এ কাজ চলছে। মহাসড়কে অনেক অংশে ভেঙে চার লেনের কাজ করা হচ্ছে। এতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দকের সৃষ্টি ও রাস্তা খুঁড়ে কাজ করায় যান-চলাচলের কারণে দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। এসব জায়গায় যান চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। ফলে টাঙ্গাইলের সীমানায় মির্জাপুরের গোড়াই থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অন্তত ৪৫ কিলোমিটার এলাকার পাকুল্লা, জামুর্কী, করটিয়া, পৌলী ও এলেঙ্গায় প্রায় সময়ই গাড়ির ধীরগতি থাকে। দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হলেও যানজট সৃষ্টি হয়।

এ মহাসড়কে চলাচলকারী কয়েকটি গাড়ির নিয়মিত যাত্রী আকমল হোসেন, বাহাদুর মিয়া, রাশেদ রহমান, শাহেদা আরবী, মমতাজ খানম, নীল কমল সাহা সহ অনেকেই জানান, কর্তব্যরত পুলিশ শুধুমাত্র যানজট হলে তৎপর হয়ে ওঠে। তারা সব সময় তৎপর থাকলে মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কম হবে। এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী কয়েকটি দূরপাল্লার বাসের চালক ও সুপারভাইজাররা মনে করেন, চার লেনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ মহাসড়কে যানজট থাকবেই। তবে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যদি নিয়মিত তৎপর থাকে তাহলে অনেকাংশে যানজট কম হবে। ঈদে ঘরমুখো ও ফিরতি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে চার লেনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তাহলে কিছুটা হলেও যাত্রী দুর্ভোগ কমবে।

টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু জানান, এ মহাসড়কে প্রতিদিন ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। ঈদের ৪-৫দিন আগে থেকে পরেও ৩-৪দিন মহাসড়কে প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এ অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এ মহাসড়ক সহ্য করতে হিমশিম খায়। চার লেনের কাজ চলা, বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়া এবং আগের সড়কের অবস্থাও ভালো না থাকার কারণে এবছরও ঈদে যানজট হচ্ছে। তিনি মনে করেন, ঈদ মৌসুমের আগে-পরে ৫-৬দিন মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলে যানজট কম হবে। তাই তিনি চার লেনের কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানান।

টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া (বড় মনি) জানান, মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও তাদের বিপুল সংখ্যক তাদের স্বেচ্ছাসেবকও থাকবে। তবে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে চার লেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হলে ভাল হয়।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম নূর-এ-আলম জানান, অন্য বছরের চেয়ে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তাদের বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মহাড়কের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করবে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম পিপিএম জানান, মহাসড়কের নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যানচলাচল, চার লেনের নির্মাণ কাজ চলা, সড়ক দুর্ঘটনা ও যান বিকল হওয়াসহ নানা কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে সাধারণত সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষদিন বৃহস্পতিবার সকালে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আর যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।

পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদে যানজট এড়াতে নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এই চার লেনের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আর যেসব জায়গায় যানজট সৃষ্টি হবার সম্ভবনা আছে সেইসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সব সময় উপস্থিত থাকবে। যেন কোনো ধরনের যানজটের সৃষ্টি না হয়।

(আরকেপি/এএস/জুন ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test