E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বড়লেখার বোবারতলে টিলাধসে রাস্তা বন্ধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ১০ গ্রামের মানুষ

২০১৭ জুন ২২ ১১:৩৫:৩০
বড়লেখার বোবারতলে টিলাধসে রাস্তা বন্ধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ১০ গ্রামের মানুষ

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের দুটি রাস্তা টিলাধসে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন সীমান্তবর্তী বোবারতল এলাকার ১০ গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ। রাস্ত দুটির অন্তত ৬০ থেকে ৬৫টি স্থানে টিলার মাটি ধসে পড়েছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় ও এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। গত শনিবার (১৭ জুন) রাতে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এই ধসের ঘটনা ঘটে। 

জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা বাজার-বোবারতল ১১ নম্বর সড়ক এবং উত্তর ডিমাই-অরতকি-গান্ধাই ভায়া বোবারতল রাস্তার বিভিন্ন স্থানে টিলার মাটি ধসে রাস্তার উপর মাটির স্তুপ জমে আছে। এতে এ সড়ক দুটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র জিপ গাড়িই এই কাঁচা সড়ক দুটিতে চলাচল করে। লোকজন পাহাড় ডিঙ্গিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছেন। কিন্তু পাহাড় ডিঙিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে আসা এবং এলাকায় উৎপাদিত কাঁঠাল, লেবু, জারা লেবু, কলা ও পান বড়লেখা উপজেলা সদর নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না। এই পণ্যগুলোই এলাকাবাসীর একমাত্র আয়ের উৎস। গ্রামগুলো থেকে ছোটলেখা বাজার এবং উত্তর ডিমাই এলাকার দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

গত শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণে টিলাসমূহের মাটি ধসে অরতকি, গগনটিলা, দক্ষিণ গান্ধাই, মধ্য গান্ধাই, পশ্চিম গান্ধাই, বোবারতলসহ সড়ক দুটির অন্তত ৬০ থেকে ৬৫টি স্থানে মাটি পড়েছে।

এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মধ্য গান্ধাই, দক্ষিণ গান্ধাই, পশ্চিম গান্ধাই, ফেকুছড়া, মধ্য ফেকুছড়া, ইসলামপুর, ষাইটঘরি, উত্তর ষাইটঘরি, করইছড়া এবং গান্ধাই পানপুঞ্জি। এই গ্রামগুলোতে আদিবাসীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাস আছে। চারদিন ধরে এইগ্রামগুলোর মানুষ উপজেলা সদরের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বৃষ্টি বন্ধ হলেও এই রাস্তা স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগবে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে কাঠের সেতু ছিল। এগুলো ভেঙে গেছে। লোকজন কাঁধভারে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া এলাকার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় একেকজন কৃষকের লাখ-দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

দক্ষিণ গান্ধাই গ্রামের মিজানুর রহমান গতকাল বুধবার (২১ জুন) বলেন, ‘টিলা ধসে রাস্তা বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে আছি আমরা। গাড়ি চলাও বন্ধ অই গেছে। আমাদের এলাকায় জিপ গাড়ি দিয়া আমরা পণ্য আনা নেওয়া করি। ৪০টি জিপ গাড়ি দুই রাস্তায় প্রতিদিন চলত। রাস্তা বন্ধ অই যাওয়ায় কুন্তা (হয়ে যাওয়ায় কোনেকিছু) আনানেওয়া যার না।’

উত্তর ষাইটঘরি গ্রামের আতিকুল ইসলাম ও খায়রুল আলম বলেন, ‘আমরার যোগাযোগ ব্যবস্থা একবারে বিপর্যস্ত। আটিয়া (হেঁটে) যাওয়াও কঠিন। আধঘন্টার পথ যাইতে দুইঘন্টার বেশি লাগে। আমরার কষ্ট জীবনে শেষ অইত নায়। মরার (মৃত্যুর) আগ পর্যন্তই আমাদের এই কষ্ট করতে অইব (হবে) মনে হয়।’

দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নন্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাজ উদ্দিন গতকাল বুধবার বলেন, ‘এলাকায় যাওয়ার মেইন দুইটা রাস্তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার অন্তত ৬০ জাগায় টিলার মাটি ধসে পড়েছে। এলাকার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি উপর মহলে জানিয়েছি।’

দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন গতকাল বুধবার বলেছেন, ‘দুইটা রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে। মাটি ও গাছপালা পড়েছে। মানুষ চলার জন্য রাস্তা মেরামত করতেও এক মাস লাগবে। গাড়ি চলার ব্যবস্থা হতে দুই-তিন মাস লাগবে। হুইপ ও ইউএনও মহোদয়কে বলেছি। এখানে টিলা কাটা হয়নি। তবু টিলার মাটি ধসে পড়েছে।’
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন গতকাল বুধবার বলেন, ‘খাড়া পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রাস্তা। রাস্তার উপর দিকে ভেঙে গেছে। এখানে রাস্তা করার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প হচ্ছে।’

(এলএস/এএস/জুন ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test