E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাকালুকিতে পানি বৃদ্ধি

বড়লেখায় দুর্ভোগে ৩৫ হাজার পানিবন্দী মানুষ

২০১৭ জুলাই ০১ ১৬:২২:৩৬
বড়লেখায় দুর্ভোগে ৩৫ হাজার পানিবন্দী মানুষ

লিটন শরীফ, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে ঘরের ভিটায়। ঘরের বেড়া ভেঙে পানির স্রোতে মিশে যাচ্ছে। বাড়িঘরে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি, তালিমপুর, সুজানগর ও দাসেরবাজার এই চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠছেন। অনেকে ঝুঁকি সত্তে¡ও বাড়ি ছাড়ছেন না।

গত শুক্রবার (৩০ জুন) সুজানগর ও তালিমপুর ইউনিয়ন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেকের ভিটেবাড়ির মাটি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ঘরের বেড়া ভেঙে পড়েছে। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়েই বাড়িতে আছেন। অনেকে কচুরিপানার বেড়া দিয়ে ভিটাবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন। বাড়ির নলকূপ ডুবে যাওয়ায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওর এলাকার বর্ণি, তালিমপুর, সুজানগর ও দাসেরবাজার ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্রায় ১০-১৫ দিন ধরে বন্যাকবলিত। এদিকে নতুন করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকার ১১৫টি পরিবার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সুজানগর ইউনিয়নের সিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও আজিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

পানি বৃদ্ধির কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো হচ্ছে তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা, ইসলামপুর, কুটাউরা, বাড্ডা, নুনুয়া, পাবিজুরি, শ্রীরামপুর, মুর্শিবাদকুরা, পশ্চিম গগড়া, পূর্ব গগড়া, বড়ময়দান, গাগড়াকান্দি, তেলিমেলি, গোপালপুর, হাউদপুর; সুজানগর ইউনিয়নের দশঘরি, রাঙ্গিনগর, ঝগড়ি, বাড্ডা, পাটনা, ভোলারকান্দি, উত্তর বাঘমারা, বাঘেরকোনা, চরকোনা, পশ্চিম সালদিগা; বর্ণি ইউনিয়নের পাকশাইল, সৎপুর, কাজিরবন্দ, নোওয়াগাঁও, উজিরপুর এবং দাসেরবাজার ইউনিয়নের চানপুর, অহিরকুঞ্জি, উত্তরবাগীরপাড়, দক্ষিণবাগীরপাড়, পানিশাইল, ধর্মদেহী, চুলারকুড়ি, কোদালী, ধলিরপাড়, নেরাকান্দি, মাইজমজুড়ি, মালিশ্রী ইত্যাদি গ্রাম। সুজানগর ইউনিয়নের ২০-২৫টির মতো কাঁচা-পাকা গ্রামীণ রাস্তা নিমজ্জিত। তালিমপুর ইউনিয়নের ৯০ ভাগ ও বর্ণি ইউনিয়নে ৫০ ভাগ গ্রামীন রাস্তা নিমজ্জিত। একমাত্র নৌকাই পানিবন্দী মানুষের চলাচলের মাধ্যম।

সুজানগর ইউনিয়নের আজিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ভোলাকান্দি গ্রামের আলমাছ আলী বলেছেন, ‘আফালে (ঢেউয়ে) ঘরদুয়ার ভাঙ্গি নিছেগি (নিয়ে নিছে)। ১২দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি।’

বাড্ডা গ্রামের আজিরুন বেগম (৫৫) জানিয়েছেন, তিনি গত বুধবার (২৮ জুন) এসে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। ঢেউয়ে তাঁর ঘর ও নৌকা ভেঙে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাননি।

গতকাল শুক্রবার সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি গ্রামের মুতলিব আলী বলেন, বাড়ির নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

তালিমপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বিজয় বিশ্বাস (৬৫) শুক্রবার বলেন, ‘ঘরের নিচ ভাঙ্গি গেছে। পরিবার, নাতি-নাতনি সব কুটুমবাড়ি পাঠাই দিছি। আমি ঝুঁকি নিয়া বাড়ি আছি। রান্নাঘর হাওরে। খাওয়া-দাওয়া খুব কষ্টে চলের।’

একই গ্রামের বাসন্তী রানী বিশ্বাস (৬০) বলেন, ‘ঘরসহ ভিটা, কাপড়চোপর সব আফালে (ঢেউ) ভাসাই নিছে। অন্যর ঘরে থাকরাম। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইনি।’

মুর্শিদাবাদকুরা গ্রামের নাজমা বেগম (৫৫) বলেন, ‘হাইনজা (সন্ধ্যা) বাদে আফাল উঠে। সবকিছু ভাঙিচুরি লইয়া যায়।’ একইরকম দুর্ভোগের কথা বললেন মুর্শিবাদকুরা গ্রামের আলফাতুন বেগম (৫৭)।

তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত। আমার বাড়িতে পানি উঠেছে। প্রায় ১০০ পরিবার বাড়ি ছেড়ে

আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেক মানুষের ঘর পড়ে গেছে। অনেকে এখনো ঘর ছাড়ছে না। সরকারি ত্রাণ পাইছি। তবে চাহিদার তুলনায় কম।’

সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নছিব আলী বলেন, ‘আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। পানি বৃদ্ধি থামছে না। মানুষ খুবই কষ্টে আছে।’ তিনি জানান, ঈদের আগে ৫৮৮জন মানুষকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আরও ৫ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আব্দুল¬াহ আল মামুন বলেন, ‘হাওরে এখনো পানি বাড়ছে। জাতীয় সংসদের হুইপ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশনা মোতাবেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত সকল মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকার নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

(এলএস/এসপি/জুলাই ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test