E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘হামরা কেমন করি পড়া পড়মো’

২০১৭ আগস্ট ১৮ ১৬:১১:৪২
‘হামরা কেমন করি পড়া পড়মো’

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : হামার বই-খাতা শোইক বানের পানিত ভাসী গ্যাছে। হামরা কেমন করি পড়া পোড়মো। হামার বাড়ী ঘরও বানত ভাংগি গ্যাছে। এলা থাকমো কোনটে কোণা। হামার এলা কি হবে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিল চতুর্থ শ্রেনী ছাত্রী মাসুদা বেগম (১০)।

বাড়ী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বন্যাকবলিত ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ার চর এলাকায়। যেখানে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের প্রবল স্রোতে এই এলাকায় ধরলা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি রাজারহাট এলাকায় প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হয়। এরই পাশের মাসুদার বাবা মেহের জামালের বাড়ীর ৩টি ঘরসহ অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ী, স্কুল-মাদ্রাসা বন্যার পানিতে তছরুফ হয়ে যায়।

এই বন্যায় মাসুদার বই খাতাও ভেসে গেছে। তার এখন একটাই কথা স্কুল খুললে কি নিয়া পড়বার জ্যাইম। ১৮ আগষ্ট শুক্রবার বন্যাকবলিত ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ার চর এলাকার চিত্র দেখতে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে গেছে ঠিকই। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় পানি আর অথৈই পানি। বন্যায় রাস্তা-ঘাট বিছিন্ন হয়ে গেছে। তাই ওই এলাকার লোকজন নৌকা আর কলাগাছের ভেলা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। তাদের কষ্টের সীমা নেই। মাথা গুজার ঠাঁই টুকু অনেকের নেই। সেখানে শুধু নেই আর নেই। আছে শুধু পানি আর মাঝে মাঝে বাঁশ ঝাড়ের আগা পানিতে ভেসে আছে।

বানভাসীদের করুন পরিনতি কাছ থেকে না দেখলে বুঝা যাবে না। বন্যার প্রবল স্রোতে ঘর ভাঙ্গা মেহের জামালের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, সে পূনরায় ঘর নিমার্ণের চেষ্টা করছে। তার পাশেই বাবার সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন মাসুদা। তার উঠানে যাওয়া মাত্রই পিছন দিক থেকে এসে মাসুদা কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বলছিল উক্ত কথা গুলি।

মাসুদা কালুয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে। তার আশ পাশের সব বাড়ী ঘর বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেছে। সকাল থেকে সে সামান্য মুড়ি খেয়ে আছে। দুই বোনের মধ্যে সে বড়। তার ছোট বোন কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। মাসুদা বলে, এতবড় বান দ্যাখং নাই। কি পানি। নিমিশে হামার বাড়ীর উপড়া পানি উঠছে। হামরা বানত ভাসী যাবার ধরছিলং। কোন মতে বোনক নিয়া উচানত উঠছি। আজকা আসি দ্যাখং হামার শ্যোইক শ্যাষ হয়া গ্যাছে। বই খাতা খুঁজলুং কিছু পাং নাই। হামরা না খায়া থাকি। মানষে মুড়ি-চিড়া দ্যায়। আর একবার কায় যেন একনা খিচরীর টোপলা দিয়া গ্যাছে। তাকে হামরা ভাগ করি খাছি। এবারই প্রথম বন্যা দেখলো সে। তার এক খেলার সাথী বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তার লাশও খুঁজে পাওয়া যায় নাই। তাই মাসুদার তার খেলার সাথীর জন্য বড় কষ্ট পাচ্ছে বলে কাঁদছিল।

শুধু মাসুদা না ওই এলাকায় লায়লী বেগম, আছমা বেগম, মনতাজ আলী, লিটন মিয়া, আয়শা বেগম, ছায়মা খাতুনের মত শত শত ছেলেমেয়ের একই অবস্থা। অনেকে বিদ্যালয়ে পা দিতে পারবে কিনা নাকি অকালেই পড়া লেখা থেকে ঝড়ে পড়ে যাবে এ দুঃচিন্তা এখন অভিভাবকদের মাঝে দানা বাঁধছে। আবার অনেকেই বলছে, এবারের বানে যে পরিমান ক্ষতি হলো তার ধকল সামলাতে বহুদিন সময় লাগবে। এর প্রভাব ছেলে-মেয়েদের উপরও পড়বে।

(পিএমএস/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test