E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ায় আনন্দ স্কুল স্থাপনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

২০১৪ জুন ২৯ ১৪:৪৭:২৩
কুষ্টিয়ায় আনন্দ স্কুল স্থাপনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আনন্দ স্কুল স্থাপনের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।প্রকল্প শুরুর আগেই শিক্ষার্থী বাছাই, শিক্ষক নিয়োগ ও জরিপে বড় ধরনের অনিয়ম করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দপ্তরে অর্ধশত অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে। যেনতেনভাবে স্কুল স্থাপন করে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে একটি অখ্যাত এনজিও ও রস্কের কয়েকজন কর্মকর্তা উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) দ্বিতীয় পর্যায় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্প চলবে। এ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৩০টি স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে উপজেলায় এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নীতিমালায় বলা আছে, ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরে পড়া শিশুরা আনন্দ স্কুলে ভর্তি হতে পারবে। একটি স্কুলে কমপক্ষে ২৫জন শিক্ষার্থী ওপরে ৩৫জন পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে। কোন সরকারি প্রাইমারি স্কুল ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে এমন কোন শিক্ষার্থীকে আনন্দ স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না সহ আরও বেশ কিছূ শর্ত রয়েছে।
আনন্দ স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মাসে ১০০ টাকা উপবৃত্তি, ভর্তির সময় উপকরন বাবদ ১২০ টাকা, পোশাক তৈরির জন্য ৪০০ টাকা দেয়া হবে। এছাড়া শিক্ষকের বেতন ৩ হাজার, স্থাপনা তৈরির সময় ৩ হাজার ৮০০ টাকা ও প্রতিমাসে ঘর ভাড়া দেয়া হবে ৪০০ টাকা। সব মিলিয়ে বছরে ব্যয় করা হবে প্রায় ১ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্কুল শুরুর আগে উপজেলায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী খুঁজে বের করতে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের কাজ করে ‘উজান’ নামে কুষ্টিয়ার অখ্যাত একটি এনজিও। এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক ফিরোজা বেগম। তিনি দূর্যোগ অধিদপ্তরে পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কুষ্টিয়ায় বাড়ি বর্তমানে অবসরে আছেন। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতার মাধ্যমে তিনি প্রকল্পটি পেয়েছেন। এনজিওটির কোন লোকবল নেই। শহরতলীর বটতৈল এলাকায় নাম মাত্র একটি অফিস রয়েছে। এনজিওটি ঘরে বসেই জরিপ করে সদর উপজেলায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর পরিমান ৩ হাজার ৫০০জন বলে রিপোর্ট দেয়। পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস একটি জরিপ চালিয়ে ৯৯২ জনের খোঁজ পান। পূনরায় দ্বিতীয় দফা জরিপ পরিচালনা করে ২ হাজার ৮৪ জনের একটি তালিকা দেয়। তবে এ জরিপেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নানা লোভ দেখিয়ে ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক সুত্র জানিয়েছে, উজান যে জরিপ চালিয়ে তালিকা প্রস্তত করেছে সেই তালিকায় প্রাইমারি স্কুলে পড়ছে এমন শিক্ষার্থীর নামই বেশি। এছাড়া যাদের বয়স ৪ থেকে ৬ বছর তাদের নামও এ তালিকায় রয়েছে। আর এসব অনিয়মের মূল হোতা প্রকল্পের প্রশিক্ষন কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লাহ আল মনসুর। মনসুর ইতিমধ্যে ৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তিনি দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানদেরও মাধ্যমেও টাকা নিচ্ছেন তিনি। একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বাকিদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওহিদুল ইসলাম বলেন, আনন্দ স্কুল স্থাপনের নামে নানা অনিয়ম হচ্ছে। সরকারি প্রাইমারিতে পড়ছে এমনদের নাম তালিকায় দিয়ে প্রধান শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। নীতিমালা মানছে না তারা।
তালিকা প্রস্তত করার পর স্থানীয় সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দিয়ে অনুমোদন করার নিয়ম রয়েছে। তালিকায় অনিয়ম হওয়ায় সদর উপজেলার পিয়ারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম আব্দালপাড়া দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কন্দরপদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা অনুমোদন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তাদের তিন জনের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা উপজেলায় জমা দেয়া হয়। এ নিয়ে শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন। এছাড়া ভয় দেখিয়ে মাগুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাগডাঙ্গা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভুয়া তালিকায় স্বাক্ষর না করায় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।
উজান এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক ফিরোজা বেগম বলেন, শিক্ষকরা যদি স্বাক্ষর না করে তাহলে আমরা তাদের পিছে পিছে ঘুরব নাকি। প্রকল্প নিয়ে বড় বিপদে আছি। শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মনসুর টাকা নিচ্ছে এ বিষয়টি আমিও শুনেছি।
তবে স্কুল স্থাপন ও শিক্ষার্থীদের তালিকা করা নিয়ে নানা অনিয়ম হচ্ছে বলে স্বীকার করে প্রশিক্ষন কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লাহ আল মনসুর বলেন, অনিয়ম বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। ভুয়া স্বাক্ষরের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। টাকা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোদেজা খাতুন বলেন, আনন্দ স্কুল স্থাপনের নামে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
(কেকে/এএস/জুন ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test