E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাছ কেটে জমি দখলের চেষ্টা, প্রতিকারে সংবাদ সম্মেলন

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৩:৪৮:১৭
গাছ কেটে জমি দখলের চেষ্টা, প্রতিকারে সংবাদ সম্মেলন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : গাছ কেটে জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা, বাড়িতে লুটপাটের  প্রতিকার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলার তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের ছাদেক আলীর ছেলে আব্দুল হাকিম।

কৃষক আব্দুল হাকিম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, তার মা বিবিজান বিবি নানী ছলেমান বিবি ইতিপূর্বে মারা গেছেন। প্রথম পক্ষের সন্তান রাবেয়াকে নিয়েই তার(হাকিম) বাবাকে বিয়ে করেন বিবিজান বিবি। নানী ও মা তাদের নামীয় জমি গোলাপ সরকারকে লিখে না দেওয়ায় বিয়ের পর গর্ভে পাঁচ মাসের সন্তান থাকাকালিন স্বামী গোলাপ সরকার রাবেয়াকে ছেড়ে চলে যান।

রাবেয়া ও তার সন্তান ফাতেমা তাদের বাড়িতেই প্রতিপালিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২৬৩ নং কোবালা দলিল মূলে নানী ও মা তার নামে মোবারকপুর মৌজার সাবেক ২৮৬ দাগে ৪৩ শতক ও ১৮ শতক, হরিশ্চন্দ্রকাটি মৌজার সাবেক ২৭৫ দাগে ৩৬ শতক ও রহিমাবাদ মৌজার সাবেক ৪৮ দাগে এক একর ছয় শতক জমি মোট দু’ একর তিন শতক জমি কোবালা দলিল করে দেন। বতর্মান মাঠ জরিপে মোবারকপুরও হরিশ্চন্দ্রকাটি মৌজার জমি আমার নামে রেকর্ড হলেও ভুলবশতঃ রহিমাবাদ মৌজার এক একর ছয় শতক জমি মা বিবিজিন বিবির নামে রয়ে যায়। এ রেকর্ড সংশোধনের জন্য তিনি ল্যাণ্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।

ভাগ্নি ফতেমাকে ২৬ বছর আগে তিনি নিজ খরচে যশোরের কেশবপুরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আসমত গাজীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পর তাদেরই কথামত তার মেয়ে হেনা সুলতানাকে তাদেরই গ্রামের হাসানুল কবীরের সঙ্গে ২০১৬ সালে বিয়ে দেওয়া হয়। হেনার বিয়ের পর দিন ফতেমা তার কাছে ১০ হাজার টাকা চায়। টাকা না দেওয়ায় রহিমাবাদে যেয়ে সে আর নামীয় জমি উপজেলার নলতা গ্রামের বাবর আলী মোড়লের ছেলে শফি মোড়ল ও একই উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামের হানিফ সরদারের ছেলে ফয়সাল সরদার ওরফে ডাকাত ফয়সালের মাধ্যমে জবরদখল করার জন্য পরিকল্পনা করে। হুমকি দেওয়ায় তিনি গত ২২ জুলাই তালা থানায় ৭৫৭ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। হুমকি দিয়ে সুবিধা না করতে পারায় ফতেমা তার মা বৃদ্ধ রাবেয়াকে দিয়ে চলতি বছরের প্রথম দিকে তার (হাকিম) বিরুদ্ধে তালা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করায়।

পরবর্তীতে নোটিশ পেয়ে ফতেমা ও রাবেয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে যায়নি। পরবর্তীতে ফতেমা তার মা রাবয়োকে দিয়ে একইভাবে পাটকেলঘাটা সার্কেল অফিসে অভিযোগ করায়। সার্কেল অফিসারের নির্দেশে অভিযোগটি স্থানীয় তালা সদর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে শুনানীর জন্য রয়েছে। ফয়সাল সরদার ও ও শফি মোড়ল ফতেমার পক্ষে অবস্থান নিয়ে জমি জবরদখল করে দেওয়াসহ তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার হুমকি দিয়ে আসছিলো।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগষ্ট তালা সেটেলমেন্ট অফিসের বারান্দায় অপেক্ষা করে ১৫০ টাকার একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ভেণ্ডারের কাছ থেকে কেনার সময় শফি মোড়লের কথামত পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে জানতে পারেন তিনি। পরে তাকে দালাল সাজিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি জেলখানা থেকে মুক্তি পান। তার মুক্তির বিষয়টি অগ্রিম জানতে পেরে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ফতেমা, তার স্বামী আসমত গাজীকে নিয়ে ফয়সাল সরদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ও নেপথ্যে থেকে শ্রমিক ঠিক করে দিয়ে শফি মোড়ল তার জমি থেকে কয়েকটি মেহগনি গাছ কাটতে থাকেন। তার স্ত্রী জাহানারা বেগম গাছ কাটতে বাধা দেওয়ায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করার জন্য মোবাইল ফোনে এক শ্রমিককে নির্দেশ দেয় শফি। এ সময় ফয়সাল বলে যে, আজ তো গাছ কাটা হচ্ছে, এরপরও জমি ফতেমাকে লিখে না দিলে তোদের পানের বরজ ভেঙে দিয়ে ফুটবল খেলার মাঠ বানাবো।

উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারকে বিষয়টি অবহিত করায় তার কথামত সকাল ১১টার দিকে উপপরিদর্শক মদন কুমার পাল এসে কেটে ফেলা মেহগণি গাছের কিছু গুড়ি ও ডাল জব্দ করে রহিমাবাদ মসজিদের সামনে রেখে আসেন। এবং কোন গাছপালা না কাটার জন্য ফতেমাসহ তার সঙ্গে থাকা লোকজনদের বলে আসেন।

তিনি জেল হাজতে থাকার সূযোগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে গাছ কেটে নিয়ে যেতে না পারায় দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে শফি ও ফয়সালের নেতৃত্বে তার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। বাহিরের দিকে শব্দ পেয়ে ঘরের দরজা খুলে বের হওয়ার পরপরই জামরুল গাছ বেয়ে ঘরের ছাদে উঠে সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসা পাঁচজন সন্ত্রাসী তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে মারপিট করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারা ঘরের ভিতর টেবিলের উপর রাখা চাবি নিয়ে ক্লবসিগাল গেট খুলে অপর দু’ সন্ত্রাসীকে ভিতরে ঢোকায়। তারা শো-কেচের মধ্যে গরু ও বাছুর বিক্রির ৫০ হাজার নগদ টাকাসহ সোনার গহণা ও ব্যবহৃত জিনিপত্র যার আনুমানিক মূল্য এক লাখ ৬৮ হাজার টাকার জিনিসপত্রসহ জমির দলিল, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ঘটায়। ক্লবসিগাল গেটের সঙ্গে আমার স্ত্রীকে তারই চুল দিয়ে বেঁধে ও দড়ি দিয়ে হাঁত বেঁধে রেখে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক আলোতে কয়েকজনকে চিনিতে পারে আমার স্ত্রী।

১২ সেপ্টেম্বর ভোরে প্রতিবেশি আলম শেখ, তার মা জোহরা ও সমছের সরদারসহ কয়েকজন তার স্ত্রীর বাঁধন খুলে দিয়ে মুক্ত করে। ১২ সেপ্টেম্বর জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে ওই দিন দুপুরে বাড়ি ফিরে তিনি ঘটনা জানতে পারেন। অভিযোগ নিয়ে কয়েকবার থানায় গেলেও পুলিশ তার মামলা নেয়নি। থানায় অভিযোগ দিয়েছেন এমন খবর পেয়ে নিজেদের বাঁচাতে গত বৃহষ্পতিবার শফি ও শুক্রবার ডাকাত ফয়সাল তাকেসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তালা থানায় মিথ্যা অভিযোগে ডায়েরী করেছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছেন। মামলা করলে ফল ভাল হবে না বলে তারা এখনো তাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জমি জবরদখলের নামে লুটপাট করা মেহগনি গাছ,বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও সোনার গহনাসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র লুটপাটকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, তার ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা, ষড়যন্ত্রকারি শফি, ফয়সাল, ফতেমা ও আসমত গাজীসহ সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, পুলিশ সুপার ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একইসাথে শফি ও ফয়সালের দায়েরকৃত মিথ্যা সাধারণ ডায়েরী তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জাহানারা বেগম।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফয়সাল সরদার ও শফি মোড়ল জানান, তারা কোন গাছ কাটা বা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নন। এক প্রতিবন্ধি নারীর জমি উদ্ধারের জন্য তারা সহায়তা করে যাচ্ছেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test