E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় হয়রানিমূলক মামলা থেকে বাঁচতে আদালতে মামলা

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২১ ১৪:২৮:৩৭
সাতক্ষীরায় হয়রানিমূলক মামলা থেকে বাঁচতে আদালতে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : কর্মস্থল থেকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়ে কৌশলে ৫৭ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ও ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে  সম্ভাব্য পরিকল্পিত হয়রানিমূলক মামলা থেকে বাঁচতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ দুই জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত রবিবার সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে তালা সহকারী জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক আয়েশা আক্তার মৌসুমী আগামি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদি তালা উপজেলার খলিলনগর গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী ছাত্রজীবনের বন্ধু আইনজীবী অ্যাড. হারুন অর রশীদের আইনজীবী সহকারি(মোহরার) হিসেবে তালা সেটেলমেন্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন। ২০১৬ সালের ৯ মে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ফরিদ হোসেন যোগদান করেন। এরপর থেকে তালা সেটেলমেন্ট অফিস চত্বর থেকে মোহরার ও আইনজীবীদের সেরেস্তা অপসারনের উদ্যোগ নেন। তার সেরেস্তা তুলে দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন গত তারিখে তাকে একটি নোটিশ করেন। নোটিশটি তার ভাই শেখ শওকত হোসেন রিসিভ করে। এরপর সেরেস্তা অপসারন না করার জন্য তিনি ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। উপায়ন্তর না দেখে তিনি গত বছরের ১৩ আগষ্ট খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান রাজুর মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। পরবর্তীতে তিনি নিজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর আরো ২৭ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে আবারো টাকা চাওয়ায় তিনি তার সেরেস্তা তুলে নেন।

শেখ মোহাম্মদ আলী আরো জানান, টাকা চেয়ে না পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দক্ষিণ নলতা গ্রামের জিন্নাত উল্লাহ’র ছেলে দালাল মফিজুল ইসলামকে দিয়ে তার (মোহাম্মদ) কাছে ৬৫ হাজার টাকা পাওনা আদায়ের একটি মিথ্যা অভিযোগ করান। এ গত ছয় সেপ্টেম্বর ধার্য দিন দেখিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করানো হয়। যদিও গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে হাজির হতে বলা হয়। তিনি ওই দিন অসুস্থ থাকায় সময়ের আবেদন করলে গত ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার দিন ধার্য করা হয়।

উপজেলার এক প্রভাবশালী সাবেক চেয়ারম্যান বামপন্থী দল থেকে বহি®কৃত হয়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগদানকারি বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন হত্যা মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামী নেপথ্যে থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদণ্ড দেওয়ার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিষয়টি তিনি জানতে পেরে হয়রানিমূলক মামলা থেকে বাঁচতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন ও দক্ষিণ নলতা গ্রামের মফিজুল ইসলামের নামে গত রোববার আদালতে(দেঃ- ৯৬/১৭ নং) মামলা করেন।

শেখ মোহাম্মদ আলী জানান,এছাড়াও ইউএনও ফরিদ হোসেন এলাকার নিরিহ মানুষের কাছে বিভিন্ন সময়ে টাকা দাবি ও আদায় করে আসছেন। টাকা না দিলে তাদেরকে আটক করে মিথ্যা ভ্রাম্যমান আদালতে জেলে পাঠাচ্ছেন।দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় কেশবপুর উপজেলার সরুটিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মঞ্জরুল ইসলামের ইজারাকৃত তালার ইসলামকাটির মাছের ঘের বেদখল করানো, জনতা ব্যাংকের তালা শাখার ভবন মালি কুমারেশ ঘোষের কাছ থেকে দু’ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার পরও আবারো টাকা না দিলে জায়গা বেদখল করিয়ে দেওয়া, তালা সদরের ব্যবসায়ি হারান সাধুর কাছ থেকে দু’ লাখ টাকা নেওয়ার পরও তার নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে দু’ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া ,মেলায় পুতুল নাচের নামে নগ্ননৃত্য ও জুয়া সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করায় সাংবাদিক মাহবুবর রহমানকে কারাগারে পাঠানোসহ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ওই মন্ত্রণালয়ের সচীবসহ বিভিন্ন দপ্তরে গণদরখাস্ত করা হয়। ৬৬ জন সাক্ষরকারির মধ্যে ৫৫ নং ক্রমিকে তার স্বাক্ষর রয়েছে।
জানতে চাইলে তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, আপনারা এলাকায় এসে যে কোন মানুষের কাছে জানতে চাইলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তারা কিভাবে হয়রানি হচ্ছেন তা জানতে পারবেন। বুধবারও খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি গ্রামের একজনকে ছয় মাসের হয়রানিমূলক জেল দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে মোবারকপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমকে গত ১৩ আগষ্ট এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হয়রানি সহ্য করতে না পেরে তালা বাজারের বেশ কয়েকজন চা বিক্রেতারও হাঁড়ি সিকেয় উঠেছে। এ সবের প্রতিবাদ করায় তিনি তার (সনৎ) বিরুদ্ধে ১৩ জায়গায় অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ ও শেখ মোহাম্মদ আলীর দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে বুধবার রাতে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, বক্তব্য দেওয়ার কিছু নেই। কেউ মামলা করলে আদালতে বা অভিযোগ করলে তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে তা প্রমাণ করতে হবে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তার নামে মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে। যে মামলা করেছে সে অনুমতি নিয়েছেন কি না তা তার (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) জানা নেই।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test