E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় স্কুল ছাত্রীর আত্মহননে প্ররোচনা

পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২২ ১৫:০৮:০৯
পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামে ১০ম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীর আত্নহননে প্ররোচনা মামলায় মূল আসামীদের বাদ দিয়ে পুলিশ সাধারণ মানুষকে আটক করে গ্রেফতার বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। টাকা দেওয়ার পরও অনেকেই রাতে ঘরে থাকতে পারছেন না।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে কোচিং মাষ্টার রেজাউল ইসলাম ওরফে নজু মাষ্টারের সঙ্গে বল্লী গ্রামের বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী রিমা খাতুনের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গত ২৫ আগষ্ট রাত আটটার দিকে পড়ানোর সময় ঘরের মধ্যে আটকের পর শালিসি সভায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ওই কোচিং মাষ্টারের।

শালিসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি বল্লী গ্রামের সাবেক সেনা সার্জেন্ট মিজানুর রহমামের কাছে ২৭ আগষ্টের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে নজু মাষ্টারকে তার স্বজনদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। শালিসে গালিগালাজ ও জরিমানার অপমান সহ্য করতে না পেরে রাতে বড় চাচীর ঘর থেকে উঠে শনিবার ভোরের দিকে বাড়ির উঠানের আমগাছে ঝুলে আত্মহত্যা করে রিমা।

রিমার মা ফজিলা খাতুন মেয়ের আত্মহত্যার জন্য আনছার খাঁ, তার ছেলে মহব্বত ও শালিসদারদের দায়ী করে পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি দেন। এ ঘটনায় সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারি সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক মীরাজ হোসেন ২৬ আগষ্ট কম্পিউটার কম্পোজকৃত একটি কাগজে মৃতের ভাই রনি হাসানের কাছ থেকে সাক্ষর করিয়ে নেন । মূল শালিসকারক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মিজানুর রহমানকে বাদ দিয়ে মুকুন্দপুর গ্রামের পুলিশের সোর্স আবুল কালাম ও বল্লী গ্রামের ভ্যান চালক হাফিজুর রহমানসহ আটজনকে আসামী করা হয়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মীরাজ হোসেন ও উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করে কালাম ও হাফিজুরকে। আটকের পর তা অস্বীকার করে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রাখা হয় তিন দিন। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ২৯ আগষ্ট তাদেরকে আদালতে এনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জিজ্ঞাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন করে পুলিশ।

এদিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এজাহারে উল্লেখিত ৮নং আসামী বল্লী গ্রামের শফিকুল ইসলামকে খুঁজতে থাকেন। ২৮ আগষ্ট দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে তিনি ওই গ্রামের এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শফিকুল ইসলামকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওই মামলায় চালান দেওয়ার নামে থানায় নিয়ে আসার পথে কদমতলা বাজারের পাশে নলকুড়া মোড়ে একটি দোকানের বারান্দায় আটকে রাখেন। ভাইপো বাবলু উপপরিদর্শক মীরাজকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে তার চাচা শফিকুলকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপর উপপরিদর্শক মীরাজ হোসেন ছাতিয়ানতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে মোবাইলে তার উপস্থিতি জানান দেন।

গত ১২ সেপ্টেম্বর মীরাজ হোসেন ছাতিযানতলা গ্রামে আসামী রেজাউল ইসলামের বাড়িতে যান। সেখানে তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের উপর অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন তিনি। ছেলেকে না পেলে বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি। এক পর্যায়ে আসামী ধরতে আসার আগে বাড়ির লোকজনদের মোবাইলে জানিয়ে দেওয়ার শর্তে রেজাউলের ভাই হাফিজুরের কাছে ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার সন্ধ্যার মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

হাফিজুর রহমান জানান, যোগাড় করতে না পারায় মোবাইল ফোনে জানানোয় পুলিশ কর্মকর্তা মীরাজ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাড়িতে এসে তার বাবা আব্দুল বারিকে থানায় ধরে নিয়ে যান। একপর্যায়ে সোমবার থানায় যেয়ে ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামের মধ্যেমে বাবার মুক্তির জন্য ৪০ হাজার টাকা দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে। এরপরও তাকে ছেড়ে না দিয়ে সোমবার বিকেলে ৩৪/৬ ধারায় ননএফআইআর ২১৪ নং মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় তার বাবা জামিনে মুক্তি পায়। আবারো পুলিশ হানা দিয়ে ভাইকে না পেয়ে তাকে বা পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে টাকা আদায় করতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা রাতে বাড়ি থাকেন না।

ঝাউডাঙা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি তার প্রতিবেশী আব্দুল বারীর ছেলে রেজাউলকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলেন মাত্র। তিনি কোণ শালিস করেননি। অথচ পুলিশ টাকার জন্য অহেতুক তাকে হয়রানি করছে। বিষয়টি তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান আজমল হোসেনের মাধ্যমে উপপরিদর্শক মীরাজকে অবহিত করা হলে তিনি তাতে কান দিচ্ছেন না। একপর্যায়ে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন।

মৃতের মা ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, পুলিশ মূল আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদেরকে ধরছে না। উপরন্তু বল্লীর শফিকুল ইসলাম, ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারি ও সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে একের পর এক হয়রানি করে চলেছে।

জানতে চাইলে সদর থানার উপপরিদর্শক মিরাজ হোসেন তার বিরুদ্ধে কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, অজ্ঞাতনাম আসামী হিসেবে যারা ওই শালিসে ছিলেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন তাদেরকে খোঁজা হচ্ছে। কালাম ও হাফিজুলবাদে অপর এজাহারভুক্ত আসামীরা পলাতক রয়েছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test