E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আন্দোলনের জন্য ঘর গোছাতে পারেনি বিএনপি

২০১৪ জুলাই ০২ ১৩:৩০:৩৬
আন্দোলনের জন্য ঘর গোছাতে পারেনি বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য যে সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন তা এই মুহূর্তে নেই বলে মনে করছেন অনেকে।

আন্দোলনে নামার আগে দল পুনর্গঠনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দল পুনর্গঠনের কাজে এগোতে পারেনি বিএনপি।

তবে দলীয় সূত্র জানায়, এবার নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলন গড়ে তুলতে দল গোছানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দলের বেশ কিছু সাংগঠনিক জেলা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে সেখানে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। আর সেই আহ্বায়ক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপান্তরিত করতে ৪৫ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪৫ দিন অতিবাহিত হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের কারো কোনো আগ্রহ নেই। এমনকি যারা এতো দিন কমিটিতে ছিল না তাদের একটি অংশ আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন মামলা মোকদ্দমার অজুহাত এনে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, দলের চেয়ারপারসনের উচিত হবে দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করে হারানো চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা। এরপর যতদ্রুত সম্ভব দলের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা। আর তাতেই ফিরে আসতে পারে দলের নেতাকর্মীদের হারানো মনোবল।

তিনি বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যদি দল গোছানোর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন তবে তা দলের জন্য খারাপ হবে। আর এর প্রভাব পড়বে আগামী দিনে সরকার পতন আন্দোলনে। কেননা আগের আন্দোলন ছিল একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এখন আন্দোলন করতে হবে একটি ক্ষমতাসীন দলকে (যেভাবেই হউক ক্ষমতায় রয়েছে) ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হলে দলকে সুসংগঠিত করার বিকল্প নেই। আর এজন্য রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও যোগ্য তাদেরই দায়িত্ব দিতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন শুধু মুখে মুখেই থেকে যাবে।

দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মীর মতে, অচিরেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিকেও সংস্কার করতে হবে। কেননা নির্বাহী কমিটিতে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কেবল আন্দোলন সংগ্রাম নয়, রাজনীতি থেকেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত রেখেছেন।

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, দলের অনেক নেতাই মনে করেন আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের পাশাপাশি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আন্দোলন সফল করতে মনোনিবেশ করতে হবে।

এদিকে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে যেমন আন্দোলন প্রয়োজন, তেমনি আন্দোলন সফল করতে হলে সাংগঠনিক পুনর্গঠনও প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দল পুনর্গঠনের আগে আন্দোলনে নামলে তা সফল হবে না। অথচ আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও তা পুনগঠনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, দলের এ অবস্থার পরিবর্তন ও দলকে সারা দেশে চাঙ্গা করতে হলে আর সময় নষ্ট না করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় দক্ষ, যোগ্য ও সক্রিয় লোকদের নিয়োগ দিতে হবে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রোজার ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মূল উদ্দেশ্য হলো আগামী জানুয়ারির মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের টার্গেটে সফল হওয়া। যার সত্যতা মিলে সম্প্রতি ফেনী সফরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু আয়োজিত পথ সভার বক্তব্যে।

তিনি বলেন, বিএনপি আগামী জানুয়ারির মধ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে ঈদের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত হচ্ছে। আর এ জন্য আমাদের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এখন সবাই তাকিয়ে রয়েছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের দিকে।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এখনো আন্দোলনের মতো উপযোগী করে দল গোছানো দূরের কথা, আন্দোলনের মূল জায়গা ঢাকা মহানগরীতেই কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন তো আকাশকুসুম কল্পনা।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারিতে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। তাই দল গোছানো থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক লবিং তদবির জোরদারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে এ লক্ষ্য অর্জনকে কেন্দ্র করেই। জনসমর্থন আদায়ে নেওয়া হচ্ছে রমজানে ইফতার উপলক্ষে নানা পেশাজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও কূটনৈতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করে।

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও দলীয় প্রধানের সঙ্গে প্রতিদিনই কণ্ঠ মেলাচ্ছেন কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের আহ্বানে।

এ ব্যাপারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটাতে হলে প্রধান নিয়ামক হতে হবে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভীত। নিজেদের কোমরে জোর না থাকলে অন্য কেউ এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে এমন আশা করা উচিত নয়। তাই সাংগঠনিক শক্ত ভীতের সঙ্গে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ জনমত।


(ওএস/এটিআর/জুলাই ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test