E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রমজানে সাধারণ মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ, রমরমা ইফতার পার্টি বিএনপির

২০২৪ মার্চ ১৩ ১৮:৪১:৫০
রমজানে সাধারণ মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ, রমরমা ইফতার পার্টি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার : রমজানের প্রথমদিনেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে দুইদল। বরাবরের মতো এবারও রোজার মাসে  বিএনপির সাংগঠনিক ব্যস্ততা বেড়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা স্তরে পাঁচশ’র বেশি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে বিএনপি। যার শুরুটা হয়েছে প্রথম রোজা থেকেই। অন্যদিকে রোজায় ‘মানবসেবা’মূলক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি এবার পুরো রোজায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দরিদ্রদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করছে। রোজার শেষ সপ্তাহে ঈদসামগ্রীও বিতরণ করা হবে।
 

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, রমজান মাসে আলোচনা সভা ও ইফতার ‘পার্টির’নামে বিকৃত ভোগবাদী সংস্কৃতি ধর্মীয় ঐতিহ্যকে বিতর্কিত করে। রাজনীতির জন্য লোক দেখানো ইফতার ‘পার্টি’ না করে সেই অর্থ গরবী অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করলে আল্লহ বেশি খুশি হবেন। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি বরাবরই ধর্মকে নিজেরদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। যেখানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে সেখানে বিএনপি বড় বড় হোটেলে ইফতার ‘পার্টির’ আয়োজন করে মানুষের সাথে তামাশা করছে।

মঙ্গলবার রোজা শুরুর দিনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা স্তরে পাঁচশ’র বেশি ইফতার আয়োজন করেছে বিএনপি। এইদিনেই রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং দলের সিনিয়র নেতারা এতিম, আলেম ও ওলামা মাশায়েখদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার করেন। সেখানে মেন্যু হিসেবে ছিল- খেজুর, ফল, পেয়াজু, বেগুনি, ছোলা, জিলাপি, জুস, ডিমসহ মোরগ পোলাও রোজার মাসে রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকলেও ইফতার ‘পার্টি’র নামে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিতে নানামুখী সংকটের কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ ও হতাশা কাটিয়ে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চান তারা।

এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক জানিয়েছেন, এবার ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতার আয়োজন করা হয়েছে।

ঠিক বিপরীত দিকে অসহায়-ছিন্নমূল ও গরীব মানুষের কথা চিন্তা করে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে কোনো ইফতারের আয়োজন না করার কথা রোজা শুরুর আগেই জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ এবার তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোথাও ইফতার মাহফিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইফতার আয়োজনের সকল অর্থ অসহায়-গরিব মানুষের মাঝে সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে।

রমজানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা রমজান ইফতার পার্টি করতাম। এবার রমজানে আমরা ইফতার পার্টির না করে সব টাকা ও খাদ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণে কাজ করি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দলের নেতারা। তারা মনে করছেন, এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়াবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো কোন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবেন না। সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করবেন।’তিনি আরও বলেন, ‘রমজান সংযমের মাস। রমজান মাসে কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা দেশের জনগণকে কোনোভাবেই স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না। আমরা আগেই বলেছি, রমজানে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’

মানবিক সহয়তা নিয়ে মাঠে সহযোগী সংগঠনগুলো :
পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সারাদেশের নেতাকর্মীদের আটটি নির্দেশনা দিয়ে মাঠ থাকার নির্দেশ দিয়েছে সংগঠনটি। এরমধ্যে- শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার ও সেহরি বিতরণ; বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবারপ্রাপ্তির বিষয়ে যত্নশীল হওয়া; কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষকে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে সহযোগিতা করা; রমজান মাসে স্বেচ্ছা রক্তদান; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দলীয় কার্যালয় ও নিজ নিজ এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা; সহপাঠী, সহকর্মী, প্রতিবেশী ও স্বজনের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো এবং এতিম ও পথশিশুদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘উৎসব-আয়োজন বা প্রাকৃতিক-মানবসৃষ্ট যে কোনো প্রয়োজনে ছাত্রলীগ সর্বদা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অতীতের মতো এবারও রমজান মাসে ছাত্রলীগ ছাত্রসমাজ, জনতা, শ্রমজীবী মানুষের পাশে প্রয়োজন সাপেক্ষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’

রমজান উপলক্ষে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সারাদেশে অসচ্ছল মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ বলেন, পবিত্র রমজান মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন ইফতার মাহফিলের আয়োজন না করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে আমরা দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছি।’

রোজাদারদের পারস্পরিক সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে রমজান মাসের রোজার ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইন বলেন, ‘একজন রোজাদার ব্যক্তি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে গরিব-দুঃখীদের অপরিমেয় দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখার মধ্য দিয়ে সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন ও তাদের জন্য সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের দান-খয়রাত, জাকাত-সাদকা প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।’

বিশ্লেষক ও গবেষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিএনপি বারবার অভিযোগ তুলে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই ভয়াবহ যে দেশের রোজাদাররা সামান্য ইফতারটুকু করারও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। অথচ তারা লাখ লাখ টাকা খরজ করে বড় বড় ইফতার পার্টি করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে এটি না করে, সেই অর্থ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারতেন। কিছুটা হলেও গরীব মানুষের উপকার হতো। কিন্তু বিএনপি কখনও সেটি করে না, নিজেদের স্বার্থ তাদের কাছে সবচেয়ে বড়।’

(ওএস/এএস/মার্চ ১৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test