E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাষাঢ়া বোমা হামলা দিবস ১৬ জুন

দুই মামলার চার্জশীট দিলেও বিচার ঢিমেতালে

২০১৫ জুন ১৫ ২০:০৭:২০
দুই মামলার চার্জশীট দিলেও বিচার ঢিমেতালে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলার ১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে ১৬ জুন মঙ্গলবার।

চাঞ্চল্যকর এ বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা ২টি মামলায় আদালতে চার্জশীট দেওয়া হলেও বিচার কাজ চলছে ঢিমেতালে। এখন চলছে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণের কাজ।

নারায়ণগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কে এম ফজলুর রহমান জানান, সবশেষ গত ১০ জুন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বোমা হামলার ২টি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনের মামলার চার্জ শুনানি ও হত্যা মামলায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

তবে সেদিন মামলার গ্রেপ্তারকৃত ২ আসামী মুফতি হান্নান ও শাহাদাতউল্লাহ জুয়েলকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আগামী ৩০ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন এ ২ জনকে হাজির করতে কারাগারের ডিআইজি প্রিজনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, সঠিকভাবেই মামলার বিচারকাজ চলছে।

এদিকে ১৪ বছর ধরে নিহত ২০ পরিবারের লোকজন চোখের অশ্রু ফেললেও তাদের অনেকের অভিযোগ, রাজনৈতিক কূট কৌশলের ফাঁদে মামলা পাল্টা মামলায় আপনজন হারিয়েও মামলা করতে পারেনি স্বজনরা। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘাতকদের বিচার কাজটি সম্পন্ন হয়নি আজও।

জানা গেছে, ২০০১ সালের ১৬ জুন ভয়াবহ বোমা হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা ২টি মামলায় ২০১৩ সালের ২ মে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চার্জশীট আদালতে জমা দেয়। এ দুটি মামলা মামলায় বাদীসহ ৭ জনকে সাক্ষী করা হলেও গত ২১ জানুয়ারি বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পূরক চার্জশিটে আগের চার্জশিটভুক্ত আসামি অভিন্ন রেখে শুধুমাত্র সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। সম্পূরক চার্জশীটে ৮ জন তদন্তকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

চার্জশীটভুক্ত ৬ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ছোট ভাই শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ও হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান গ্রেপ্তার রয়েছেন। পলাতক রয়েছে ওবায়দুল্লাহ রহমান। ভারতের দিল্লী কারাগারে আটক রয়েছেন সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুত্তাকিন। আর জামিনে আছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।

মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপি নেতা আনিসুল ইসলাম সানি, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, নুরুল ইসলাম সরদার, সুরুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ শ্যামল, অকিলউদ্দিন ভূইয়া, মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মনিরুল ইসলাম রবি, ক্যাপ্টেন দুলাল, তুষার আহমেদ মিঠু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, সহ-সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, সামসুল ইসলাম মিঠুসহ ৩১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১৬ জুন শহরের চাষাঢ়াস্থ আওয়ামী লীগ অফিসে দেশের ভয়াবহ নৃশংস বোমা হামলায় মারা যান ২০ জন হতভাগ্য। সেদিন আহত হয়েছিলেন প্রায় অর্ধ-শতাধিক যাদের অনেকেই বরণ করে নিয়েছেন পঙ্গুত্ব, কেঁদে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জবাসী।

ঘটনাস্থলে ১১ জন ও পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ৯ জন সহ মোট মৃত্যু ঘটে ২০ জনের। এদের মধ্যে ১৯ জনের পরিচয় সনাক্ত করা হলেও পরিচয় মেলেনি ১ মহিলার। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এই ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে আজও শিহরিত হয়ে উঠে এখানকার মানুষ।

সেদিন নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা। নিহত মহিলার পরিচয় পেতে তেমন কোন চেষ্টা করেনি প্রশাসন। হামলায় শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। তার ব্যক্তিগত সচিব চন্দন শীল ও যুবলীগ কর্মী রতন দাস দুই পা হারিয়ে চিরতরে বরণ করেছে পঙ্গুত্ব।

বোমা হামলার পরদিন খোকন সাহা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ২টি মামলায় (একটি বিস্ফোরক, অন্যটি হত্যা) জেলা বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি) অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান করে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলের মোট ২৭ জনকে আসামী করা হয়।

মামলার আসামীরা হলেন জেলা বিএনপি নেতা আনিসুল ইসলাম সানি, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, নুরুল ইসলাম সরদার, সুরুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ শ্যামল, অকিলউদ্দিন ভূইয়া, মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মনিরুল ইসলাম রবি, ক্যাপ্টেন দুলাল, তুষার আহমেদ মিঠু, কাউন্সিলার শওকত হাশেম শকু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, সহ-সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, বদিউজ্জামান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম, সামসুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ।

ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বোমা হামলা ট্রাজেডির মামলা ২টির ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়, ‘উল্লেখিত ২৭ জনের কেউই চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে ১৬ জুন ২০০১ সালের বোমা হামলায় জড়িত নয়। যদি ভবিষ্যতে অত্র মামলার তথ্য সম্বলিত ক্লু পাওয়া যায় তবে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।’

দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর মামলাটি হিমাগারে থাকার পর সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে আদেশ দেয়।

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘটনায় নিহত চা দোকানী হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামী করে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেয়।

(ওএস/পিএস/জুন ১৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test