E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগমনী চক্রবর্তী’র দুটি কবিতা

২০২০ জুন ২৫ ১৩:৪১:৩২
আগমনী চক্রবর্তী’র দুটি কবিতা







 

স্বপ্নচূড়া


স্বপ্ন সৃষ্টি, স্বপ্ন উল্লাস, স্বপ্ন বিধ্বংসী,
কোন স্বপ্নে উল্লসিত মোরা দিবানিশি?
স্বপ্নঘেরা জীবন মোদের, স্পর্শ পেতে চায় স্বপ্নশিখরের,
পরিসমাপ্তি কিন্তু পায় না সেই নিভৃত স্বপ্নচারী।
উত্তাল জীবনের স্রোতে দেখেছিলাম স্বপ্ন...
অথচ ভেঙে চুরমার, নিমেষেই।
হতভাগ্যদের চোখের জল মুছে দেওয়ার স্বপ্ন,
কলঙ্কশূন্য জাতিকে পাশবিক নির্যাতন থেকে বাঁচানোর স্বপ্ন,
নির্বাকের মুখে ভাষা জাগানোর স্বপ্ন.....
যেন, " কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন! ", এমন...
স্বপ্ন দেখিয়েছে তবু বিন্দুর মাঝে সিন্ধুতে অবগাহন।
নিদাঘ বাস্তবতায় স্বপ্নকুঠুরি কেবলই চিলেকোঠায় বন্দী...
হয়ত প্রহরীর বেশে কোনো বিষধর সর্প,
যা কিনা নিদারুণ ছোবলের অপেক্ষায়।
গতিময় জীবন ক্লান্তিশেষে রিভিউ করতে চায়
তার গতিময়তা..
পৃষ্ঠা উল্টাতেই থেমে যায় স্বপ্নচারী৷
কেননা, পরের পৃষ্ঠায় অপেক্ষারত
স্বপ্নভঙ্গের কালো ছোঁয়া।
তাই তো জীবনকে সর্বাংশে উল্টিয়ে দেখা হয় না।
দুঃখের সীমান্তে স্বপ্নকে দেখা যায় খুব কাছ থেকে...
ভাবি, এই বুঝি স্বপ্নচূড়া, যার নাম " সুখ "।
কিন্তু বাস্তবতা হাতছানি দিয়ে,
আবারো বন্ধুত্ব করিয়ে দেয় স্বপ্নের সাথে।
বলে, " সামনে অনেক পথ। "
তিলে তিলে গড়ে ওঠা শাহজাহানের স্বপ্নের তাজমহল
মমতাজের কথা বলে।
স্বপ্ন দেখে কত শাহজাহান, কত মমতাজ নিয়ে।
কিন্তু, বাস্তবে ক'জনই বা পারে তাজমহল বানিয়ে
স্মৃতির মিনার সাজাতে?
পুতুলের বিয়ে দেওয়ার কিশলয় থেকে
সংসারী হয়ে ওঠার স্বপ্ন, সে তো কম তাজমহল নয়!
যদিও বহিরঙ্গ দেখা যায় না,
তা কেবলই মনের স্মৃতির মিনার।
ছেলেবেলায় স্বপ্নে পাওয়া কাঁচের মার্বেলও ছাড়িনি,
স্বপ্নেই লেগে যেত মহাযুদ্ধ।
ঘুমের ঘোরে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতাম হাতের মার্বেলকেও।
জেগে দেখি, " কোথায় মার্বেল? "
পরক্ষণেই ভাবলাম, " ওও.... স্বপ্নের খুনসুটি!"
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় একদিন পড়ার টেবিলে,
গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম।
হঠাৎ, সজোরে টেবিলে মাথায় ধাক্কা খেয়ে ঘুম ভেঙেছে।
এ তো স্বপ্ন!
রিয়াল লাইফে সেই আমি তো সেকেন্ড মাস্টার!
স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন ...-- স্বপ্ন কৃত্রিম, মেনে নিই।
স্বপ্নের হাত ধরে পথ চলি মোরা,
বাস্তবতার কর্কশ পদচারণায় ভূ-লুণ্ঠিত হই,
আবারও আড়চোখে দেখি স্বপ্নচূড়া।
পৌঁছে যাই বাস্তবতার ভাঙ্গা কুটিরে,
যেখান থেকে চাঁদের আলোয় ঝলকিত আগামীর পথচলা।
তাই তো আমরা অনেক ঋণী স্বপ্নের কাছে।

সংসার

"সংসার" শব্দটি বিশ্লেষণে --
"সং" রঙ্গ, "সার" প্রকৃষ্ট ফল।
আনন্দের মাঝে কষ্ট,
সংসার একটা জটিল জালের ভ্রম।
কখনো মেঘ, কখনো রৌদ্র
আলো-ছায়ার খেলা,
জীবন এক তরঙ্গভেলা।
সৃষ্টির মাঝে ধ্বংস, অনুভবে-উপলব্ধিতে,
এ যেন এক রঙের মেলা।
বিশৃঙ্খল অথবা সুসজ্জিত রঙ্গমঞ্চে,
সুকৌশলী অভিনেতা মোরা ...
পরিস্থিতির কারণে আবার,
কূটকৌশলে ভরা।
শৈশবে মায়ের আদর,
কৈশর-যৌবন যেন স্রোতস্বিনী নদী...
সেই আমরাই ফিরে যাই আবার
সন্তান গড়ায় নিরবধি।
ভূমিষ্ট শিশুর শুভাগমনে আনন্দ-উল্লাস,
পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের নিদারুণ কষ্ট.....
এ যেন এক জীবন-মৃত্যুর এক মহাযজ্ঞ ।
সুখ-দুঃখ, ঝড়-ঝঞ্ঝা....
সবই যেন দর্পণের মত,
মিথ্যার দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমরা
ক্লান্ত অবিরত।
আশায় বসতি - এই আশ্বাসে
চলে জীবনধারায়,
নাটকের অঙ্ক বুঝে দিই আমরা
গ্রন্থিমোচনের পালায়।
অপূর্ণ জীবন....
"অনেক চাই" - এই ব্রত মোদের,
আসলে যতটুকু পাই, তাও যেন না হারাই-
কর্মে ও নিষ্ঠায়, মানবের মাঝে দিয়ে যেতে চাই।
রিপুর দুয়ারে না-ই বা পেলাম ষোলো আনা,
যন্ত্রের কল করে পাঠিয়েছেন যিনি,
বর-খেলাপ না করি যেন
তাঁর (মহান স্রষ্টার) হলফনামা।
নিজেকে বিলিয়ে পরার্থে তবু
বাঁচি কিছুক্ষণ,
নইলে বিশ্বে বিস্মৃত হবে -
"সংসার" নামক রসাস্বাদন।
তবুও মানুষ বারবার ফিরে পেতে চায়
"সংসার"-আস্ফালন।



প্রভাষক (বাংলা)
চাটমোহর মহলিা ডগ্রিি কলজে,
চাটমোহর, পাবনা।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test