E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সামাজিক মাধ্যমে কবি-লেখক-প্রকাশকদের প্রতিবাদের ঝড়

২০২০ ডিসেম্বর ১২ ১৭:৪২:৫৭
সামাজিক মাধ্যমে কবি-লেখক-প্রকাশকদের প্রতিবাদের ঝড়

স্টাফ রিপোর্টার : করোনার কারণে আগামী বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। তবে প্রতিষ্ঠানটির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছে না বিভিন্ন লেখক ও প্রকাশকরা।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে কথা বলেছেন অনেকেই। তাদের অনেকে যেমন বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে লিখেছেন, অনেকেই আবার লিখেছেন না হওয়ার পক্ষেও। অনকেই আবার দিয়েছেন পরামর্শ।

এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান তার একটি পোস্টে বইমেলা না হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘কয়েকটি টিভি ও অনলাইন মিডিয়ায় দেখলাম, বইমেলা এবার হচ্ছে না। স্থগিত হবে। মেলা নাকি এবার ভার্চ্যুয়ালি হবে। ভার্চ্যুয়াল বইমেলাটা কী জিনিস? এখানে কি বই বিক্রি হবে? ভার্চ্যুয়ালি বই বিক্রির জন্য তো রকমারি.কম আছে। আরও অসংখ্য অনলাইন বই বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে। পাঞ্জেরী, পাঠক সমাবেশ, বাতিঘরসহ অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বই বিক্রি করছে। বাতিঘরের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করলে বই বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। তাহলে ভার্চ্যুয়াল বইমেলার আলাদা বিশেষত্ব কোথায়?’

তিনি লেখেন, ‘... কিছুই তো বন্ধ না। সবই চলছে। শুধু স্থগিত হবে বইমেলা। কেন? কোন যুক্তিতে? যুক্তি দিন। মেনে নেবো। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শীত বিদায় নেয়। শীতে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। গরমে আবার কমবে, আশা করা যায়। মার্চে গরম থাকে। বইমেলা তো মার্চেও করা যেত। এক মাস না করে পনেরো দিনও করা যেত। কিংবা সীমিত আকারেও করা যেত। তা না করে স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা হোক। মার্চে হলেও হোক। করোনার কারণে বন্ধ করে দিলে সব বন্ধ করে দিন। লকডাউন দিয়ে দিন। নৌকায় অসংখ্য ফুটো। সব ফুটো খোলা রেখে পানি ঠেকানোর জন্য একটা ফুটো বন্ধ করা হাস্যকর। দেশের সব খোলা থাকবে, কিছু বন্ধ থাকবে, এটা সমর্থনযোগ্য নয়। একজন লেখক হিসেবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’

শীত শেষে বসন্তে বইমেলা করার আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্ট লেখক আনিসুল হক একটি পোস্টে লিখেছেন, ‌‘শীতকাল চলে গেলে বসন্তকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা করুন। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ। ’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বেহুলা বাংলার প্রকাশক চন্দন চৌধুরী লিখেছেন, ‘বইমেলা ভার্চ্যুয়ালি করা গেলে বিপণিবিতান, রাস্তাঘাট, খাবারদাবারও ভার্চ্যুয়ালি করা যেতে পারে! কারা এবার বইমেলার বিরুদ্ধে? কয়েকটি বিষয় মাথায় নিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে-

১. যারা বইমেলা চায় না তারা বাংলা ভাষা, অমর একুশ, বাংলা সংস্কৃতি কতটা চায়!
২. তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজন কতটা চায়!
৩. তারা স্বাধীনতার ৫০ বছরের উৎসব কতটা চায়!

যারা এসবের বিরোধী তারাই এবারের বইমেলার বিরুদ্ধে। কিছু বিপণিবিতানে ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকতে হয়, বাসে ধাক্কাধাক্কি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়; শুধু বইমেলাতে সমস্যা!’

কবি ব্রাত্য রাইসু তার এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সারা বছরে বাংলা একাডেমির একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ বইমেলা। এটা যদি না হয় তো বাংলা একাডেমিও তো হবে না। তাই না?’

বইমেলা না হলে টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশ করা প্রকাশকদের ক্ষতি হলেও জ্ঞানের ক্ষতি হবেনা উল্লেখ করে বিশিষ্ট লেখক সরকার আমিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বইমেলা না হলে এবার কিছু প্রকাশকের ক্ষতি হতে পারে, যারা টাকার বিনিময়ে বই বের করেন, জ্ঞানের ক্ষতি হবে না। ’

এদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত সময় উপযোগী বলে একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন ইত্যাদি প্রকাশনীর প্রকাশক আদিত্য অন্তর। তিনি তার পোস্টে লিখেছেন, ‘করোনাকালীন সার্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত সময় উপযোগী। তবে ভার্চ্যুয়াল মেলা সফল করার জন্য সঠিক পদক্ষেপও দরকার।

কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খোরশেদ মন্তব্য করেছেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি এবার নাকি বাংলা একাডেমির মাঠে ও তার লাগোয়া ময়দানে কোনো বইমেলা হবে না, হবে অন্তর্জালে তথা ভার্চ্যুয়াল পরিসরে। অজুহাত করোনার, অথচ করোনার কারণে দেশে কোথাও কিছু থেমে নেই; থাকলে তো ভালোই হতো, আমাদের এত এত লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিজন, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ পেশাধারী, আমলা, রাজনীতিবিদদের আক্রান্ত হয়ে বেঘোরে মৃত্যুবরণ করতে হোতো না, যেমনটি হয়নি পৃথিবীর আর কোনো দেশে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের দীর্ঘদিনের গৌরবময় ঐতিহ্য, তদুপরি এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে এই মিলনমেলার। অতএব কোনো অবস্থাতেই একে পুরোপুরি বন্ধ না করে, পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত আঙ্গিক ও পরিসরে আয়োজনের জোর দাবি জানাচ্ছি। ’

এসময় তিনি বইমেলা পুরোপুরি বন্ধ না করে, পরিবর্তিত আঙ্গিক ও পরিসরে আয়োজনের দাবি জানান। এ লক্ষ্যে তিনি কিছু সুপারিশমালাও পেশ করেন। এগুলোর মধ্যে ‘মেলা কম দিনের জন্য করা, সেটা বারো থেকে পনেরো দিনের জন্য হতে পারে; মেলায় কম স্টল রাখা এবার, যাতে করে দুই স্টলের মধ্যবর্তী দূরত্বটুকু বেশি রাখা যায়; স্টলসমূহের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখা; স্টলে কম বই রাখার, ধরুন কেবল গত তিন বছরে প্রকাশিত বইসমূহ, বিধান করা, যাতে করে ক্রেতাদের বই দেখার জন্য তেমন গা ঘেঁষাঘেঁষি করতে না হয়; চারদিক খোলা স্টল করার বাধ্যবাধকতা রাখা; বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ রাখা, যাতে করে পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে মেলায় প্রবেশ করা যায়; মেলায় প্রবেশ করার সময় তো বটেই, মেলার ভেতরেও মুখবন্ধনী পরা বাধ্যতামূলক করা এবং তার জন্য যথেষ্ট নজরদারির ব্যবস্থা রাখা; একটা ন্যূনতম প্রবেশমূল্য, ধরুন দশ টাকা, ধার্য করা, যাতে করে অপাঠক ও অকারণ প্রবেশকারীদের সংখ্যা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়; মেলায় বিনামূল্যে জীবানুনাশক ও মুখবন্ধনী বিতরণ করা, প্রয়োজনে তার জন্য এসবের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করা; খাবার স্টল সীমিতকরণ, একেবারে হাতে গোণা কয়েকটিকে কেবল অনুমোদন দেওয়া; মেলা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় অনুষ্ঠানামালা অনলাইন বা অন্তর্জালে আয়োজন করা; প্রবীণ, অসুস্থ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ পাঠকদের কথা বিবেচনা করে মেলার কিছু নির্বাচিত অংশ সমান্তরালভাবে অন্তর্জালে আয়োজন করা’ অন্যতম।

এর আগে শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলা স্থগিত করা হয়েছে। আপাতত ভার্চ্যুয়ালি মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ’

বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বাংলা একাডেমিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test