E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অকাল প্রয়াত কবি শান্তনু মনিরের ৭টি কবিতা

২০২১ মার্চ ২৩ ১৩:৫৩:২২
অকাল প্রয়াত কবি শান্তনু মনিরের ৭টি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক : কবি শান্তনু মনির, পত্রপত্রিকায় অনিয়মিত লেখক।মাঝেমধ্যে পরিচিত কোন লিটলম্যাগ সম্পাদকের সাথে দেখা হলে সম্পাদক নিজেই কয়েকটি কবিতা চেয়ে নেয়। ছাত্রজীবনে নিজেও একজন লিটলম্যাগ কর্মী, ছিলেন প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের ও কর্মী। মহাত্মা আহমদ ছফার নিকটতম আত্মীয়। গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়।

সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তী পুরুদমে উন্নয়ন কর্মী। সর্বশেষ একশন এইড এনজিও সংস্থার কক্সবাজারের দায়িত্বরত ছিলেন। তার সহকর্মীদের থেকে জেনেছি বান্দরবানে একশন এইড কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে কক্সবাজার ফেরার পথে গাড়িতেই স্ট্রোক করেন। গাড়িতে থাকা তার সহকর্মীরা দ্রুত চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। একদিন একরাত আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে আর পেরে উঠেননি।
১৮ মার্চ ২০২১ সালে সন্ধ্যা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমি অকাল প্রয়াত কবি'র আত্মার শান্তি কামনা করছি।

কবি শান্তনু মনিরের একটি যৌথ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে তার সহকর্মী কবি শ্যাম রণির সাথে।
এ বছর নিজের একক প্রকাশের জন্য পাণ্ডুলিপি গুছিয়েছেন শুনেছি,নিজের একক বই প্রকাশের আগেই কবি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার সাথে আমার পরিচয়ের অনুঘটক হচ্ছে আমার বন্ধু কথাসাহিত্যিক নুরুল আনোয়ারের মধ্য দিয়ে। সে যেহেতু নুরুল আনোয়ারের ভাগিনা তাই সেও আমাকে মামা ডাকে। কবি শান্তনু মনির কক্সবাজারের যে ক'বছর চাকুরী করেছে কক্সবাজারের প্রগতিশীল তরুণ ছাত্র সংস্কৃতি কর্মীদের আস্থা ভরসা বিশ্বাসের অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিনত হন। আমার ফেইসবুক মেসেঞ্জারে থাকা পাঁচটি কবিতা কবি শান্তনু মনিরের বন্ধু স্বজনদের জন্য প্রকাশ করে তার বিদেহী আত্মার শান্তি প্রার্থনা করছি। মানিক বৈরাগী।

খিদে

শরীর অবশ হয়ে গেলে খিদেয়,
দুমুঠো চাল ভগবান হয়ে ওঠে
ঘুচে যায় মৃত্যু ভয়,
সমান্তরাল দ্বান্দ্বিক ডাকে
জীবন মৃত্যু একই বিন্দুতে থিতু হয়।

শরীর অবশ হয়ে গেলে খিদেয়,
ঝরঝরে সাদা একমুঠো ভাতের হেলুশুলেশন
দু কদম হাঁটায়,
নষ্ট মানবতার কষ্ট বুকে পুষে
সব করতে মানুষ এক পায়ে দাঁড়ায়।

শরীর অবশ হয়ে গেলে খিদেয়,
পোদ মেরে ন্যাকা ভদ্রলোকের
ভাঙ্গনের মিছিল হয় শুরু সভ্যতার,
সব লাল চোখ জলে ডুবে যায়
দায়িত্ব হয়ে যায় তার তার যার যার।

শরীর অবশ হয়ে গেলে খিদেয়
নিরীহ এর হিংস্র থাবা বাঘের মত সম্মুখে রেখে
গর্জে ওঠে,
“ভাত দে হারামজাদা নাহলে মানচিত্র খাবো”
দু মুঠে।


চোরা নদী

চোরাবালির মত
ভেতরে একটা চোরা নদী পুষি
রক্ত স্রোত বয়ে যায় বুক ছিঁড়ে
সূর্য উঠে
অস্ত যায়
বদলায় রক্তের রং
হিমালয়ের মতো
ভেতরে কেঁদে চলি নিয়ত
ক্ষতবিক্ষত হই
উপরিপৃষ্ঠে সবুজের সমারহ
ভেতরে দহন
দহনে প্রেম
প্রেমে তলিয়ে যাই
ক্ষতবিক্ষত হই
বদলায় রং
বুকের ভেতর পুষি
একটি চোরানদী


উত্তরিও

কখন নিজেকে ভালোবাসার বৃত্ত থেকে বের হবো,
ভাঙ্গবো সামুদ্রিক উল্লাসে দু-চারটা রীতি নীতি।
কখন আমাকে বাদ দিয়ে বুঝবো তোমাকে,
আমিত্ব ছেড়েছুড়ে আমাদের করবো বরণ।
কখন কোকিল হবো ময়ূর খোলাস ভেঙ্গে,
কখন আমাকে ছেড়ে আমাদের হবো
নার্সিষ্ট প্রেম ভুলে।


হাতহদাই

গলির রাস্তাঘাট ঠিক যেমন ছিল তেমন আছে
ভোরে সূর্য ওঠে, রাতে হাজার তারার চকমকানি
মা আমারে একই রকম ভাবে ডাকে
ও ফুঁত হাইতো আয়, না পালটাইছে ভাষা না অনুভুতি
প্রতিদিনের মত চেনা জানা শার্ট প্যান্ট পরি
আরাম নিই
চেনা ব্রান্ডের, চেনা স্বজন , চেনা সবকিছুতেই নিজেরে ফিইরা পাই
অদ্ভুত লাগে, মনডা চাই, হাজার বছর বাঁইচা থাকি
হগ্গলের লগে, হাজার বছর
শরীর আত্মার মতন মিলে মিশে
একাকার হয়ে যায়,
লয় হইয়া যাই অদৃশ্যে, শরীর মাড়িয়ে অমর হই।

অদ্ভুত অনুভুতি, সময় মুহূর্তে ভাগ কইরা লন যায়
চিনন যাই, জানন যাই, নিজের আলাদা কইরা
সবুজ পাওন যায় নিজের মধ্য নিজের মতন কইরা।

তবু একদিন ঝড় আসে
খইসা পড়ে গাছের পাতা
অঝর ধারায় আসমানের চোখ ভাইসা যায়
অচেনা হইয়া যাই নিজের।

তারপর হঠাৎ দেখি
বাগানে একদিন গোলাপ ফোটেছে
প্রজাপতি উইড়া বেড়ায়তাছে বাগান জুইড়া
আমার ভেতর তোমারে খুব পাই
লাঠি মোছা ছাড়াই জমিনে নাইমা পড়ি।

সময় পার হইলে মেঘ কেটে যায়
সবুজের কোলে পিট পাইতা
সূর্য টারে বুকের উপর ঘুম পারাই।


গিরগিটির রাজ্য

মানুষ মানুষরে দেখাইতে চায়
নিজেরে দেখাইতে গিয়া
ছাগল দেখায় বলদ দেখায়
লোভে ঝরঝর চোখ দেখায়
কুকুরের মত লকলকে জিহ্বা দেখায়
আরো কত কি
দেখায় আর ছাতি ফুলায়, কী গর্ব
তারে সে দেখায়তে পারছে
ভাগ্গিস মানুষ নিজে দেখে না
দেখলে আর দেখায়তোনা।

আত্মপরিচয় সংকটে
মানুষ খরখুটোর মতো ব্রান্ডে লুকোয়
রেবন, এডিডাস , নাইকির বাক্সে
নিজের পরিচয় লুকিয়ে
ব্যাশাপনার বনিয়াদি বিলি করে বেড়ায়
মাঠে ঘাটে সমাবেশে
আর অস্তিত্বের জন্য পোষে দালাল।

সেই মানুষদের চোখে
পৃথিবীর পরিবর্তন দেখতে চায়
সাধারন মানুষ
আপদকালীন সময়ে
সামুদ্রিক লালা কাঁকড়ার মতো
যারা বালিতে লুকায়।

আলেক সাঁই

কখন থামবে ঘড়ি
ঘুচে যাবে ব্যাবধান রাতে আর দিনে
কখন লয় হয়ে যাব, তোমাতে
আমাতে তোমাতে “আমি” নিব চিনে
আলোতে আলো মিলে আধার যাবে দূরে
পাখিদের জীবন
গাছেদের জীবন
কুকুরের জীবন
বিড়ালি জীবন
মনুষ্য জীবন
পার করে
সময় থেমে গেলে
তোমাতে মিলে গাইব তোমার সুরে...

শিকড়হীন না হতে পারার দায়

ইভের ঠিক করে দেয়া মানদন্ড আজো খুঁজে বেড়ায়,
এডামকে ধারন করে পুরুষ চেতন অবচেতন উভয়েই।

প্রেম বরাবরই ভেঙ্গেছে নিয়ম স্বর্গে - মর্তে,
ইবলিশ আজো জ্বলছে মানুষের লোভে-লালসায় ,
দায় নেই তবুও কারোর, ভাগ্য লিপির আল্পনায় আঁকা সবি।

পৃথিবী এক অদ্ভুত খেলার মাঠ যেখানে গিনিপিগ সকলে।

সময় বদলে যায়, বয়স বাড়ে ভূখন্ডের
বদলে যায় পোশাক , খাবার দাবার , কল কাঠি
তথ্য বদলাচ্ছে দিনে দিনে জ্ঞান বদলায়নি রত্তি টুকু।

সাগরে তলে ডুব দিয়ে দেখি কুয়োর জল।

মানুষ পারেনা সাহসী হতে সত্যির মুখামুখি,
কাম অস্বীকার করে কাম লোভে,
আহারের লোভে হয় অনাহারী,
দান করে পার হতে পুলসিরাত,
নরকের ভয়ে যাপন করে ততস্ত্র জীবন।

আহারে মানুষ, বুঝবে তুমি কবে?

জীবনেই যদি না মেলে জীবন
না মেলে ডানা নীল আকাশে,
মিথ্যার কোলে বরণ করে যে মরণ
তার দুকূলই ফ্যাকাশে।

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test