E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

‘ভন্ডরাজা’- অভিনয়ই মুক্তির পথ

২০২১ নভেম্বর ০২ ২৩:৩৯:২০
‘ভন্ডরাজা’- অভিনয়ই মুক্তির পথ

দীন রঘুবীর


পীযূষ সিকদারের দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয় অতুল সরকার। ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ডিসি মহোদয় স্যার অতুল সরকার। বইয়ের আলোচনার মধ্য দিয়ে এক ভাবগম্ভীর আলোচনা শুরু করেন বক্তারা। পীযূষ সিকদারের দুটি বই একটি কাব্যগ্রন্থ “তবুও মনে রেখ” অন্যটি মঞ্চনাটক “বাজিকর”।

আলোচনায় উঠে আসে বই দুটির সম্ভাবনার কথা। ডিসি স্যার মহোদয় তিনি অসম্ভব সুন্দর বক্তব্য রেখে সব দর্শককে বিমোহিত করে ফেলে। তারপর কানাইপুরের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন কথার পিঠে কথা সাজিয়ে কথা উত্তুঙ্গে গিয়ে পৌঁছে। ডিসি স্যার অতুল সরকার মহোদয় ব্যস্ততার কারণে চলে গেলেন। আমার মনটা ভারী হয়ে গেল। আমি মনে মনে ভাবি কী অসাধারণ মানুষটা। যাই হোক, স্যার চলে যাওয়ার পর কিশলয় সংগীতনিকেতন এর শিক্ষার্থীরা গান পরিবেশন করে। ফাঁকে কেউ আবার কবিতায় কবিতায় ভাসেন। এরপর বাবুল খান ও ভগিরথ মালোর গান দর্শক উপভোগ করেন বিপুল করোতালির মধ্য দিয়ে।

বাউল গানের শেষে শুরু হয় নাটক “ভন্ডরাজা”। রচনা ও নির্দেশনায় পীযূষ সিকদার। এই যে বই এর প্রকাশনা উৎসব তারপরও দর্শক নাটক দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। শুরু হয় নাটক। বলে নেয়া ভালো এইযে সাহসী সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের প্রতিষ্ঠিত স্কুল পুরো অনুষ্ঠানটা হাজার দর্শকের মাতোয়ারা করে রাখে বিকেল থেকে রাত গভীর অবধি। এই নাটক অথবা অন্যান্য অনুষ্ঠান কানাইপুর ফরিদপুর সদর ফরিদপুরের হোগলাকান্দি গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি টানটান সিলায় বৈরাগ্য হয়ে ওঠে। যা বলতে যাচ্ছিলাম, সে হলো নাটকের কথা। নাটকটির নাম “ভন্ডরাজা”। কেরামত আলী একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার সাথে চলাফেরা করেন আলোক ব্যাপারী। হঠাৎ একদিন কেরামত আলী রাজা হবার স্বপ্ন দেখে! তার সঙ্গী আলোক ব্যাপারী ঘটনা পরম্পরায় কেরামত আলীকে রাজা বানিয়ে ফেলে। কেরামত আলী হঠাৎ স্বপ্নে দেখে আর আলোকের কারসাজিতে রাজার মতো হাবভাব করতে থাকে। আলোক ব্যাপারী বিনয় সহকারে বলে, আমাকে কোন পদ দেবেন না? রাজা বলেন তুমি হলে আমার উজির। তুমি খুশি তো। আমি খুশি। কিন্তু কেরামত আলী রাজা হয়ে তার হাবভাব পাল্টে যায়। উজিরকে নানা কায়দায় ব্যথা দেয়। ব্যথা সহ্য করে উজির তার কাজ চালিয়ে যায়। রাজা নানান কৌশলে উজিরকে আঘাত করে। কিন্তু তারপরেও উচিত রয়ে যায় তার সাথে। রানী আয়েশা, রাজার প্রতি ক্ষোভে দুঃখে নিজের চোখের জল ফেলে। উজির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, অজানার পথে উড়াল দেয়।

রানী আসে। রানীকে মুখ্যমন্ত্রী রাজা বানায়। রানী চোখের জল মুছে! রানী বলে, “তুমি আমার স্বামী। আমরা তো কেউ রাজাও নই, রানীও নই। কেন এই মিছে সাজা।” রাজা ক্ষেপে যায়। “হ্যাঁ, আমি রাজা। শোনো রানী আমার তরবারি নাই, কিন্তু খাপ আছে।” “তুমি বলে রাজা অথচ তোমার তরবারির খবর তুমি রাখো না।” রাজা বলে, “তুমি সরিয়ে রেখেছো।” রানী বলে “তুমি আমার স্বামী। তুমি উদ্ধত পূর্ব আচরণ করেছো। খবর রাখো উজির উড়াল দিয়েছে।” “কি বল রানী উচিত উড়াল দিয়েছে।” রাজা চিৎকার করতে থাকে “উজির উজির” বলে। রানী বলে “উজির উড়াল দিয়েছে। আর উজিরকে পাওয়া যাবে না।” রাজা রাজার পোষাক পাল্টিয়ে ফেলে। রানী খুশি হয়। “আমি রানীও নয় তুমি রাজাও নাও।” “আমি এবার বুঝতে পারছি।” রানী বলে “জানো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গান আছে”। “কি গান?” রাজা বলে। “আমরা সবাই রাজা।” গান চলে “আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে। নইলে মোরা রাজার সথে মিলবো কী শর্তে........ ” নাটক শেষ হয়।

অভিনয়ে অভিনয়ে দুজন অভিনেতা মাতিয়ে তোলেন। একজন কেরামত আলী, অন্যজন আলোক ব্যাপারী। এই আলোক ব্যাপারীর মুখে মুখে ঘুরেফিরে “আমি দিনেও জ্বলি, রাতেও জ্বলি”। একটি টসলাইট অনেক এর মাধ্যমে আলোর Off, On এর মাধ্যমে দুজনকে চিনে ফেলি। আলোক ব্যাপারী বা কেরামত আলীকে বীরদর্পে যাত্রার ভঙ্গিতে অভিনয় করে যাচ্ছে। প্রমটার প্রমটিং করে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন “রঙ্গমঞ্চ” প্রবন্ধে। ভাবুকের চিত্তের মধ্যে “রঙ্গমঞ্চ” আছে সেখানে স্থানাভাব ভাব নেই। ভাবুক এর চিত্তকে স্মরণ করে, যাত্রা নাটক “ভন্ডরাজা” এগিয়ে যায়। দ্বন্দ্বে, দ্বন্দ্বে আমরা কখনো, কখনো ভালোবাসায়, ভালোবাসায় অভিনেতাদের শিল্প নৈপূন্য দেখি। কেরামত আলী তথা রাজা চরিত্রে অভিনয় করছেন সঞ্জিব মজুমদার। নাটকের পিশা যদি থাকতো একদিন, ওকে আবিষ্কার করতাম বড় একজন অভিনেতা হিসেবে। ও জেলার একজন ভাল ডাক্তার। অভিনয় তার রক্তের মধ্যে মিশে আছে। জয় হোক সঞ্জিব মজুমদারের। এই আশীর্বাদ করি। মজিবর সবকিছু ফেলে রেখে খাবে কি? এ চিন্তাও থাকেনা। ও যেন অভিনয় অভিনয়ে সারাটি জীবন কাটিয়ে দেয়। আলোক পরিকল্পনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় সেকেন্দার সেক ও মীর রিয়াদ। ওদের দিন দিন উত্তরণ ঘটুক। এ কামনা আমার। “ভন্ডরাজা”- নাকটটি নাট্যসারথির নবম প্রযোজনা। নাট্যসারথি অভিনয়ে অভিনয়ে মুক্তি খুঁজে। জয় হোক নাট্যসারথির দিন দিন। আবারো বলছি নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন পীযূষ সিকদার। নাটকের জয় হোক।

(ডিআর/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test