E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাসেল আশেকী’র কবিতা

২০২১ নভেম্বর ০৩ ২৩:২৭:১৫
রাসেল আশেকী’র কবিতা







 

আমাকে বলতেই হবে শান্তির কথা

আদম সিঁড়ির সন্তান হিসেবে
আমাকে বলতেই হবে শান্তির কথা।

যে মা দিশেহারা, যে বোন জুটিহারা
যে ভাই ঘরছাড়া, কিংবা ঘরে থেকেও অশ্রুগাথা
আমাকে বলতেই হবে তাদের কথা
আমাকে বলতেই হবে শান্তির কথা।

আমার বর্ণমালায় নাই কোনো শত্রুতা
নাই কোনো বৈরীতা
নাই কোনো হানাহানির উগ্রতা
কিংবা আগ্রাসনের দুরাত্মা!
স্ফটিক জলের অক্ষরে অক্ষরে
প্রাণিত আমার অন্তরভাষা
যেখানে সবার জন্য সমান উদার বন্ধুতা।

তবু, অশান্ত বিশ্বের ঊর্ধ্ব-নিম্ন চাপে
ফিলিস্তিন সিরিয়া জেরুজালেম
আল আকসার মতোই আমার দশা!
পরাধীন স্তম্ভের মতো অন্ধকারে ঘেরা
আমার স্বাধীনতা! যেখানে আমি শুধু
একরত্তি দিব্য আলোর প্রেরণা।
আমাকে বলতেই হবে শান্তির কথা।

এই বাংলার মাটি জল থেকে
পৃথিবীর দ্বারে দ্বারে ঘোরা
আমার আত্মার অভয়ম-লে
বসবাসরত যে কারোর চিৎকারে
নোয়াম চমস্কি বুঝবেন, অরুন্ধতী রায়
ভাববেন, জুলিয়ান এসেঞ্জ যেখানেই
থাকুন জানবেন, কেন আমি শান্তির জন্য
ক্রন্দনরত মানবজাতির ছবি!
কেন আমি ভাষার জন্য রক্ত দেওয়া
দ্বিখণ্ডিত বাঙালি!

আমার গায়ে এখনো সেই কষ্টসহিষ্ণু
শ্রমিকের পোশাক, মাথায় সেই অদৃশ্য
ভাষার মুকুট, কণ্ঠে সেই ঘরে ফেরা সত্য

আমি দেখতে পাচ্ছি সেই শিশুর মুখ
যার গগনবিদারী আর্তনাদে
বিষণ্ন ব্যাকুল আজ ঈশ্বরের অসীমতা
তবু আমরা কী দারুণ নীরব, একা!
যেন ঈশ্বর এসে করে যাবেন
মানুষের ফয়সালা!

সক্ষম মানুষের এমন নীরবতা
আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমি মানুষকি-না!
কেননা, মানুষের মধ্যে কখনোই
বিভেদ সৃষ্টি করেনি মানুষ
বরং তার মনের মধ্যে ঢুকে
যত বিভেদ সৃষ্টি করেছে
লোভের পুত্র লালসা
আর ক্ষোভের পুত্র হিংসা!
ঘৃণা থেকেই যাদের উত্থান আর পতনযাত্রা!

এ প্রশ্ন থেকেই
ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্বে
ধর্ম-অধর্মের যুদ্ধে
প্রকম্পিত বাতাসের ঘূর্ণিপাকে
স্বচ্ছ জলকে রক্তলাল হতে দেখেছি বহুবার।
পৃথিবীর কোথাও এমন দৃশ্য দেখতে চাই না আর।
বরং মানুষের মনের ময়লা পরিষ্কারে
রক্তপাতহীন নৈতিক বিশ্বশান্তির প্রয়োজন আজ।

এই যদি সত্য
আর সত্য যদি জগতের শ্রেষ্ঠ ভাষা
তবে সোচ্চার হওয়ার এমন সময়ে
আমরা কেউ চুপ থাকতে পারি না
কেউ আগুনের মধ্যে ঘুমাতে পারি না
প্রিয়তমার কোলে বসে শুনতে পারি না
শিশুর কান্না--যে শিশু ঈশ্বরকে
বলে দিয়েছে নৃশংসতার সব কথা!
আর, মনকেও ছেড়ে দিতে পারি না
অন্ধ খেয়ালের ধাঁধায়
ভুলে মানুষজাতির সুদীর্ঘ পরীক্ষা
আর শান্তির প্রার্থনা।

তখন আমাকে বলতে হয় শান্তির কথা
বলতে হয় সেই মা’র কথা, যে মা আজো
কায়মনে চান সন্তানের প্রাণভিক্ষা!

তবু অভয়, এ বিশ্বে একজন সৎলোক
থাকলে সত্য থাকবে, একজন শান্তিপ্রিয়
থাকলে শান্তি থাকবে, একজন প্রেমদূত
চাইলেই সব কঠিন সহজ হয়ে যাবে
একজন বিশ্ববন্ধু দাঁড়ালেই সব যুদ্ধ বন্ধ হবে
পাখির কণ্ঠেও ধ্বনিত হবে
যুদ্ধ থামাও জীবন বাঁচাও

তখন অনাবৃত বৃক্ষের মতো
সারি সারি দাঁড়াবে মানব সন্তানেরা
শান্ত সমাধিও ফিরে পাবে প্রাণ
চোখের মণিতে হাসবে জীবন।
আর যারা মহাকাল মগজের
ভাঁজে ভাঁজে, পৃথিবীর পথে পথে
চোখের জলে গায় মহান বন্ধুর গুণগান
তারাও বাঁধবে শুভ মানুষের জয়গান।

আর যারা মনে প্রাণে আজীবন
কাঙাল হয়ে ঘোরে ফাও খাওয়ার
সুবিধা নেওয়ার ক্যানভাসে ক্যানভাসে
ফাঁপা পাণ্ডিত্যের তোষামোদি ভাষায় ভাষায়
তারাও ফিরবে সুপথে, সুকর্মে।

এ মুহূর্তে আমার দিকে কেউ
গিবতের বান ছুড়লেও
প্রশংসার গান গাইলেও
আমি সেই ভাষাভূমির পুত্রসেনা
নিই না কারো নিন্দা, নিই না প্রশংসা
নিই না দিই না কোনো কুমন্ত্রণা।

জানি, পৃথিবীর মানুষেরা
এখনো ভালোবাসে মনপাগল প্রেমিকের আত্মা।
এ দুনিয়ায় আমি তাদের একজন ছাড়া আর কেউ না।

ভয় পেও না সজীবাত্মা, ভয় পেও না বিশ্বসভা
মানুষকেই করতে হবেমানুষ্যত্বের ফয়সালা।
কেননা, এ পৃথিবী মানুষের হাসি-কান্নার সমান
একটি শিশুর কান্নায় কেঁদে উঠে
সারেজাহান, একটি মেয়ের হাসির দৃশ্যে
হাসতে থাকে জমিন থেকে আসমান।
তবু আমরা ভায়ে-ভায়ে ফ্যাসাদে বিবাদে
অপমানে হারাই নিজেদের আত্মসম্মান
ভুলে এ পৃথিবীর সবাই একই মা’র সন্তান।

তখন আমাকে রক্ষা করতে হয় কলমের
মর্যাদা, রক্ষা করতে হয় কালির পবিত্রতা
আর বলতে হয় শান্তির কথা।
যেখানে আমি একটি আলোর ইমেজ ছাড়া
কিছুই না যে শান্তির অপেক্ষায় দাঁড়ানো
এক মানবাত্মা যার বুকে লেখা
ক্ষমা আর ভালোবাসা

আমি ফের দেখতে পাচ্ছি জমিনের গায়ে
একটি সাদা আসমান
আর অনুভব করছি মহান শান্তির উত্থান।
যার মর্মভাষা সারা পৃথিবীর দ্বারে দ্বারে
ঘোরা এক অন্তরাত্মার শান্তিপ্রার্থনা
আর শান্তির দরজা খোলা।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test