E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জামিল জাহাঙ্গীর এর কবিতা

২০১৫ আগস্ট ২৩ ০০:৫৪:১৩
জামিল জাহাঙ্গীর এর কবিতা






 

গগণেও তারাবাতি


নীলকণ্ঠ পুস্পরানী তোমাকে ছুঁয়ে দিতেই ফণা তোলে সাপ
সাপুড়িয়া বাঁশি হাতে একদিন সুর তুলে ফিরিয়ে দিলাম
যদিও নিপুণ নই তবু প্রেমে মুগ্ধ গতি দেখিয়েছে পথ
নিঃশ্বাস নির্মম তাস পরাজিত পাপ খুঁড়ে বাঁচার নিয়ম

মগডালে ফুটে আছো নীলাম্বরী শাড়ী পরে পায়রা কুমারী
আজ এক প্রজাপতি তোমায় খুঁজেছে বুঝি গন্ধ শুকে শুকে
জানি খবরের পাতা কী যে ছাতামাথা ছাপে প্রবল বমন
ওরাও তোমায় চেনে রঙিন হরফ হীরে নাম লিখে রাখে

অন্ধকার গিলে খাও চৌরাস্তার সিগন্যাল তুলে নাও একা
আলোর ভালোয় বসে নক্ষত্র পড়ছে খসে তুমুল নিনাদে
তুমি গোধূলির বোন তারাদের এককোণে জুড়ো বসবাস
এরপর সিংহের সাথী তারাবাতি জ্বলে যাবে গলিত গগণে

মুছে দিও নামধাম আমি ছায়াপথ ঘুরে আসি পায়ের আঙ্গুলে
অপরাহ্ণে অপহৃত অক্ষত ছায়ার শব সারারাত হাসে।



ঊনদিন অধিরাত

যে নদীর নাম নেই তার সাথে আত্মীয়তা জলের যৌবনে চলে বেশ
যে পাখির পাখা নেই তার সঙ্গে উড়ে যায় রোমশ ছায়ার শঙ্খচিল
আমি এক উড্ডয়ন তালুতে রেখেছি বন্দী লুকোনো সুতোর প্যাচে সুঁই
ঝর্ণার স্বচ্ছতোয়া ঢালু জীবনের বেগ উড়াল নেই যার স্বপ্নের ঘুমে
নিজভূমে পরবাসী প্রজাপতি পাখা মেলো ঘাসফড়িঙের জন্য শুধু হাসো
পকেটে আকাশ রেখে উপরে কী খোঁজো তুমি নীলিমার লালমন জ্বলে
নদীপাখি জানো নাকি ওপাড়ার অনাবাদী জমিগুলো চাষ করে কারা
আমার দ্বীপের গন্ধ ভুলে যেতে বলো আজ গভীর ঠিকানা দাও লিখে

ঊনমানুষের দিন এসে গেছে সীমাহীন বনানীর বিথিকুঞ্জ শোভার পুতুল
চুলচিরে পরকেশ বুনছে তাঁতির বউ শুকোতে দিয়েছে রোদ চন্দ্রালোকে
ও জলে কে ডুবতে যাবে তোলো তোলো হাতখানি ঢেউহীন মরাল মুলুক
হারজিৎ যুদ্ধবীনে কারা করে নির্ধারণ ওরাসব পানির দালাল তিমি
হাঙ্গরের প্রিয় বন্ধু রক্তে রক্তে লালজল লালসার কোমল পানীয় পিয়ে
উল্লাসের মরাকাশ ঝরে গেছে ঋতুমতী বসন্তের খোলাচুলে লাফায় উকুন
মসনদে মসনভী কোথায় কখন চলে বেহালার কতো দাম বিবাহের কালে
এরা মানুষের নাম অন্য কিছু লিখে যেতে চায় নমরুদ ফেরাউন আরো

যে বাড়িতে বেড়াতে যাই সেখানে প্লেগের ভাই আমার আগেই নিমন্ত্রিত
মুদ্রার মিছিল দেখি আষাঢ়স্য অন্ধকারে স্লোগানের তপ্তকণ্ঠ মৃত্যুর ডোবা
জেলের জালের দাম মাছ নয় পেশীঘাম দস্যুর লানতে কাঁপা জলের পানা
অথচ রাষ্ট্র নাকি লুটেরার কবল থেকে ফিরে এসে ঢুকে গেছে উপাসনালয়ে
তলে তলে সব জল শোষকের পানিফল গোপন বাজার থেকে কমিশন সরে
বাবা গেছে মরে বেহুলা বিধবা হলে এ বাংলা মা আমার তোমার কী হবে
সন্তানের অক্ষমতা কী যে করো পিতামাতা আমাদের উপরে নিচে সবখানে বেড়া
জিতে গেছি জিতে গেছি বাদামের খোসা খেয়ে বাজা গোলামেরা কাড়া নাকাড়া।



সোফিয়া লরেন


ঘুমুইনি সারারাত তুমি
ঝুলে আছো চাঁদে
কার্নিশে করুণ কোকিল
চোখের পাতারা বুঝি এইসব আগেভাগে টের পেলো পলকবিহীন
আর কিছু প্রতীক্ষার দিন ঝরে গেলে আবার নতুন পাবে পেলব পালক
এক মুরগি ডাকে ওপাড়ের খাঁচা থেকে
আমি শুনি শুধু কক কক কক

কতো আর সয়ে যাবো হেডফোন তুলে তাই রক্ষা করি কান
এ পাড়াটা ফাঁকা ছিল আজ দেখি অসংখ্য চুনের দোকান

তোমাকে দেখানো যায়
হামেশাই লোকে দ্যাখে
ব্যাকরণ বক
জমিনের মাঝখানে জমা আছে ইঞ্চি ইঞ্চি লক্ষ প্রতারক
একটা বাঁধলে দেখি হাজারটা ছুটে যায় লাখের সবক
কী পান বেচতে এলে একটুও রঙ নেই মেলে না তবক

তারপরো ক্যানো ডাকো
আমার ভাঙ্গার ঘরে
ঝিম ঝিম লাগে
ত্রিতাল বিহঙ্গ নাচে জমাট রক্তের ঘরে দুধ মাখা সরে

একদিন তারা সব ঝরে যায় ফেভিকল মেয়াদ ফুরোয়
সেদিন পড়বে বলে হাত পেতে বসে আছে বুড়োরা সবাই
এরআগে না নামলে পাবে না ইচ্ছের ঘুড়ি সুতোদের লেজ
আমি বলে দিতে পারি এই এক আহাজারি গ্লোবাল ভিলেজ
ভাবতে কী ট্যাক্স লাগে ভাবুন এভাবে তাই সোফিয়া লরেন
আমার ঘরেই আছে অগুনতি প্রজাপতি আপনি সরেন...


এক প্যাকেট নক্ষত্র

নক্ষত্রের জয় পরাজয় নেই
টিকে থাকো অথবা ঝরে যাও
পিনপতন শব্দে ভেঙ্গে যাবে ধ্যান
মগ্নতার গান নৈশব্দের সুর ত্রিতাল লয় ধীর
এসো গাই একসাথে বৃষ্টির কোরাস ঝড়ের অর্কেস্ট্রা
নিরবতার চেয়ে দুধসাদা পাখি নেই লোকালয়ের পাশে
এইসব রাত্রিদিন ক্রমশই একাকার ঢাকনায় মোড়া
জনতার রক্তমাংসে ভালো সুপ হয় কসাই রাজনীতি জানে

গলির মোড়ে সবুজ আলো হলুদ দেখে দৌড়ে ভেতরে আসে
তার চাই কিছু বিস্ফোরক লোমহর্ষক মহামারীর মুখোমুখি
অননুমোদিত বিজ্ঞাপনে সয়লাব পাড়ায় প্রতিটি ড্রয়িংরুম
গৃহিণী তারকার মোড়কে সওদা করেন বিকিনি বাণিজ্যে
ফোবসের মেয়েদের সঙ্গে ডিমোসের বউদের সতীন সম্পর্ক
ঘর ভাঙ্গার মহান অভিযোগে জর্জরিত কাজীর দোকান
এক সুমহান গণতন্ত্রের নাম বানরের বিরাট পিঠা ভাগ
শরীর ও শক্তির সমান্তরাল উত্থানের সম্প্রচার দেখি এখন

আমি বন্দনা করি না সেই ভুল উপাসনা মন্ত্রে গুনে গুনে
অনন্তর প্রার্থনার পংক্তিকে করি ঝলমলে আরো আলোর ঝিলিকে
গলিত লিপ্সার লেশ পদতলে রেখে কোন কোনদিন পকেটবিহীন
সূর্যের কাছ থেকে তিনকড়ি ঋণ নিয়ে চা খাই নাস্তা করি
আবার ফিরিয়ে দেই আমার যা কিছু আছে সব কিছু নেই
চোর চুরির বিচার চাইলে সে প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ
এখন নক্ষত্র লাগামহীন চুরি করছে উপগ্রহ বিচারক
এরা একসঙ্গে হারে একসঙ্গে জিতে অমরতা প্যাকেটে মোড়ানো...


কাল সূর্য উঠবে না

বাউরি বাতাস বয় পৌষ পার্বণের মাসে আগাম বসন্ত
রাগে ফিরে গেছে শীত তোমাদের আতিশয্যে চুপিচুপি একা
কাল সূর্য উঠবে না - তোমার প্রার্থনা মিছে হলুদ সময়ে
মাঘী পূর্ণিমা আসুক তখন চন্দ্রের কথা ভেবে নিও স্বপ্নে

তুমি কী সূর্যকে ডুবে যেতে দেখো অসহায় মাছরাঙা খাদে
ঐ যে পাখি সেও গায় তা কি তোমার দেখানো সুর তাল লয়ে ?
যদি না গায় কী করবে বিচার সালিশ হবে কোর্টে কাচারিতে !
এমনি এমনি পাও তাই বোঝো না কিচ্ছু অকৃতজ্ঞ নর

কাল সূর্য উঠবে না, বলে দিচ্ছি উঠবে না, একেবারেই না
ডুবতে দেবো না আজ খেলা হবে চতুর্দিকে অন্ধকার এলে
সোনাবুবু ডুগডুগি নিয়ে এলে ডেকো শব্দে বাজিয়ে শোনাবো
হায়!অর্ধ দিনরাত- চিতকাৎ শুয়ে পড়ে আলোহীনতায়

সূর্যের সাথে পৃথিবী ঝগড়ায় লিপ্ত হলে কী হবে উপায়
মামা বলে লাভ নেই উঠবে না উঠবে না কোনোদিন আর...





(/এসসি/আগস্ট২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test