E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বীরেন মুখার্জীর কবিতা

২০১৫ আগস্ট ২৪ ২২:৪৩:২৮
বীরেন মুখার্জীর কবিতা






 

সময়যাপন

বৃষ্টির সঙ্গে অশ্রুপাতের সম্পর্ক কতটা নিবিড়
সৎ প্রেমিকমাত্রই তা বোঝে
অথচ বড্ড অসতর্ক তারা অভিমানীও
কিংবদন্তির টাট্টুঘোড়া হওয়ার খায়েশ নেই বলে
বেদনা লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে


ফেরা

ফিরি। বাতাসে ঠোকর খেয়ে খেয়ে। অবেলায়।
পথে পথে ধুলো-কাদায় জীবাশ্ম খুঁজে
রক্তিম সন্ধ্যায়।
যখন আলোছায়া ঘন হয় পার্কের বেঞ্চিতে
অভিজাত গলিতে জমে ওঠে ক্যান্ডেল লাইট
ডিনারের আয়োজন
ফিরি তখন। মধ্যসন্ধ্যার মায়াদৃশ্যে। এক বুক শিহরণে।

দীর্ঘশ্বাসগুলো দীর্ঘ হতে থাকা আশ্রয়ের কাছে
অস্তিত্বের চূড়া বিলাসি বেদনা স্পর্শের আগে
ফিরে আসি ফের
পিছুটানদৃশ্যে।

ফিরি। রাত্রিঋতু ছুঁয়ে নির্বাক অরণ্য পথে। ছায়াদৃশ্যে।
উহ্য রাখি আয়ুরেখা। ফিরি শাদা পৃষ্ঠাজুড়েÑ
স্বেচ্ছামৃত্যুবেশে।



চাবুকের মতো ছুটে আসে ভাষা

প্রান্তর থেকে চাবুকের মতো ছুটে আসে ভাষা
ভাষার মুখে চুমু খেয়ে নাভি বরারর সাঁতরাই
যুবতী হয়ে ওঠা রাতের মোহ ছিঁড়ে
শ্যাওলা জমা গন্তব্যের সড়কে পা রাখি,
আর ভাবিÑ
মধুর ছিল কী কখনও, আমাদের সবুজ সঙ্গম?

প্রান্তর থেকে চাবুকের মতো ছুটে আসে ভাষা
আমি অনন্তের পথে মেলে ধরি নিজেকে
শূন্য-পরিসরে খুঁজতে থাকি তোমাকে বোঝার ভাষা
হায়, এক-দুই-তিন, জন্ম নেয় কেবলি ভাষার সন্তান
শুধু না-বলা কথারা লুকিয়ে থাকে পাতার মর্মরে।

মহাশূন্যে শয্যা পেতে গলাঅব্দি ডুবে আছি দেখো
ঝুর ঝুর মাটিতে ঝরে পড়ছে ভাষার বিলাপ
তোমাকে বোঝানোর অরণ্য ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রতীক্ষায়
আর সঘন বর্ষায় ভিজে যাচ্ছে পরিশীলিত ভাষা।



বলতে পারি না কোনও কিছু

বলতে পারি না কোনও কিছু
আঁধারে থেমে যায় প্রেমাতুর দৃষ্টি
যদি তুমি বলো
সম্মিলিত সত্য থেকে তুলে দিতে পারি
কথার পোশাক
সঘন বর্ষার প্রতিবিম্ব রঙে
সবুজের ঘর
যদি তুমি বলো
শ্রাবণে-শ্রাবণে জ্বেলে দেবো
জুপিটার দীপ
কসমিক দেহভার তুলে দেবো, নিরাভরণ
পরম্পরা খোঁজে
কার ভালো লাগে বলো
ফিরে ফিরে যেতেÑবার বার
যদি তুমি বলো গৃহহীন কোনও পৃথিবীকে

বলতে পারি না সব কিছু
আলোছায়া শিকারির লক্ষ্যের বিপরীতে
সব ব্যাকুলতা
দীর্ঘপথ আলো করে জেগে থাকা, অক্ষরের স্রোতে
পারি না ফেরাতে অনুকূলে
শয্যাসঙ্গী শূন্যের কাছে
একাকী রাতে
তবু সেই ভালোÑযদি তুমি বলো ফের
দেহঘর উহ্য রেখে, নিয়ত শুদ্ধ চর্চা হোক।



স্পেস

বর্ষাহত রাতে তোমাকে উড়ন্ত সরীসৃপ ভেবে
নক্ষত্রের দিকে সরে আসি খানিকটা পথ
বর্ষাতির আত্মমগ্নতা ছুঁড়ে অবলীলায় পাঠ করি
গঙ্গা, নর্মদা, কাবেরী পৌরাণিক নদীর
গোপন পা-ুলিপি...
হায় রাত!
অতশীকাচের দৃঢ়তায় জেগে উঠেছো দেখি
পরাবাস্তব শহরের স্মৃতিকাতর ট্যানেলে;
পাতার শিরা থেকে খসিয়ে অসংখ্য শ্রাবণফুল।

ভ্রমণের রাত্রিপথ গুপ্ত রেখে আমি যখন ছুঁতে চাই
জলের সমাধিফলক, তখন কারো উষ্ণ করতলে
গলে যায় তোমার ঘুমন্ত বসন, আমি দেখতে পাই না
কেননা, আমার চোখে ওড়ে বর্ষাময় সঘন অন্ধকার।




ভূমিকা

আঙুলের ভূমিকা আছে হাতের মধ্যে
রাত্রি অনুবাদে তাই জাগরণ লিখি,
লিখে রাখি রাত্রিদিন সবুজের ঘ্রাণ
দুঃখহীন সবটুকুু ফাঁক আর ফাঁকি।
অক্ষরের ভূমিকা থাকে গভীর শব্দে
অমিমাংসিত প্রশ্ন তাই উঠে আসে
ফের, স্মৃতিসংহিতা খুলে বসে রোজ
নির্ভাবনায় জেনে নেয় ভাষার প্রণয়।

টুপ করে ডুবে গেলে সকল ভূমিকা
জীবনের বাঁকে এসে মিশে যায় সুর
বেদনাবাহিত একথা বোঝে কি কেউ?
আঙুলে আঙুলে থাকে শত সমুদ্দুর
তবু দ- হয় আমারই, পুনর্বার
ভূমিকা ছাড়াই চলে যাই তেপান্তর।


(এনআই/এসসি/আগস্ট২৪,২০১৫)




























































পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test