E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোহাম্মদ নূরুল হক এর একগুচ্ছ কবিতা

২০১৫ আগস্ট ২৮ ১৪:৫৮:২৫
মোহাম্মদ নূরুল হক এর একগুচ্ছ কবিতা






 

মধ্যরাতের ডায়েরি


এক
আহারে লাল রাত্রিরা পুড়ে গেছো আন্ধার প্রান্তরে
কতবার তোমাদের বিছানার পাশে দাঁড়িয়েছে-
লাল মাছিদের তাড়াখাওয়া বামচোখে স্বপ্ন দেখা
বেহায়া যুবক। আহা তার পা যে কেন বাড়িয়েছে
মৃত নদীর অতলে? কেন যে অমন বিগতারা
বার বার ফিরে পেতে চায় হারানো যৌবন। আহা!

এই যে লাল রাত্রির গল্পে ঢুকে যাচ্ছে তর্কপ্রিয়
লাল মাছিদের কামরাঙা ভোর। তাকে আর কেন
তবে ডেকে আনা তবে? কেন তবে অহেতুক এই
কানাগলি চিনে চিনে ফেলে আসা সোনালি শৈশব?

আহারে রাত্রির ঘুম- তবে কেন আমাকে রাঙালি!


দুই.
চরাচরে সন্ধ্যা নামে, মনে নামে রঙিন আন্ধার। মেঘের কয়েনগুলো ঝুরঝুর ঝরে পড়ে মাঠে; কোনো-কোনো পথ নাকি ভুলে যায় নিজের ঠিকানা। অথচ মাঠের শেষে জেগে থাকে অচেনা প্রান্তর; নদীগুলো ঘুরে আসে, মাঠগুলো ভুলে যায় চাঁদ। জাগো, জাগো লাল রাত্রি, আউল-বাউল মন থাক। আজ তুমি জমা রাখো ভ্যানিটির গোপন কোটরে। তুমি কি দেখেছ কোনো লালমাছি লাল অন্ধকালে- উড়ে যায় কবরের মতো সুনসান-নীরব রাত্রির কোলে?
ডালিম ডানার মতো লালচোখ সাব এডিটর, রাত জাগে এডিটিং টেবিলে- টেবিলে। ভুলে যায় স্বজনের মুখ, রঙিন শৈশব। তবু তারে কামরাঙা কৈশোরের স্মৃতি তাড়া করে। সিঁদুর রাঙা আমের মতো যার গালে টোল পড়ে, মাথার ভেতর জাগে সেই প্রিয় কিশোরীর মুখ।
যাও রাত্রি। পাখি হও। ঘুরে এসো ভুলে যাওয়া গ্রাম। নিয়ে এসো মেঘলোকে এঁকে রাখা জলের প্রচ্ছদ। আমাদেরও ঘুম পায় রাত্রি শেষে ভোরের কিনারে- জেগে থাকা হাওয়াদের শিষ দেওয়া মাতাল সঙ্গীতে।



তিন.
চলো এই মধ্যরাতে উড়ে যাই, পুড়ে যাই তৃৃষ্ণার দহনে। নগরে নেমেছে বুঝি কুকুরের মতো কালো টহল পুলিশ! ওরা নেমেছে, নামুক। পথে আরও কত কী দেখা বাকি আছে। আমাদেরও যেতে হবে মাইল-মাইল লাল অন্ধকার কেটে। চোখের সামনে কারা তবে মহিষের শিঙে বেঁধেছে ঋতুবতী কিশোরীর লাল...!
চলো এই মধ্যরাতে সব ভুলে যাব। মনে রাখব না কিছু। জীবন তো এক নদী। তাকে কেন বাধা দাও সমুদ্রসঙ্গমে! তাকে বয়ে যেতে দাও, বয়ে যাক, খুঁজে পাক মৃত্যুর মোহনা। একবার যদি ডাকে অনন্তের লালমাছি, পুড়ে যাব একা। কাউকে নেব না সাথে, গোলাপের মতো লাল মাতাল সড়কে।


চার
চলো এই মধ্যরাতে মদমত্ত হাওয়াদের গ্রামে।
হঠাৎ চমক দিয়ে জঙ্গলে পালালে ঋতুমতী
নীল জোনাকির ঝাঁক, অন্ধকারে চিৎকার শোনো
নীল আসমানে বসা আলোক বালার, তারপর
এই উদ্দাম রাতের ঘ্রাণ যদি পাও বেহুঁশের
মতো পাঠ করো কোনো কামগন্ধা ঝিলের শরীর

এইসব রাত্রি মরে মাতালের অক্ষম আক্রোশে
যৌবনের মৌবনের স্বাদ যারা পায়নি কখনো
তারা তো শোনাবে নিত্য পাপপুণ্যের কাহিনি
কত। এপ্রিলের হাওয়া তারা ভুলে যাবে, ঘুমচোখে
তাড়াখাওয়া কুকুরের মতো কেউ-কেউ ঘাটে এসে
তরীখানি ডোবানোর আয়োজনে ব্যতিব্যস্ত হবে।

চলো এই মদমত্ত হাওয়াদের আগে আগে চলো।
একবার নক্ষত্রের আলিঙ্গনে যারা মেতে ওঠে
তারা নাকি চিরকাল হৃদয়ের ক্রীতদাস থাকে।


পাঁচ
এই মাতাল সন্ধ্যায় তুমি আর কার নামে শোনাবে গজল। কার নামে মালা গেঁথে গুনবে প্রহর। তরল রাত্রিকে কেন আর ডেকে আনো এই সম্ভ্রান্ত কেচ্ছায়? আরব্য গল্পের তবু আলাদিন ছিল, বঙ্গে সে দৈত্য কোথায়! যে আমাকে এনে দেবে সাতশত তের নদী পার হয়ে প্রিয়তম ঘুম? কখনো ঘুমকাতুরে ছিলাম না, অথচ এখন, ঘুমের জন্য ব্যকুল। কতকাল ঘুমাই না, নির্ঘুম কাটাই যত মাতাল আন্ধার। সে কথা তুমিও জানো, তুমিও চেন সে সব উদ্ভ্রান্ত— রাত্রির চিত্রকল্প। কেন অমন বিনিদ্র থাকি, কেন যে অমন ব্যকুলতা!
কেন যে তোমাকে শুধু তুমি-তুমি বলি, আজ থেকে তুই। তোকে বলি, শোন তুই, তোমাকেও বলি, আমারও সাধ জাগে, অবুঝ বালক হই শিউলি-বকুলে। ভোরের আগে শিশির হই তোর পায়ে-পায়ে। পালক ভাঙা ফড়িঙ হই তোর ড্রেসিংটেবিলে। যদি তুই হাতে নিস, যদি মরি গোপন চুম্বনে।


(/এসসি/অঅগস্ট২৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test