E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিল্পস্রোত (এ সপ্তাহের কবিতা)

২০১৫ অক্টোবর ২৫ ১৫:২৫:৩২
শিল্পস্রোত (এ সপ্তাহের কবিতা)






 

নির্মলেন্দু গুণ
স্বপ্ন, নব-ভৌগোলিক শিখা

এখন আমার বয়স কত হবে? একশ? নব্বই? আশি?
হায়রে আমার বেশি-বয়সের স্বপ্ন, আমার একশ হবে না ।
আমি ময়মনসিংহের কবি, নীরার একান্ত বাধ্য স্বামী,
আমার বয়স পঁয়ত্রিশ, আমি ঢাকায় এসেছি স্বরচিত
কবিতা পড়তে । আমার বড় ভাই পশ্চিম বাংলার,
আমি স্বদেশের মায়ায় জড়ানো কবি ।

আয়াতুল্লা খোমিনির মতো আমার মাথার চুলে ব্রহ্মজীবী
শুভ্র-কাশদল, ফাল্গুনের হাওয়ায় মাতাল শাল-গজারীর
সবুজ পাতার ঝিলিমিলি আমার দু'চোখে ।

আমার দু'হাতে ধর্ম, দাঙ্গা,
আর প্রলম্বিত সামরিক শাসনের কালো শৃঙ্খলের দাগ ।
পায়ে এঁটেল মাটির মায়া, বুকে প্রিয়-নিধনের ক্ষত ।
আমি মেঘের আড়ালে ইন্দ্রজিৎ, আমি জন্মযোদ্ধা ।

আমি যুদ্ধে-যুদ্ধে, বিপ্লবে-বিপ্লবে...,আমার পেছনে দগ্ধ
ইতিহাসের ট্রাজিক উল্লাস; তবু জানি আমার সম্মুখে আছে
পৃথিবী কাঁপানো স্বপ্ন, আছে নব-ভৌগোলিক শিখা ।

আমার বয়স যখন বাড়বে, তখন প্রতিটি সূর্যোদয়ে
সূর্যমুখীর মতন একটি-একটি ক'রে পাপড়ি মেলবে
আমার প্রতিটি কবিতার ভিতর-বেলার বর্ণ ।

আজ যে আঙুরগুলো আমি মাটির ভিতরে পুঁতে রেখে যাচ্ছি,
একদিন তার নেশায় মাতাল হবে ভবিষ্যতের বাংলা আমার ।
তখন আমার বয়স কত হবে?


আলমগীর রেজা চৌধুরী
পরিব্রাজক

প্রদর্শন করে সে সুন্দরী
সে তো আকাশ নয়, বহুরূপা রূপ নেই তার
অতি সাধারণ বালিকার মতো ভ্রুভঙ্গি
কটিদেশের বাঁক টি-শার্টে লেপটে থাকে।
চন্দ্রাবতীর ছায়া নেই
মেঘলা আকাশের বিরহী কায়া নেই
বেলি, চন্দ্রমল্লিকা খোঁপায় নেই
এলোচুলে সুচিত্রার ঢেউ নেই
আইশেডে বুঝে যাওয়া চোখে টলমল জল উধাও
কালো চুলে অকালবৃদ্ধার সাদাটে প্রলেপ
সুগন্ধির তীব্রতায় পালিয়েছে যৌবনের কামার্ত ঘ্রাণ।
তুমি কি মহুয়ার জন্ম সহোদর, মৃগতৃষ্ণিকা?

ভ্রান্তির খোলসে যাকে স্পর্শ করি
তার থাকে হেলেনিক ছল...
কার জন্য অন্বেষণ, পরিব্রাজক এক জীবন?


ফরিদ আহমদ দুলাল
নিঃসঙ্গের পুষ্পচর্চা-৩০

যতবার হারিয়েছি পথ আমলকি-অর্জুন-নিম দেখিয়েছে সিঁড়ি
যেন সমুদয় গোলক ধাঁধার চক্করে ডিগ্গির রাজবাড়ি
আমাদের বিশ্রামের পাশে ঘুঘুদম্পতি রচনা করে নীড়
টিয়ার সবুজ নিবিড় ছায়াবৃক্ষের সাথে পুষ্পাবির,
দীর্ঘ উড়াল পথের সমুহ ধকল গোলাপ নগর থাকে না বিশ্রামে
রাজস্থানের ঐতিহ্যমাখা জয়পুরে কিস্তির বৈঠা থামে;
আত্মদর্শনে ডিগ্গির সমাবেশে মাতোয়ারা সব
সুফিবাদ নিয়ে দিনমান চলে বাণিজ্যিক কলরব।
জয়পুরে পাহাড়-বনানীর ভিড় ময়ূরের আরণ্যক নাচ
যন্তর মন্তরে গোলক ধাঁধায় যেন শিল্পের বনেদী কারুকাজ
সিটিপ্যালেস হাওয়ামহল এলবার্ট হলের বিস্ময় জলমহলে অবাকগীতি
সাপখেলা পুতুলের নাচ জনপদে নিজস্ব পোষাকরীতি
কঙ্করমাটির মরুভূমি ডিগ্গি প্যালেসে পেলাম সবুজের আবাহন
গ্রামবাংলার আবহ যেন সারাবেলা সনির্বন্ধ আমন্ত্রণ।

গোলাম কিবরিয়া পিনু
আশ্বিনের নীল

এইবার শরতে নেমন্তন্ন জানাতে পারছি না
দিকভ্রান্ত হয়ে আছি-
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে!
মাফ করো - এ আমার দীনতা!
সাদামেঘ উড়ে উড়ে যায়
কাশবনও দুলতে থাকে
সেই চিরচেনা রূপ - এখন কি চোখে পড়ে?
শরতের সৌন্দর্য স্থির হয়ে পড়ছে রাজবংশে!
মাটিঘেষা মানুষেরা রূপবান হতে পারছে না-
এই দেশে অন্তত বেশিরভাগ অংশে!
বারোভূঁইয়াদের বদলে বারোভূতে খেয়ে নিচ্ছে
ধান! মান আর থাকছে না!
মেঘমালা সাদা হতে ভয় পায়
পূর্বঋতু থেকে আসা কুড়ুলেমেঘের আস্তরণ
আশ্বিনের নীলে! গিলে খায় প্রকৃতি-সৌন্দর্য
নৃতত্ত্ব হারিয়ে যায় কোন্ নৃত্যপটীয়সীদের হাতে?
শরতের নীলাকাশ প্রসারিত হতে পারছে না বলে
আমি আরও দীনদরিদ্র হয়ে যাই!

বদরুল হায়দার
নিষেধাজ্ঞার মধুর হুশিয়ারি

আলোদের সাথে দেখা হলে কালো রেখাগুলি মুছে যায়।
শরীর আগলে রাখে মহাজাতকের চোখ। তুমি
ভুলের কবুলে রহস্যের ফাঁকে খোঁজো নিরাময় রোগ।

শূণ্য গোয়ালের দুধে সুদে আমি আত্ম প্রতিরোধে
প্রাকৃত মায়ার জালে খুঁজি তোমার বানানো অভিযোগ।

বীণাতারে বাজে না সেতার। হৃদয়ের কাঁটাতারে
অকাতরে বলী হয় পরাভয়। ঘরে ও বাইরে চলে
ভালোবাসার জয় পরাজয়।

ধরাশায়ী মনে বহুজনে আবেগ ও আপ্যায়নে তুমি
হৃদয়ের চোরাবাঁকে ভাসো রণাঙ্গনে। আমি
রংতুলির সবাকে চির প্রেমিকের ইতিহাসে নাম লিখি।

সমমনের বাগানে ফোটে পরজীবী অর্কিডের ফুল
তুমি আদায় উসুলে ইস্কাবিবির কৌশলে ছাড়ো
প্রি-পেইড ভুল।

দেখা না দেখার রেখা টেনে পালামন
বেদনার দরশনে হয় দরদাম। তোমার শখের
অভিমান মনপুরার আবেগে খোঁজে নিরাবেগ সমাধান।

আমি পাষাণ হৃদয়ে নিষেধাজ্ঞার মধুর হুশিয়ারি মেনে
যৌবনের কাছে নত এক ভালোলাগা ব্যবধান।


মৌ মধুবন্তী
ভাঙ্গা সমাজে কবিতার নৈবচ অবস্থান

ভাঙ্গা সমাজে কবিতার নৈবচ অবস্থান
ভেবেছ সমাজ টা তোমারাই দখল করে নেবে পায়ের নিচে
আমরাও জেগে আছি বদরুলের চোখ নিয়ে, রফিকের অঙ্গিকার নিয়ে
এই বাংলা কেবল তোমাদের হাতে ফেব্রুয়ারী আনেনি, আমরাও তার
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সাথী।

ছেড়ে দাও সমান জায়গা, যেমন তোমার কন্ঠে কবিতা বাজে
আমিও তানপুরায় সুর তুলি অধিকতর আবেগ দিয়ে, নষ্ট বীজের
শস্যবীজে ভরে দিয়েছে গোটা চত্বর। মনে রেখ আরো কিছু লোক আছে নিভৃতে
বাঁচায় রক্তের দাবী ।

যেদিন আমার কন্ঠ হতে হুঙ্কার ঝরে পড়বে মঞ্চে , সেদিন আমিও
হব অতন্দ্র প্রহরী। বিলাসের বালিশে মাথা রেখে যে কয়টা দিন পারো ঘুমিয়ে নিও
আমাদের ইন্দ্রধনু সেদিন তোমার হাত থেকে মাইক কেড়ে নেবে না, ভয় পেয়ো না
পুরানের দুর্গন্ধে নালিশের খাতায় লজ্জা কে লিখে দেব না নির্লজ্জ বেহায়ার মত,

তোমাদের পায়ে সেদিন কোন জুতা থাকবে না।

তোমাদের দুমুখো সাপ চরিত্রের কাছে কোনদিন অজগরের দৃঢ়তা মাথা নোয়াবে না
মনে রেখ কবিতা তোমার একার ব্যবসা নয়, আসলে কবিতা কোন ব্যবসা নয়
তোমাদের ভাঙ্গা চোয়ালে যখন তীক্ষ্ণ ফলার মত বাংলা শব্দ উচ্চারিত হয়
তখন আমার কলমে বাংলা দুরন্ত লাফিয়ে ওঠে সমাজ জাগানিয়া গানে ও আগুনে
একদিন পুড়ে যাবে অসত্য , আগুনের লেলিহান শিখায় সেদিন সোনালি
কবিতার আবৃত্তি বাজবে নবারুনের কোমল বাসনা হয়ে। কেউ সেদিন ঠেকাতে পারবেনা
দুষ্ট পক্ষপাত কে । সমাজ টাকে নষ্ট কোরো না ।

আমিনুল গণী টিটো
বন্ধুদের নিয়ে শোকগাথা ও আমার বাস্তবতা

একজন দূর মরুভূমি ছায়াহীন শয্যায়
আরেকজন চকচকে কফিন শীত ডোবা শহরে
একজন নানাবাড়ী শিউলি তলায়
অন্যজন প্রায় আন্জুমান মফিদুল
বন্ধুদের ঠিকানা এখন প্রাপকহীন শোকগাথা
আমার পকেটে ভিজিটিং কার্ড
জাতীয় পরিচয় পত্র
অক্টোবরে লিখে যাই আগামী বছরের ডায়েরি
ব্যস্ততার দৈর্ঘ্য প্রস্থ নিয়ে আছি
একই ঠিকানা
মমত্বের শিতল পাটি তাল পাখা রেখে
যেদিন গন্তব্য নিরুদ্দেশ
কারো কারো বেদনার অশ্রু
খুজে পাবে না ডাকঘর
প্রাপকহীন মেঘ উড়ে যাবে


সাদাফ হাসনাইন মানজুর
পাথরের গল্প

একটা পাথর, পাথর ছিলো। শক্ত ছিলো।
লুকিয়ে ছিলো লাল গোলাপের বীজ।
মাটির সাথে সখ্য করে পাথর পেলো
আস্ত গোলাপ বাগান।
পাথর,পাথর ছিলো।
কঠিন পাথর বাগান ছেড়ে বহুতলের স্বপ্ন ঘোরে
উঁচুতলার ঘুরনি সিঁড়ি ধরতে গিয়ে ভুলে গেছে
ফুলের সুবাস, মৃত্তিকারূপ, বুকের জমিন, সবুজ
ঘাসের উড়াল ফড়িঙ, বৌচি বিকাল ভুলে গেছে।
পাথর, পাথর ছিলো।
সখ্য সখী মাটির কষ্ট পাথর বোঝেনা
কাদা মাটি একা কেদে পানি হলো
নদী হলো, সাগর হলো। উর্মিমালার
ছন্দে দিলো লাল গোধুলীর প্রেম।
পাথর, পাথর ছিলো


হাসান মাহমুদ
তোমার বিবর্ণতা

পেছন ফেরা যায় কি এখন লুকিয়ে থাকা যায়?
রাস্তা ধরে হাটতে গেলে চোট লাগতেই পারে
খিস্তি করে মাতাল যুবক পাড়ায় তুলুক ঝড়
সমষ্টি কি একার মতন নিঃসঙ্গ থাকে?
বদলে যাব- সহজ কথন, কেন এমন ভাবো?
স্বরস্বতীর উঠোন জুড়ে- বিদ্যা পুড়ে ছাই...
তবু, কেন নিক্তি মেপে- জ্বালাও মেধার প্রদীপ
মানুষগুলো মানুষ আছে, বদলেছে স্বভাব...
তর্জনীটা নামিয়ে রাখো: সময়, সবই- জ্ঞাত
কোন বাগানে কী ফুল ফোটে- কোন জলে কোন মাছ;
যোগ-সূত্র মুত্র বা মল- মাটিই সহি কথা
তোমার মধ্যে মিলিয়ে যাবে- তোমার বিবর্ণতা

সমর চক্রবর্তী
আয়না

যুদ্ধবৃত্তির মহড়ায়
নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে প্রেমিক একদিন
খুঁজে পায় নিজের মুখে, পুত্রমুখের সন্ধান!
পাখি প্রকৃতি যে রকম, পাখিদের ভালোবাসা পাখি হয়
এইভাবে সময় একদিন ঢুকে পড়ে সময়ের ঘরে
মানুষের মধ্যে মানুষ
আগুনের মধ্যে অগ্নিশিখা
জলের মধ্যে অশ্রুময় আশ্রম
যেভাবে মাছেরা স্থির তাকিয়ে থাকে জলে ক্যাবিনে
ভূমিষ্ঠের মধ্যে উঁকি দ্যায় মানবীয় ভবিষ্যৎ
প্রেমিক সেই ধ্যানে সাজায় বাগান
প্রকৃত ভূমিতে প্রাক-রকম বীজ
আমি সেই চোখে চেয়ে থাকি ভূমিষ্ঠের দিকে_
প্রতিটি ভূমিষ্ঠের মধ্যে একদিন মানুষ জন্মাবে।

আরিফুল হক কুমার
আসুন নম্র হই

আসুন নম্র হই
নত হই, হনন লাঞ্ছিত দিনের স্মৃতি মেধায় ধারণ করে
প্রিয় পিতাকে অভিবাদন করি
চেতনায় সজ্জিত হই আগুনের ফুলে
অহর্নিশি শানিত করি
বুকের সাহস
দিকচক্রবালে লিখে দিই
কালের ললাটে খোদায় করা
গর্জমান বাংলার ভাগ্যলিপি, জয় বাংলা।
কেউ কেউ মুছবে বলে বাড়িয়েছে হাত
সেইসব মুখ
হারিয়েছে সুশ্রীতার খোলস
আজ সেইসব হাত উত্থানশক্তিহীন
তাদের পাগুলি দিকভ্রান্ত ঘুড়ির মত
এলেবেলে হেঁটে যায় ভাগাড়ের পথে
ব-দ্বীপের মাটিমাখা কোটি কোটি পদক্ষেপ
জোয়ারে ঢেউ যেন ৩২নং এ এসে
বয়ে যায় বাংলার দিকে দিকে
এদেশের শিরায় শিরায় সিঞ্চত করে
তাঁর আশীর্বাদ
তাঁর পায়ের কাছে মৃত্যুর কুণ্ঠিত হাত
জ্বালিয়ে দিয়েছে
চিরভাস্বর আলোর মশাল।

নাভেদ আফ্রিদী
চোঁখ দু'টি খু'লে ফেলে দিয়ে

চোঁখ দু'টি খু'লে ফেলে দিয়ে, একজন বলেছিলো---
' দেখো, আমি অন্ধ হয়ে গেছি। কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। '
( রক্ত ঝরছিলো---)
বললাম, সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি।
বিস্ময়ের ভেতর আমার ঘরদোর---
যাও, নিজেকে আড়াল রাখো, তোমার গন্তব্যের গভীরে---
অথবা, তোমাকে দেখে, লোকজন অন্ধ হয়ে যাবে।
হেসে উঠলো সে। বলেছিলো, ' তুমি কবি '
মাঝে মাঝে কষ্ট পেতে হয়
প্রিয় মানুষের সঙ্গে অভিমানে
ঘুমিয়ে পড়া জীবনকে ধাক্কা দিতে হয়...
মাঝে মাঝে কষ্ট পেতে হয়।

ওবায়েদ আকাশ
বিশ্বস্ত উড্ডীন

আপাতত ভ্রমণ বৃত্তান্ত ভেঙে
শালিক শৃগাল কিংবা রঙধনু বেশে
বিশ্বস্ত উড্ডীন ফেলে ঘুমিয়েছি
কাকতাড়ুয়া হাঁকছে
নদীজন্মে তার বিশ্বস্ততা খুলে
দুদ্দাড় টাঙিয়ে দেয়া হলো রোদে
সরোবর খুলে নীল দরিয়ার মাছ
কেমন অনাথ চোখে তাকাচ্ছে বলো--
তুমুল ঢেউ দিলেই নদীজন্ম
ফিরে পাওয়া যাবে
তেমন নির্ভরতা কোথায়?
ঘড়ির কাঁটায় অবিশ্বাস্য স্রোত
তোমার উপস্থিতি ছাড়াই
লিখিয়ে নিয়েছে দীর্ঘ উপন্যাস
তবু নামভূমিকায় তুমি এই আখ্যানশাসক
গাছের চূড়ায় হলুদ ফল ছুঁয়ে দেখবার খেলায়
এখন তুমি কাঠগড়ার সর্বোচ্চ চাহিদায়--
আর ভাবছ, এমন উচ্চতা থেকে
পৃথিবীর দীর্ঘতর জীবনপ্রণালিগুলো
কত না ক্ষুদ্র মনে হয়

প্রদীপ দত্ত
চিরচেনা

চেনাজানা পুরোনো পথ ধরে হাটিনি বহুদিন
গোলপাতার গন্ধ ভরা ঘরে ঘুমাই নি অনেককাল
দূর্বা ঘাসের সাথে চেনাজানা ছিল
তাদের খোঁজ জানিনা
সহপাঠিদের চুলে পাক ধরেছে
তারা সব এখন ঘোর সংসারী
বেদনার নদীতে রক্তের জোয়ার ভাটা চলে
কেউ কেউ বলে-
নিশ্চুপ বসে থেকে দেখি দাড় বেয়ে চলে
প্রাচীন পুর্তগীজ নাবিক
যারা এসেছিল নদীর কূল ধরে।
বহু যুগ আগে,তবু রয়ে গেছে কেউ কেউ
চিরচেনা অয়বয়ে।

জামিল জাহাঙ্গীর
ঘুমুতে পারবে না আর

ঘুম একটা পাখির পাখায় বন্দী পালক
ঝুর ঝুর খসে পড়ছে মুহূর্তমদির
জল চাইছে মুখমণ্ডল বিস্তৃত হাত পায়ের পাতা
সমস্ত মাথার ভার কমিয়ে নেবার এই এক প্রক্ষালন
একবার দুইবার তিন তিনবার তাঁকে স্মরণ করি
উত্তম অতি উত্তম আমার ইবাদত
মোনাজাতহীন অনন্তর প্রার্থনার স্বরলিপি
পুনরায় জাগ্রত হবো ভাবলেই আর ঘুমুতে পারবে না

অ চি ন্ত্য চ য় ন
নদীমাতৃক দুঃখ সমাচার


চিঠি- ঘুম ও সকাল নিয়ে-
দীর্ঘ বছর একটি চিঠি লিখছি!
চিঠি- স্বপ্নময় সবুজের মাঠ...
দুঃখ বোঝার দায় মেঘেদের-
মেঘেদের হা-হা-কার আমরা না বুঝলেও
বৃষ্টি বোঝে- বোঝে রঙিন সুতোর লাল ঘুড়ি!
প্রিয় নদী তুমি কি জান- রঙিন ঘুড়ির কত বয়স?
বয়সের নামতা লুকিয়ে রাখ ম্রিয়মান বালির ভাঁজে।
রাতের পেটে তোমার ঘুমগুলো আহার হয়ে গেছে-
সবুজ যন্ত্রণার পাহাড়ে আমি একা!
প্রিয় নদী দুঃখ কি জান?
দোতলার বেলকুনি থেকে যার ছায়া তোমার মুখে
দোল খায়- তারই বিকেলের নাম দুঃখ!
আমরা জেগে থাকি, নদীর ঢেউ বুকের তীরে
বিধবা স্বপ্ন লুকিয়ে রাখে।
লুকানো সকল স্বপ্ন আমাকে আহত করে।
প্রিয় নদী আহত কি জান?
দুঃখ পাই স্বপ্নের গোছালো যাত্রায়-
দেবদারুর ছায়ায় শীতকাল।
এ সকল তাড়নার ঘোর-
ঘোর পূরণের নয়!
এই ঘোরে বেঁচে থাকার নামই আহত!

বকুল আশরাফ
ঘুম থাকে জেগে

ফুলকে ঘুমাতে বলো না
ওরা ঘুমালেই ঝরে যায়।
আমি বা আমরা কি ঘুমাই ?
অবস্বাদ আর ক্লান্তি বিশ্রামের সময়কে কি বলি
গভীর ঘুম! ওঁম শান্তি! প্রশান্তির ঘুম!
ঘুমের দ্বন্দ্বগুলো তবুও থেকে যায়
কবিতার দর্শনে
পৃথিবীর ঘূর্ণনে
সূর্যের ছায়াপথ আতিক্রান্ত হলে
পৃথিবীতে রাত্রি জাগে, দিন ঘুমায়।
ঘুমের সংজ্ঞা ও ঘুমের ঘনত্ব
হতে পারে মৃত্যু, হতে পারে
আগামীর পথ চাওয়া
সে চাওয়াতে তোমার অপেক্ষায়
ঘুমিয়ে থাকি
ঘুমিয়ে পড়ি বলবো না।
আমি ঘুমালেও ঘুম থাকে জেগে।

ক্যামেলিয়া আহমেদ
আয়না

দেখেছি তাকে আয়নাতে
আমার পেছনে ছিল সে
আর আমি ছিলাম, তার পেছনে
তার হাতে ছিলো না আয়না
ওটা ছিল আমার হাতে
দেখেছি তাকে আয়নাতে।

কে সে, কি নাম, কোথায় ঘর
কিছুই জানি না তবু মন তাকে ছুঁয়েছে
বারবার চোখে ভাসে সেই ছবি
মাস যায় বছর যায় খুঁজে খুঁজে
কোথাও হয় না তো দেখা !
কি জানি হয়তো হয়েছে, পারিনি চিনতে
চিনবই বা কী করে !
দেখেছিতো তাকে আয়নাতে।

প্রায়ই যাই পাবলিক লাইব্রেরিতে
টিনেজ থেকে মধ্য বয়সীদের
আনাগোনা ওখানে
বেশিরভাগই মুখচেনা আমার
হঠাৎ একদিন সামনে পড়ে এক অচেনা মুখ
হাতে ডায়রি পরনে নীল শার্ট
চোখ পড়তেই মনে পড়ে সেই আয়নার কথা
অজান্তেই জেগে ওঠে শিহরণ !

এ কি আয়নায় দেখা সেই মানব
না কি কোনো গ্রিক দেবতা
লজ্জায় নামিয়ে ফেলি চোখ
একটু হেসে বললো , চিনেছ আমাকে ?
সেদিন দূর থেকে নাকি দেখেছিলো সেও
ঘোর কাটে ; আড়ষ্ঠ কণ্ঠে বললাম
চিনবো কী করে
দেখেছি তো তোমাকে আয়নাতে।


শহীদুল ইসলাম লিটন
ঠিকানা

গহিনের গচ্ছিত সম্ভ্রম
সিমানা প্রাচীরেরে ওপাশে থাকে যত
অজানা শত নিকেশ,সেখানে অবিরত হানা দেয়
শকুনের দল। ক্রমশ হারায় নিজস্ব
অধিকার।

গহিনের গচ্ছিত সম্ভ্রম
কুলশিত হয় না
দুষিত হয় না

অজাচিত স্বপ্ন
তবু ঠিকানার খোঁজে
ঠিকানা খোঁজে।




পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test