E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শিল্পস্রোত(এ সপ্তাহের কবিতা)

২০১৫ নভেম্বর ২৮ ১৮:৫৩:০৭
শিল্পস্রোত(এ সপ্তাহের কবিতা)






 

আসলাম সানী
এখনই
এখানে রাত্রি
আধাঁর ভয়ঙ্কর
এখনো মেঘলা আকাশ
নামবে ভীষন ঝড়
এখনই ঘরের খুঁটি
করছে যে নড়বড়,

এখনই আসতে পারে
যে কোনো অশনি
জেগে ওঠো মাভৈ: মাভৈ
কোমর কি বাঁধো নি ?
মগ্ন ধ্যানে দগ্ধজ্ঞানে
এখনো বসোনি?
এখনো ঘনোঘটা
দূর্যোগ ভয়ঙ্কর
নির্দেশ করে জেনো
তোমারই ঘর।

রাশেদ হাওলাদার
কহর উৎসব

পাজরের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে
আধিয়ার বীজ পুঁতেছে মৃত্তিকার ভেতর
ঘাম সেচে সেচে মাটির নরম স্পর্শে
বীজতলা পোঁকামাকড়ের বিপরীত যুুদ্ধে
সময় সাঁতরে শীর্ষ এখন সূর্য্যমূখি মুখ
বালামের ঘ্রাণ বড়ে ওঠা হাসি স্নিগ্ধতায়
আধিয়ার ভুলে যায় কতবার জোগে Ñ
কেটে ছিল পা।
পোষাকী ধপধপে রেষ্টুরেন্টের সাদাভাত
আমার হাত পায়ের কহরের প্রিয় প্রিয় ছোঁয়া
হেসে উঠা পাজর জয়ের আদিম মহা উৎসবে.....।


আরিফ মঈনুদ্দীন
গ্লানিবহনকারী একজন করনিকের স্বগতোক্তি


স্বপ্নখোর একজন মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে
একঝাঁক তরুণীর দিকে
আমি দূরে বসে আহাজারি করি, কিন্তু‘
কিছুই বলতে পারছি না
আমার হাত পা বাঁধা অদৃশ্য শিকলে
আমি তার মাসোহারাভুক কর্মচারী
আমার চর্মচক্ষুর দোহাই¬¬ ,তোমরা
আমাকে দোষ দেবে না,
আমি প্রতিবাদ করতে পারছি না, কারণ
এর জের আমি সামলাতে পারব না
আমি মনে মনে ঘৃণা করছি এই তো
আমার জন্য মহার্ঘ

স্বপ্নের চাদরে মুড়িয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ
হাজির করার কী চমৎকার ভেলকি
কুহক নৃত্যের মায়াজালে আটকা পড়ে
তরুণী খোয়াচ্ছে তার পবিত্র শরীর
বেচে দিচ্ছে
ভোগ উপভোগের শ্রেষ্ঠ সম্পদ
একেবারেই জলের দরে।

এভাবে সৃষ্টির আদি থেকে
কিছু মানুষ অন্যের স্বপ্ন খেয়ে বাঁচে
তার সম্পদের পাহাড় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে
লাস্যময়ীর আঁচলের নিচে
লাস্যময়ী তার শ্রেষ্ঠ অর্জন খুইয়ে
গলায় ঝুলিয়ে নেয় বারোবারী খেতাবের বুলি।

মা জে দু ল হ ক
ঋতুবর্তী মেঘের পাশাখেলা


অসীম আকাশের প্রগাঢ় নীল ছুঁয়ে-
বৈরী বাতাসে ভেসে বেরায় দিগন্ত বিস্তৃত মেঘের ভেলা।

অন্তর্হিত কামুক মেঘের আলিঙ্গনে
অধরের দংশনে দংশনে বৃষ্টিবালিকা উদ্দোলিত হয়ে উঠে।
তীব্র উম্মাদনায় জড়ায়ু ছিড়ে অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়ে
সমস্ত আকাশ জুঁড়ে...।

ভেজা কদমের পাঁপড়ির ঘ্রানে-
তৃঞ্চার্ত পাখ-পাখালি আয়েশে পালক ঝাড়ে অবিরত
তৃপ্তির বারতায় আবিষ্ট হয় প্রকৃতির চারপাশ।

সবুজ ছায়াতরু, পাখী ডাকা কলবরে
মুহুর্তেই ভরে যায় লীলাময় সবুজ অভিসার।
অবশেষে; বহুকাক্সিক্ষত, প্রত্যাশিত বৃষ্টির বারতায় ফিরে পাই
প্রশান্তির এক দীর্ঘ নিঃস্বাস...।


রুমা পণ্ডিত
সহজের ব্রত

সহজ কথা সহজ ভাবে লেখার জন্য
সহজ শব্দ খুঁজতে গিয়ে দেখি
কাজটা খুব সহজ নয়,
ঘাম চিটচিটে
তেল হলুদের গন্ধ মাখা শব্দের সাথে
কথার যে অন্তরঙ্গতা
লেখার সাথে তা নেই।

কাগজ কলম দেখলেই
শব্দরা সাজতে বসে
উধাও হয়ে যায়
সাদামাটা চলনবলন
অভিজাত সুগন্ধি আর পোষাকে
নিমেষে পালটে ফেলে নিজেকে...

আমিও নাছোড়
কলমের মুখে লেখা
আর লেখার মুখে কথা ফোটানোর
মন্ত্র শিখছি।


শাফিকুর রাহী
ভালোবাসার রোদেলা বিকেল

তুমি আমার ধোঁয়াওঠা গরম ভাতের ওম ছড়ানো
শীতার্ত এক রোদেলা সকাল, তোমার মাঝে জিয়ন মরণ
আকাক্সক্ষারই স্বপ্নবীজ বপন করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আকাশে পানে।
তুমি আসবে বলে পৌষের হিম ঠা-া রাতে কতো আয়োজন,
গিউজ ধানের মুড়ি আর বিন্নিধানের খই,
মাগুর মাছের ভুনা, লাউয়ের ডগায় শিং মাছের ঝোল।
তুমি আসবে বলে হিম-শীতল মধ্যরাতে বাঁশঝাড়ে
জোনাকিরা আলোর ডানা ছড়িয়ে রেখেছে।

তুমি আসবে বলে নানা কিসিমের মাছের মান্দায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসে
কনকনে শীতের শিশিসে ভাসে ভালোবাসার রোদেলা বিকেল।
এ নিদারুণ দুঃসহ কালবেলায়ও তোমার ধ্যানে রাত্রিজাগরণ
আর অজানা অদেখা আলোর অন্বেষণে অকারণ তপস্যায়
সময় গড়িয়ে যায়, আমি বড়ো নিরুপায় আজো তোমার কথা ভাবি।

এ মনোযাতনার কাল হয়তো একদিন শেষ হবে
আনন্দ ঝলমলে বসন্ত বাতাসে জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলে
সুখপাখিরা গেয়ে উঠবে কুহুকুহু সুরে, সেই শুভ সম্ভাবনার প্রতীক্ষায়!
তুমি আসবে বলে আমি সারারাত সিথানে মোমবাতি জ্বেলে রাখি
বাঘের মাসির হাড় কাঁপানো হিমঠা-ায় ঘুম আসে না চোখে আমার তোমার জন্য;
আর কতোকাল একলা একা নিরানন্দে কাটবে আমার সুখবসন্ত!
তুমি কি আর ভুলেও কখন সাড়া দেবে না মানবিক আকুলতায়?


মঈন চৌধুরী
হৃদিতা

দেখ হৃদিতা, তোমার মত সব ব্রান্ডের হার্ডওয়ার এক
রাধা, লাবন্য, রূপা, বনলতা, নীরা সহ সবতো একই,
একই ধরণের লজিক সার্কিট নিয়ে আর খই ভাজা নয়
নতুন এপস চাই, সফটওয়্যার চাই, হৃৎপিন্ডের মতন।

আমাকে তুমি শব্দ বলার নতুন নতুন এ্যাপ্লিকেশন দাও
নতুন কবিতায় তোমাকে আমি এই পৃথিবীতে রেখে যাবো,
তোমার গহীনের হার্ডডিস্কে একটা কবরের জায়গা দিলে
ওখানে থেকে তোমাকে এঁকে আমি মোনালিসা বানাবো।

বুঝলে হার্ডওয়্যার, তোমরা বেশী করে সফটওয়্যার বানাও।

শেখর বরণ
রুদ্র
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ স্মরণে


কিংবদন্তি হয়ে আছো তুমি অন্তরে
ভোরের শেফালি অঝোরে ঝরে যায়
ভরে ওঠে আগাছায় কালিন্দির দিঘি
নীলাম্বর শেষ পেয়ালা তুলে নেয় নীলকণ্ঠে
চলে যাও তুমি অমৃতের পুত্র অমর্ত্য।
অপুষ্ট প্রেম হৃদয় করেছে কাটাছেঁড়া
ঐহ্যিক পাশাখেলায় কখন যে জিতে গেছো
কখন যে চলে গেছো সীমানার ওপারে
বাসমতি চালগুলি খেয়ে গেলো কবুতর
তবুও সিদ্ধ তুমি অন্তরে অন্তর বুনে যাও
অন্তর বুনে যাও জোয়ান মন্তরে
রুদ্রাক্ষের মালা পরে বজ্রে তোলো বাঁশি
শব্দে শব্দে বাঁশি বাজে সম্ভাবনার শীষে
মৃত্তিকার আমৃত্যু বুভুক্ষু বুকে
ঘুমাও তুমি শ্যামল রাজকুমার।
শোনো,
শোনো বিবেক বয়ান
শোনো বিশ্বের নন্দিত নবীশ
এখানে শুয়ে আছে এক প্রেমিক শ্রমিক
যে ফলাবে শস্যদানা কবিতার বীজে
যে শুনাবে পঙ্ক্তিমালা
‘এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন
আমাকে কাতর করে আমাকে তাড়ায়...।’


মিন্টু হক
অরুণমল্লার

আমার চিন্তারা!
ঢুকে পড়ে চিতার ক্ষিপ্রতায়
বিবিক্ত আক্রোশে ছুটি
আর গোল গোল ঘুরি
দেবতার জঙ্গলময়।

সহসা সততার এক অরুণমল্লার
পটভূমে দৃশ্যমান।
দেবতার জঙ্গলে যাদের ছিল মেরুদ-
দিনে দিনে তারা কঙ্কাল।

শ্মশ্রুমন্ডিত বটের অভাব;
সভ্যতার সমান বয়স এ বনে, এখন
চোরাবালি আর আগাছার আবাসন।

বাবুল তালুকদার
শূণ্যতা আমাকে তাড়া করে

একরাশ শূণ্যতা আমাকে ঘিরে আছে যুগ বহুযুগ
যন্ত্রনা ও লজ্জা হৃদয় গহীনে হাবুডুবু খায়
হলদে পাখি উড়ে আসে উড়ে যায় ।
খুঁজে পাইনি আজও
জীবনের অস্তিত্ব ও ভালোবাসা।

দুঃখ কষ্ট বেদনা আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে প্রতিমুহূর্ত
হৃদ গহীন মরু ভূমিতে পরিনত হয়
কতকাল বেঁচে থাকা যায়
ধর্য্য পাহাড় সমান একখণ্ড পাথর নিয়ে
ঈশ্বর -
আমার পুরো শরীর আগুনে পুড়ে ছাই ছাই
দিশেহারা ক্ষুব্ধমন অস্থির
চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় জীবনের স্বপ্ন
ঈশ্বর -ভালোবাসার সনদপত্র চাই
অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

মশিউর রহমান মসী
স্বপ্ন

মহাকাল মহাকাশে শান্তির ধুমকেতু
উড়ন্ত আলোকবর্তিকা পৃথিবীতে নেমে আসে
প্রেমের অমিয় বাণী।

হিরোশিমা নাগাসাকি ধূয়ে ফেলে
নায়েগ্রার জলে,
সভ্যতা জানান দেয়- আত্মা মহাত্মা মানবাত্মার
প্রতিনিধি বিবেকের দংশনে মানুষ হয়ে উঠে।

পৃথিবীর কোথাও ব্যবহার উপযোগী
একটি আগ্নেয়াস্ত্র অবশিষ্ট নেই।
তাবৎ মারণাস্ত্রের নিরস্ত্রীকৃত বিগত সময়
আর শুধু ভালোবাসার ঢেউ
খোলা হৃদয় উচ্ছ্বাস হয়ে
দুকূল ভাসায়।

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test