E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শান্ত-মুমিনুলের ব্যাটে আরও একটি স্বপ্নময় সেশন

২০২১ এপ্রিল ২২ ১৩:৪১:০২
শান্ত-মুমিনুলের ব্যাটে আরও একটি স্বপ্নময় সেশন

স্পোর্টস ডেস্ক : রীতিমত স্বপ্নময় ব্যাটিং করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুমিনুল হক। লঙ্কান বোলাররা উইকেটের জন্য হাপিত্যেশ করছেন, কিন্তু তাতে তাদের থোড়াই কেয়ার! দেখেশুনে সেশনের পর সেশন পার করে দিচ্ছেন এই যুগল।

দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনেও শান্ত-মুমিনুলের জুটি ভাঙতে পারেনি না শ্রীলঙ্কা। হাসিমুখেই লাঞ্চ বিরতিতে গেছেন দুই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩৭৮ রান।

টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিটি সকালই এক একটি বড় পরীক্ষা। কেননা সকালে পেসাররা কিছুটা সাহায্য পান পিচ থেকে। ব্যাটিংটা করতে হয় বেশ সাবধানতার সঙ্গে, একটু ভুল হলেই উইকেট হারানোর সম্ভাবনা।

তবে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম দিনে দারুণ ব্যাটিং করা শান্ত আর মুমিনুল দ্বিতীয় দিনের সকালের ভয়কেও জয় করলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। সবমিলিয়ে ৭৯.৩ ওভার অবিচ্ছিন্ন আছেন তারা। যোগ করেছেন ২২৬ রান।

শান্তর পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুলও। ২৪৬ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ১০৭ রানে অপরাজিত আছেন টাইগার দলপতি। এটি তার ক্যারিয়ারের ১১তম এবং বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি।

অন্যদিকে ৩৬০ বল মোকাবেলায় ১৬ চার আর ১ ছক্কায় শান্ত ব্যাট করছেন ১৫৫ রানে। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলা এই তরুণ আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে।

এর আগে ২ উইকেটে ৩০২ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। শান্ত ২৮৮ বল মোকাবেলায় ১৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১২৬ রানে। অধিনায়ক মুমিনুল হক ১৫০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে দিন শেষ করেন ৬৪ রান নিয়ে।

উইকেটে সবুজ ঘাসের আধিক্য থাকলেও, টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান ডানহাতি ওপেনার সাইফ হাসান। তবে বিপদ আর বাড়তে দেননি তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সুরঙ্গা লাকমলের প্রথম ওভারেই জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান তামিম ইকবাল। ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে অনসাইড দিয়েই বাউন্ডারি দুইটি মারেন তিনি। কিন্তু বিশ্ব ফার্নান্দোর করার পরের ওভারে এর উল্টোটাই করেন সাইফ।

প্রথম পাঁচ বল ডট খেলার পর শেষ বলটি আঘাত হানে তার পায়ে। শ্রীলঙ্কানদের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। ম্যাচের প্রথম রিভিউ নিয়ে সাইফের বিদায় ঘণ্টা বাজান লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে, শূন্য রানে ফিরতে হয় সাইফকে।

সঙ্গীকে হারালেও তামিম পরের ওভারে আবার হাঁকান বাউন্ডারি। এমনকি বিশ্বর ওভারেও তাকে খেলতে দেখা যায় সাবলীলভাবে। এই বাঁহাতি পেসারের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে তিন চারের মারে ১৪ রান নেন তামিম। একইসঙ্গে ছুঁয়ে ফেলেন টেস্টে ৪৫৩৭ রান করা মুশফিককে।

বিশ্বর করা পরের ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে মুশফিককে ছাড়িয়ে যান তামিম। মুশফিকের সাতটি টেস্ট কম খেলেই এ রান করে ফেলেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। রান তোলার গড়েও এগিয়ে তামিম। মুশফিক রান করেছেন ৩৬.৫৮ গড়ে, অন্যদিকে তামিমের রান এসেছে ৩৮-র বেশি গড়ে।

এদিকে শুরুতে উইকেট হারিয়ে খানিক চাপে পড়লেও, দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তা সামাল দিয়েছেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এরই মধ্যে গড়ে ফেলেছেন পঞ্চাশ রানের জুটি। লাহিরু কুমারার করা ইনিংসের ১২তম ওভারে ফের তিন চার হাঁকান তামিম। এই ওভারেই পূরণ হয় দলীয় পঞ্চাশ।

জুটি ভাঙতে না পেরে বোলিং আক্রমণে একের পর এক পরিবর্তন আনেন লঙ্কান অধিনায়ক। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি লঙ্কানদের। উল্টো যখনই রানের সুযোগ এসেছে তার পূর্ণ ফায়দা নিয়েছেন শান্ত ও তামিম। কখনও দেখে খেলেছেন, আবার কখনও আক্রমণাত্নক হয়ে তুলে নিয়েছেন বাউন্ডারি।

ইনিংসের ১৯তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেয়ার মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ২৯তম ফিফটি পূরণ করেন তামিম। মুখোমুখি ৫২ বলে ১০ চারের মারে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। অন্যপ্রান্তে ইনিংসের ২১তম ওভারে জোড়া হাঁকান শান্ত, তামিম একই কীর্তি দেখান পরের ওভারে।

দলীয় শতকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২৪তম ওভার পর্যন্ত। এর আগে অবশ্য উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ধনঞ্জয় ডি সিলভার নিজের তৃতীয় ও ইনিংসের ২৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট সাইড এজ হয়েছিল শান্তর। কিন্তু সেটি গ্লাভসে রাখতে পারেননি উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলা।

পুরো সেশনে এই একটি বাদে আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে প্রথম সেশনের ২৭ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ১০৬ রান।

দ্বিতীয় সেশনেও একই আধিপত্য বজায় রাখেন তামিম ও শান্ত। শুরু থেকেই সতর্ক-সাবধানী ব্যাটিং করা শান্ত তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করেন ইনিংসের ৩৭তম ওভারে। বিশ্ব ফার্নান্দোর করা সেই ওভারের চতুর্থ বলে থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাইলফলকে পৌঁছান শান্ত।

তামিম যেখানে মাত্র ৫২ বলে ১০ চারের করেন ফিফটি, সেখানে শান্ত পুরোপুরি বিপরীত। তিনি ফিফটি করেন ১২০ বল খেলে। যেখানে ছিল ৭টি চারের মার। শান্তর ফিফটির পরপরই সাজঘরে ফিরে যান তামিম। তাদের ১৪৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন বিশ্ব।

অথচ সেই ওভারের প্রথম বলেই আত্মবিশ্বাসী ড্রাইভে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তামিম। দৃষ্টি সীমানায় চলে এসেছিল ক্যারিয়ারের দশম টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু সেটিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায়। শুরু থেকে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা তামিম কাঁটা পড়েন নড়বড়ে নব্বইয়ে পা রেখেই।

এই উইকেটে বিশ্বর কৃতিত্বের চেয়ে তামিমের দায়টাই বেশি। ব্যাক অব লেন্থে পড়া ডেলিভারিতে কী করবেন তা ঠিক করতে পারেননি তামিম। অদ্ভুত এক অবস্থায় পড়ে ক্যাচ তুলে দেন স্লিপ কর্ডনে দাঁড়ানো লাহিরু থিরিমান্নের হাতে। আউট হওয়ার আগে ১৫ চারের মারে ১০১ বলে ৯০ রান করেন এ অভিজ্ঞ ওপেনার।

তামিম ফিরে গেলেও দমে যাননি শান্ত। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মুমিনুল হককে নিয়ে মন দেন ইনিংস পুনর্গঠনের কাজে। যা বেশ ভালোভাবেই করতে থাকেন তিনি। ধনঞ্জয় ডি সিলভার করা ৪২তম ওভারে ইনসাইড শটে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকান শান্ত।

তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন মুমিনুলও। লঙ্কানদের করা প্রতিটি বাজে বলেই বাউন্ডারি হাঁকান টাইগার অধিনায়ক। যার ফলে রানের চাকা কখনও থামেনি বাংলাদেশের। তামিমের পর শান্ত-মুমিনুলের দায়িত্বশীল ব্যাটেই দ্বিতীয় সেশনও নিজেদের করে নেয় সফরকারিরা। ২ উইকেটে ২০০ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

তৃতীয় সেশনটা ছিল আরও স্বপ্নময়। শান্ত আর মুমিনুল মিলে অনায়াসেই কাটিয়ে দেন ওই সেশন। এর মধ্যে সেশনের শুরুতেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান শান্ত। ২৩৫ বলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মাইলফলকে পা রাখেন বাউন্ডারি হাঁকিয়েই। এর কিছুক্ষণ পর হাফসেঞ্চুরির ঘর ছুঁয়ে ফেলেন অধিনায়ক মুমিনুলও।

তবে তাতেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ মনে করেননি তারা। সেশনের বাকি সময়টা খেলেছেন একদম মাথা ঠান্ডা রেখে। ফলে প্রথম দিনের শেষ সেশনে আর কোনো উইকেট হারায়নি টাইগাররা।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test