E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাঠের খেলায় সাকিবই সেরা

২০১৪ অক্টোবর ২৬ ১১:১৩:০৬
মাঠের খেলায় সাকিবই সেরা

স্পোর্টস ডেস্ক : মাঠের সাকিবকে নিয়ে কখনও কোনো বির্তক ছিল না। সেখানে ছিল শুধুই আলোর বিচ্ছুরণ।  সাকিবকে নিয়ে যত বিতর্ক তার সবকিছুই মাঠের বাইরের কারণে। সরাসরি উল্লেখ করলে ‘আচরণগত’। এই আচরণগত সমস্যার কারণে তিন মাসর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরে এসেই সাকিব আবারও প্রমাণ করলেন মাঠের খেলায় তিনিই সেরা। সেখানে তাকে নিয়ে কেউ এক চুল পরিমাণ কিছু বলতে বা সমালোচনা করতে পারবে না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজের প্রথম দিনই সাকিবময় হয়ে ওঠে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। তার ক্যারিয়ারের দ্বাদশবারের মতো ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সাকিবের ৫৯ রানে ছয় উইকেটে ছিল আবার তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরাও। তার সেরা বোলিং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ২০০৮ সালে ৩৬ রানে নিয়েছিলেন সাত উইকেট।

২০১৪ সাল যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কালো অধ্যায় হয়ে উঠেছে। ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকা পড়ে কিছুতেই উদ্ধার হতে পারছে না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজকে নিয়েছে সেই উদ্ধার পাওয়ার পথনির্দেশক হিসেবে। একইভাবে সাকিবের জন্যও ২০১৪ সাল কালো অধ্যায় হয়ে আছে। এই এক বছরেই তিনি দু-দুবার নিষেধাজ্ঞার খড়েগ পড়েছেন। প্রথমে এশিয়া কাপে অশালীন ভঙ্গির কারণে তিন ম্যাচ সাসপেন্ড। পরে নতুন কোচ হাতুরুসিংহের সঙ্গে বাজে আচরণের কারণে তাকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাইরের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে সাকিব ক্ষমা চেয়ে শাস্তি মওকুফের আবেদন করলে বিসিবি শুধু আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শাস্তি তিন মাস কমিয়ে আনে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজর বিপক্ষে সিরিজ না খেলতে না পারলেও ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে ফিরে আসেন। আর ফিরে এসেই দেখান নিজের চির-চেনা সেই দ্যুতি। এখানে পার্থক্য মাঠের সাকিবের সঙ্গে মাঠের বাইরের সাকিবের। তিনি বলেন, ‘ওরকম কিছু নিয়ে কখনও চিন্তা করি নাই। ওই ২-৩ মাস যখন নিষিদ্ধ ছিলাম একটুতো হার্ডটাইম গেছেই। কামব্যাক ঠিক বলব না। আমার কাছে এমন কখনই মনে হয়নি অনেকদিন পর খেলতে এলাম। বিশেষ করে যখন প্রথম বল করতে এলাম, দর্শকরা যেভাবে সাপোর্ট করেছে ওই সময় আমার আসলে কোনো নীতিবাচক অনুভূতি থেকেও থাকে সেটা কেটে গেছে। আমি মনে করি আমি খুবই ভাগ্যবান, এই সাপোর্টগুলো আমি সব সময় পাই। যদি দলের জন্য এবং সাপোর্টারদের জন্য খেলতে পারি তবে আরও পাব। আমার কাছে মনে হয় এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
ভক্তদের জন্য সাকিবের এ রকম দ্যুতি ছড়ানো নৈপুণ্য শুধুই আফসোসের কারণ হয়ে থাকবে। কারণ সাকিবকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো ছাড়াও রাস্তায়ও নেমেছিলেন ভক্তরা । তাদের স্বপ্নের নায়কের জন্য এ রকম শাস্তি এক হাঁড়ি দুধে এক ফোঁটা চনা ফেলার মতো হয়ে গেছে। স্বল্পভাষী সাকিব অবশ্য ব্যাট-বলে নিজেকে তুলে ধরাকেই একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। যার প্রমাণ তিনি আবারও রেখেছেন ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন। সাকিবের কল্যাণে বাংলাদেশ চলতি বছর প্রথমবারের মতো কোন টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে। এখন সেটাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখাই হবে আসল কাজ। সেখানেও সাকিবের পানে চেয়ে থাকবে গোটা দেশ। বল হাতে দায়িত্ব পালনের পর ব্যাট হাতেও যে তিনি আস্থার প্রতীক। তারপর আবার রয়েছে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস। সব মিলিয়ে প্রথম দিনই সাকিব নিজের ফিরে আসা ম্যাচে নিজেকে যেভাবে মেলে ধরেছেন তাতে করে এ টেস্টের মধুর স্বাদ পেতে হলে শেষ পর্যন্ত ব্যাটে-বলে সাকিবকেই পালন করতে হবে মহান দায়িত্ব।
শাহদাতের করা দিনের প্রথম বলই যখন সিবান্দা বাউন্ডারি হাঁকান তখন কিন্তু দিনের সূচনায় অন্যরকম আবহ ছিল। যদিও সেই শাহদাতই পরে সিবান্দাকে ফিরিয়ে দিনের প্রথম উইকেটের পতন ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু পেসারদের সাফল্য ওই পর্যন্তই ছিল। তারপর দিনভর চলেছে শুধু স্পিনারদের নৃত্য। যে নৃত্যে সাকিবকে সহায়তা করেন অভিষিক্ত জোবায়ের (২/৫৮) ও তাইজুল (১/৪২)। মাসাকাদজাকে দিয়ে শুরু করেছিলেন সাকিব। তারপর একে একে শিকার করেন চিগুম্বুরা, চাকাভাবা, নিওম্বু, পানিয়াঙ্গারা ও কামুঙ্গোজিকে। সাকিবের এক একটি উইকেটে দর্শকদের উল্লাস ছিল বাঁধনহারা। ৩৫ টেস্টে ১২৮ উইকেট নেয়া সাকিব জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। তালিকায় এখন শুধু বাকি আছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ রকম সাফল্য পাওয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষ তিনি পাঁচ উইকেট পাবেনই বা কী করে। নিজের অভিষেকর পর এখন পর্যন্ত তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোন টেস্ট ম্যাচই খেলেননি। যদি সুযোগ পেতেন তাহলে হয়তো তার ঘূর্ণি বলের জাদুতে অসিরাও ধরাশাযী হতো! তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে যদি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলা হয় আর যদি ৫ উইকেট পেয়ে যাই তাহলে ভালো একটা অভিজ্ঞতা হবে। যখন ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করব তখন ভালো একটা অনুভূতি থাকবে।’
স্পিন সহায়ক উইকেটে বাউন্স ছিল অবাক করার মতো, যা দেখে সাকিব নিজেও রীতিমতো অবাক। ঘরের মাটিতে এ রকম বাউন্স তিনি আগে কখনও পাননি। দিনের খেলা শেষে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে এসে তার কণ্ঠ দিয়ে বের হয়েছে সে রকমই কথা, ‘ধারাবাহিকভাবে এত বাউন্স করেনি। কিছু বল যেভাবে লাফ দিয়েছে আগে এমন কখনও হয়নি।’ ম্যাচের নিষ্পত্তিতে স্পিনই ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে বলে সাকিব মনে করছেন। যদিও জিম্বাবুয়ের পেস আক্রমণকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন, ‘স্পিন একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। আমরা যদি ভালো অ্যাপ্লাই করতে পারি আমার কাছে মনে হয় আমরা ভালো একটা অবস্থানে যেতে পারব। ওদের পেস বোলাররাও কিন্তু ভালো বল করেছে।’
উইকেটের যে অবস্থা তাতে করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে স্বস্তি পাবেন তা কিন্তু নয়। ১২ ওভার খেলার সুযোগ পেয়ে তামিমের উইকেট হারাতে হয়েছে। সাকিবও মনে করেন উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য ‘হেল্পফুল’ হবে না। তারপরও তার মেসেজ হলো যতক্ষণ সম্ভব ব্যাটিং করা। স্কোর বোর্ডে অন্ততপক্ষে ৪০০ রান দেখতে চান তিনি।
(ওএস/এইচআর/অক্টোবর ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test