E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাফল্যের শেষ গন্তব্য চট্টগ্রাম

২০১৪ নভেম্বর ০৯ ১৩:৩৯:১৮
সাফল্যের শেষ গন্তব্য চট্টগ্রাম

স্পোর্টস ডেস্ক  : ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’— প্রচলিত এই প্রবাদটি সত্য প্রমাণের দায় এসে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর। ২০১৪ সাল বিদায়ের পথে। টাইগারদের জন্য বছরের শুরুর সাথে শেষের কোনো মিল নেই। আছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বছরের শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কাছে গোটা সিরিজ হারের মাধ্যমে। সেই হার সংক্রামক হয়ে বাংলাদেশ দলকে রেখে দেয় হারের বৃত্তেই।

পরাজয়ের তালিকা এমনই সংক্রামক হয়ে ওঠে যে টি-২০ ক্রিকেটে হংকং, একদিনের ক্রিকেটে আফগানিস্তানের মতো দলের কাছেও হারের নোনা স্বাদ নিতে হয়েছিল মুশফিকুর রহীমদের। এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশ দল জয় যে একেবারে পায়নি তা কিন্তু নয়। তবে তা ছিল প্রত্যাশিত। না পাওয়াটাই হয়ে থাকত অঘটন হিসেবে। কারণ দলগুলো ছিল আইসিসির সহযোগী সদস্য। টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আফগানিস্তান ও নেপালকে হারিয়েছিল। একই আসরে হংকংয়ের কাছে হারের পর এসব দলের কাছেও হারলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভয়ানক সর্বানাশ হয়ে যেত। এ রকম হারের বৃত্ত থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পেরেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে। তিন টেস্টের সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট জিতে বাংলাদেশ সিরিজ বগলদাবা করে নিয়েছে। এখন অপেক্ষায় আছে ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামে শুরু হওয়া শেষ টেস্টকেও একইভাবে নিজেদের করে নিতে। প্রথম দুই টেস্টে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যেভাবে সফরকারীদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন তাতে করে শেষ টেস্টের ফলও ভিন্ন রকম হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশ যদি শেষ টেস্ট নিজেদের করে নিতে পারে তাহলে একদিকে যেমন ঘরের মাটিতে অতিথিদের প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পাবে, তেমনি আবার ভালোভাবে বছরের শেষটা করারও দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। তখন বাকি থাকবে পাঁচ ম্যাচের একদিনের সিরিজ। এরপরই শেষ হবে বাংলাদেশের ২০১৪ সালের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা। লক্ষ্য পূরণে জিম্বাবুয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ দল খুলনা থেকে ঢাকা হয়ে শনিবারই চট্টগ্রাম গিয়ে পৌঁছেছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ তাদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে ঢাকাতে ১ ডিসেম্বর। কিন্তু শেষ টেস্ট খেলবে চট্টগ্রামে। টেস্ট ম্যাচে ভালো করার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার বিষয়টিও তাই চট্টগ্রামে নিহিত। আর চট্টগ্রাম বলেই সবাই আশাবাদী হতে পারেন। কারণ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে। মাঝে মাঝে অন্য কোথায় খেলা হলেও এই দুটি ভেন্যু কখনও বাদ পড়ে না। চট্টগ্রাম সব সময় বাংলাদেশ দলকে দুহাত ভরে দিয়েছে। যে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে, সামনে হোয়াইটহোয়াশ করার হাতছানি, সেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েই বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছিল এই চট্টগ্রামেই ২০০৫ সালে। ২০০০ সালে টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ পেয়েছিল অধরা জয়। এরকম অনেক উদাহরণের মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডোবার পর বাংলাদেশ পেয়েছিল এ রকম জয়। চট্টগ্রামের মাটি এভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য উর্বর হয়ে আছে। এবার কি তার ব্যতিক্রম ঘটবে? এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ তাদের বছরের শেষটা চট্টগ্রামে কীভাবে করে?
২০০৫ সালে বাংলাদেশ দলকে জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন এনামুল জুনিয়র নামক এক নতুনের হাত ধরে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নেমেই ঘূর্ণি বলে তিনি বাজিমাত করেছিলেন ম্যাচজয়ী বোলিং করে। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। এবারও জিম্বাবুয়েকে ঘায়েল করা হয়েছে সেই ঘূর্ণি বলেই। তবে নায়ক এনামুল জুনিয়রের মত নতুন কেউ নন। অভিজ্ঞতায় পুষ্ট বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাকিব। ব্যাটে-বলে তিনি একাই শেষ করে দেন জিম্বাবুয়েকে। ব্যাট হাতে ১৩৭ ও ৬ রান করার পাশাপাশিব বল হাতে দুই ইনিংসে নেন পাঁচটি করে ১০ উইকেট। এখানে সাকিবকে আবার সহয়াতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল ও জোবায়ের নামে দুই তরুণ। তাইজুল দুই ইনিংসে তিনটি করে ছয়টি ও জোবায়ের প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন দুই উইকেট। একইভাবে ২০০৫ সালে এনামুল জুনিয়রকে সহায়তা করেছিলেন আরেক বাঁহাতি অভিজ্ঞ মোহাম্মদ রফিক। প্রথম ইনিংসে তিনি পাঁচ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য কোনো উইকেট পাননি। অবশ্য এই টেস্টে শুধু স্পিনাররাই সফল ছিলেন না, দুই পেসার মাশরাফি ও তাপস বৈশ্যও উইকেট পেয়েছিলেন। মাশরাফি পাঁচটি (তিন ও দুই) এবং তাপস তিনটি (এক ও দুই) উইকেট পেয়েছিলেন।
চট্টগ্রামে পাওয়া প্রথম জয়ের সঙ্গে খুলনায় সিরিজজয়ী ম্যাচে বাংলাদেশের কিছু মিলও আছে। সেবারও বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রান করেছিল এবারের মতোই (৪৩৩) চারশর ঘরে ৪৮৮। সেখানে জিম্বাবুয়ের রানও ছিল এবারর মতো (৩৬৮) তিনশর ঘরে ৩১২। এবার বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে নয় উইকেটে ২৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। ২০০৫ সালেও নয় উইকেটে হারিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিল ২০৪ রানে। প্রথমবার বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৭৬ রানে জয়ী হয়েছিল ২২৬ রানে। পরেরবার ৬৫ রানে এগিয়ে থেকে জয়ী হয় ১৬২ রানে। দুবারই জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছিল ১৫৪ ও ১৫১ রানে। সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে হোয়াইটওয়াশের যে হাতছানি তা বাস্তবায়ন করতে দলের খেলোয়াড়দের আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে খেলতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি বলেন, ‘সিরিজ জয় করার ফলে খেলোয়াড়দের মাঝে যেন আত্মতুষ্টি না চলে আসে। প্রথম দুই টেস্টে জয়ী হলেও অনেক ভুল আছে। সেগুলো শোধরাতে হবে। ফিল্ডিং, রানিং বিটুইন দ্য উইকেট এবং ব্যাটসম্যাদের শট সিলেকশনে আরও মনোযোগী হতে হবে।’ অবশ্য চট্টগ্রামের উইকেট কেমন হবে তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানান সাবেক এই ক্রিকেটার।
(ওএস/এইচআর/নভেম্বর ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test