E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘হিউজ, এই সেঞ্চুরিটি কেবলই তোমার জন্য’

২০১৪ ডিসেম্বর ০৯ ১৭:৪৫:০৩
‘হিউজ, এই সেঞ্চুরিটি কেবলই তোমার জন্য’

স্পোটর্স ডেস্ক : ওপর থেকে ফিলিপ হিউজ কি আজ দেখেছেন ডেভিড ওয়ার্নারের ইনিংসটা? দেখে থাকলে নিশ্চয়ই তিনি প্রচণ্ড খুশি হতেন বন্ধুর এমন এক কীর্তিতে। আজ তাঁর বন্ধু এমন এক কীর্তি গড়েছেন, যা তাঁকে নিয়ে গেছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের এক অনন্য পরিসরে। মাত্র ৩৩টি টেস্ট খেলে নিজের দশম সেঞ্চুরিটি করে ওয়ার্নার বসেছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, নিল হার্ভে আর আর্থার মরিসের পাশে। বেঁচে থাকলে আজ সন্ধ্যাটা নিশ্চয়ই বন্ধুর সঙ্গে হইহুল্লোড় করে কাটাতেন তিনি!

বন্ধুও যেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞাই সেরে রেখেছিলেন। হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষটিকে আজ একটা দারুণ উপহার দেবেন। সেটা তিনি দিলেন অসাধারণ ভঙ্গিতেই। ভারতীয় বোলারদের চোখের জল, নাকের জল এক করেই। কীর্তি গড়েই উদযাপনটা তাই হলো বন্ধুর উদ্দেশেই। আকাশের সীমানায় তাকিয়ে ব্যাট তুললেন। যেন হিউজকে তিনি চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন। তাঁকে দেখতে পেয়েই দুঃসহ বেদনা যেন কুরে খেল তাঁকে। হায়, এমন কীর্তির পরেও প্রিয় বন্ধুর ছোঁয়া যে তিনি পাচ্ছেন না।

আজ অ্যাডিলেডে ওয়ার্নারের সেঞ্চুরিটিকে কী ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম আবেগঘন ইনিংস হিসেবে অভিহিত করা যায় না? সেঞ্চুরি করেই জার্সির হাতায় চোখ মুছলেন তিনি। কষ্ট বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইল তাঁর গলা বেয়ে। মনে মনে হয়তো বললেন, ‘হিউজ, এই সেঞ্চুরিটি কেবলই তোমার জন্য।’

ওয়ার্নারের সমান টেস্ট খেলে তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি মাত্র দুজনের—ডন ব্র্যাডম্যান আর নিল হার্ভের। একই সমান টেস্ট খেলে ব্র্যাডম্যানের সেঞ্চুরি ১৮টি, হার্ভের ১২টি। আজ আর্থার মরিসের ১০টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ব্র্যাকেটবন্দী হলেন তিনি। এমন রেকর্ড নেই অস্ট্রেলিয়ার অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানেরও। অ্যালান বোর্ডার, গ্রেগ চ্যাপেল, ইয়ান চ্যাপেল, রিকি পন্টিং, মার্ক আর স্টিভ ওয়াহরা আজ নিশ্চয়ই ঈর্ষার একটা সূক্ষ্ম খোঁচা অনুভব করছেন তাঁদের হৃদয়ে। ওয়ার্নার এই অনন্য কীর্তিটি গড়লেন এমন একটা দিনে, যাকে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ইতিহাসেরই কঠিনতম দিন হিসেবে অভিহিত করছেন সবাই। মাত্র ১৩ দিন আগে প্রিয় বন্ধুকে হারানোর শোক যে এমন ঝড় হয়ে দেখা দেবে, সেটা কী কেউ ভেবেছিল!

অ্যাডিলেডের মাঠে ‘মিস্টার কনসিসটেন্টে’র ভূমিকায় আগে থেকেই ছিলেন ওয়ার্নার। আজ সেই ব্যাপারটিকে আরও পোক্ত করলেন তিনি। এই মাঠে তাঁর ব্যাটিং গড় গিয়ে ঠেকেছে ষাটের ওপরে। তিন টেস্টে তিন শতাধিক রানে এই মাঠকে ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলা ওয়ার্নার আজ ছাড়িয়ে গেলেন বাকি সবকিছুকেই। তাঁকে টি-টোয়েন্টি ঘরানার ক্রিকেটার বলা হয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার টেস্টে যে কী ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, সেটা আজ ক্রিকেট দুনিয়াকে দেখিয়ে দিলেন তিনি।

২০১৪ সালে পঞ্চাশোর্ধ সংগ্রহ আছে তাঁর টানা আট ইনিংসে। ১৪৫ রান করে প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ৪৯ রান করতে পারলেই তাঁর ব্যাটিং গড়ে ৫০ ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। শোককে শক্তিতে পরিণত করার এমন দারুণ উদাহরণ আর কয়টা দেওয়া যাবে? ওয়ার্নার আজ তাঁর ৫০ পূরণ করেন মাত্র ৪৫ বলে। ১০০, ১০৬ বলে। ৬৩ রানে নট আউট থাকার সময় খেলা থামিয়ে আকাশের দিকে চাইলেন একবার। যেন পরামর্শ নিচ্ছেন বন্ধু হিউজের কাছ থেকে। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আবেগঘন সংখ্যা যে এখন ওটাই।

ওয়ার্নারের আজ হিউজকে অনেক বেশি মনে পড়বে। শেফিল্ড শিল্ডে তাঁর প্রথম শতকের দিন উইকেটের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন হিউজ। আজ তাঁর দশম টেস্ট সেঞ্চুরির দিন হিউজ না থেকে পারেনই না। এমন বিশ্বাস বদ্ধমূল ওয়ার্নারের হৃদয়েও, ‘আজ যখন খেলছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল হিউজ আমার সঙ্গেই আছে। সে আগে থেকেই বলে দিচ্ছে বলের গুণাগুণ। আমি যেন ওর পরামর্শ মেনেই ব্যাট চালাচ্ছিলাম। এই ইনিংস তো হিউজের জন্যই।’

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test