E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আইএসএল ফাইনালে মুখোমুখি শচীন-সৌরভ!

২০১৪ ডিসেম্বর ১৮ ২১:৩১:০২
আইএসএল ফাইনালে মুখোমুখি শচীন-সৌরভ!

স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : আমিরির পেনাল্টি কিক ক্রসপিসে লাগতেই আচমকা চিত্কার 'এডিকে, এডিকে!' কুড়ি হাজারি জনতার চিত্কারে ভেসে যাওয়া এই জনা কুড়ি কলকাতার সমর্থক জেগে উঠলেন এতক্ষণে৷ আর তাদের নেতৃত্বে কে জানেন? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়! 'বাবা তুমি চিত্কার করছ না কেন?' ম্যাচ চলার সময় মাঝে-মাঝেই সৌরভকে বলছিলেন মেয়ে সানা৷ হেসে জবাব ছিল, 'চিত্কার করার জন্যই তো তোকে এনেছি৷ তাহলেই হবে৷' সেই সৌরভই বদলে গেলেন ম্যাচ শেষে৷ বলে গেলেন, 'ক্রিকেট জীবনের উত্তেজনা অনুভব করছিলাম৷ অসাধারণ জয়৷'

এই সময়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জিকোর গোয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে ৪-২ জিতে ফাইনালে৷ এ বার সৌরভের কলকাতার সামনে শচীন তেন্ডুলকারের কেরালা ৷ গোয়ার হয়ে প্রথম শটই মিস করলেন ব্রাজিলের আন্দ্রে সান্তোস৷ আমিরির তিন নম্বর শট বারে৷ আর কলকাতার হোসেমি, রফি, খোফ্রে এবং বোরহা, চারজনই গোল করলেন৷ গোয়ার মাঠে আগাম ক্রিসমাস সেরে ফেলল কলকাতাই! প্রথমবারই আইএসএলের ফাইনালে৷ যাবতীয় বিতর্ক-ঝগড়া-ঝামেলা সব এখন অতীত৷ এমনকি যাকে নিয়ে এত গন্ডগোল, সেই ফিকরুও ম্যাচ শেষে বলে গেলেন, 'চোট যাই থাকুক, ফাইনালে আমি খেলবই৷' ফিকরুকে টিমের সঙ্গে না আনতে চেয়ে যিনি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, এ দিন গোল না হওয়ার টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন সেই কোচ আন্তেনিও আবাস৷

ম্যাচের আশি মিনিটে কলকাতা রিজার্ভ বেঞ্চে হঠাত্ চাঞ্চল্য, দৌঁড়াদৌড়ি তাকে নিয়েই৷ মুখে-চোখে ঠান্ডা জল দেওয়া থেকে শুরু করে ডাক্তারের ছুটে আসা, সবই হল৷ তিনি রিজার্ভ বেঞ্চে থাকলেন বটে, তবে বাকি সময়টা কোচিং করালেন টিমের সহকারী কোচ৷ ম্যাচ শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নার্সিহোমেও নিয়ে যেতে হল৷

চাপ-চাপ আর চাপ৷ খেলা কেমন হল, পরের প্রশ্ন৷ কিন্ত্ত এরকম চাপের ফুটবল আইএসএলে এ বার হয়নি৷ একশো কুড়ি মিনিটের লড়াই শেষে টাইব্রেকারে জয়৷ লুইস গার্সিয়া ঠিকই বলেছেন, 'এই লড়াইটাই ফাইনালে আমাদের পজিটিভ দিক৷' ১৩ বছর আগে এই মাঠ থেকেই শেষ আই লিগ জিতে ফিরেছিল মোহনবাগান৷ সুব্রত ভট্টাচার্যের কোচিংয়ে সালিউয়ের গোলে বাগান হারিয়েছিল চার্চিলকে৷ সে দিন সারা গোয়া মাঠে ভেঙে পড়েছিল চার্চিলের সমর্থনে৷ ম্যাচ শেষে গোয়ানদের ফিরতে হয়েছিল হতাশ হয়ে৷ এ দিনও যেন তারই পুনরাবৃত্তি৷ সেই ম্যাচের মোহনবাগানের অন্যতম যোদ্ধা ব্যারেটো আজ টিমের সহকারী কোচ৷ গ্যালারিতে বসে তিনি বলে গেলেন, 'গোয়া কিন্ত্ত আমার কাছে লাকি৷'

গোয়া এখন এমনিতেই রঙিন৷ আর দিন কয়েক পরেই ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার৷ বাড়িতে-চার্চে-রাস্তায় আলোর বন্যা৷ উত্সব শুরু হয়ে গিয়েছে এখনই৷ সেই উত্সবে আরও রং ঢেলে দিয়েছিল আইএসএলের গোয়া-কলকাতা ম্যাচ৷ ড্রাম-বিউগল, জার্সি-পতাকা৷ গালে রং মাখা সুন্দরী৷

ফাতোরদা স্টেডিয়ামের আগে কদম্ব সার্কেল বলে একটা জায়গা আছে৷ সেখানে মাঠে ঢোকার গাড়ির লাইন দেখে মনে হল, বড় ম্যাচের দিন বেলেঘাটার বিল্ডিং মোড়৷ তফাত্ একটাই, ওখানে সবুজ-মেরুণ, লাল-হলুদ, দুটো রংই থাকে৷ কিন্ত্ত এখানে রং একটাই, কমলা৷ জিকোর টিমের রং যে এটাই৷ তবু কেন জিততে পারল না গোয়া? নারায়ণ দাস না থাকাটা বড় ক্ষতি, বলে গেলেন জিকোও৷ পাশাপাশি পিটার কার্ভালো আচমকা চোট পেয়ে যাওয়ায় মাঝমাঠের ছন্দ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল৷ আর এই সুযোগটাই নিল কলকাতা৷ তাই জয়ের নেশায় কলকাতাকে নিয়ে শচীনের শহরে আসলেন সৌরভ।

ফিকরু নেই৷ এই অবস্থাতেও এক স্ট্রাইকারের ভাবনা থেকে কলকাতা কোচ যে বের হবেন না জানাই ছিল৷ সামনে একা মহম্মদ রফি৷ একটু পিছনে গার্সিয়া৷ রফি একা ম্যাচ বার করার স্ট্রাইকার নন, বাচ্চা ছেলেও জানে৷ তা হলে কেন তাঁর সঙ্গে বলজিত্কে ব্যবহার করা হল না? যেটা দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে করার চেষ্টা করা হল৷ কিন্ত্ত ততক্ষণে দুটো টিমই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে৷ যা দেখে গোয়া টিমের সঙ্গে থাকা বেতোও অবাক৷ বলেই ফেললেন, 'দুটো টিমই বাঁচার খেলা খেলছে৷ জানি না কেন? বিশেষ করে গোয়ার তো আরও আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত ছিল৷'

ব্রুনো কুটিনহোর গলাতেও একই সুর৷ ব্যারেটোর সঙ্গে গল্প করতে করতে গোয়া ফুটবলের অন্যতম সেরা মুখ বলছিলেন, 'গোয়া কেন এত স্লো খেলছে, বুঝতে পারছি না৷ কলকাতার না হয় ফিকরু নেই৷ কিন্ত্ত গোয়ার আরও আক্রমণে যাওয়া উচিত৷'

ভুল বলেননি৷ ম্যাচটাকে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলকাতা কোচ কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন৷ তাঁর ডিফেন্সিভ ফুটবলের প্রশংসা করতে বাধ্য হলেন জিকোও৷ বলে গেলেন, 'কলকাতা এই ডিফেন্সিভ স্টাইলটা বেশ ভালো খেলে৷ তবে আমরা পেনাল্টি পেতে পারতাম৷ সান্তোসকে ফাউল করা হয়েছিল৷ আসলে, এই রেফারি কলকাতা ম্যাচে গার্সিয়ার ন্যায্য গোল দেয়নি৷ আজও সেটা রেফারির মাথায় ঘুরছিল৷'

ম্যাচের পর আকাশে আতস বাজির রোশনাই৷ সে দিকে অবশ্য তাকানোর মানসিকতা ছিল না গোয়ার গ্যালারির৷ সবচেয়ে খারাপ লাগছিল জিকোকে দেখে৷ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে যখন বের হচ্ছিলেন, তার চোখও ছলছলে, বাকিদেরও৷ বলে গেলেন, 'আবার আসব৷ দেখা হবে৷'

(ওএস/পি/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test