E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্রাজিলে অতিথি সমর্থকরা নিরাপদেই থাকবেন

২০১৪ মে ৩০ ১২:৫১:৪১
ব্রাজিলে অতিথি সমর্থকরা নিরাপদেই থাকবেন

ক্রীড়া ডেস্ক : ফুটবল। যেন এক জাদুর বাঁশি। যে বাঁশির সুরে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায়। প্রতি চার বছর পর পর যখন বিশ্বকাপের আসর বসে, তখন গোটা বিশ্ব মগ্ন হয়ে পড়ে ফুটবলের মৃত সঞ্জীবনী সুরা পান করার জন্য। এই ফুটবলের সঙ্গে আবার ব্রাজিল নামটি যেন খুব বেশি সমাথর্ক। বিশ্বের অনেক দেশই কম-বেশি ফুটবল নিয়ে অনেক মাতোয়ারা। তারপরও যেন ব্রাজিলের মতো নয়। এর অন্যতম একট কারণ হতে পারে যুগ যুগ এই দেশ থেকে পেলে-গারিঞ্চা-সক্রেটিস-জিকো-রোনালদো-রোনালদিনহো-নেইমারের মতো বিশ্বখ্যাত ফুটবলারদের জন্মভূম।

বিশ্বের যেখানেই ব্রাজিল খেলতে যাক সাম্বা নৃত্য দেখা যাবেই। সেই ব্রাজিলে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপের আসর। কোথায় গোটা দেশ পাগল হয়ে যাওয়ার কথা। সবকিছু ছেড়ে শুধুই ফুটবল ফুটবল ধ্বনি তুলে মুখ দিয়ে ফেনা তোলার কথা। সেখানে এই আয়োজন নিয়ে চলছে বিরোধিতা। লোকজন নেমে এসেছে রাস্তায়। অথচ শুরুর ঘণ্টা বাজছে। দিনের হিসাবে বাকি মাত্র ১৩ দিন। তাহলে কি ব্রাজিলের জনগণকে ফুটবল আর আগের মতো টানে না? তাও সত্য নয়। যারা বিরোধিতা করছেন তারা ফুটবলে প্রতি আকর্ষণ ত্যাগ করে নয়। দরদ তাদের টিকই আছে। কিন্তু তারা তাদের মৌলিক কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। যা তারা মনে করেন বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এত বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ এখানে ব্যয় হয়েছে তা নিয়ে সাধারণ জনগণের তোপের মুখে এখন ব্রাজিলীয় সরকার। বিশ্বকাপবিরোধীদের সঙ্গে এবার যোগ দিয়েছে তীর-ধনুকধারী আদিবাসীরা। মুখে রং মেখে ও পালকের মুকুট পরে প্রায় ৫০০ আদিবাসী সরকারি চত্বরে অনুষ্ঠিত আরও ৫০০ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে সমাবেশে যোগ দেয়। এরপর তারা সেখান থেকে ব্রাজিলের বিশ্বকাপের মাঠের উদ্দেশে মিছিল শুরু করে। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার প্রতিবাদে তারা এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসব আদিবাসী নেতা অধিকাংশই অ্যামাজন অববাহিকা অঞ্চলের। বিক্ষোভকারীরা সরকারি প্লাজার চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে রাখে। ওই এলাকায় কংগ্রেস ভবন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও সুপ্রিম কোর্ট অবস্থিত। বিক্ষোভে অংশ নিতে ৮৪ বছর বয়সী কায়াপো প্রধান রাওনিসহ ব্রাজিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০০টি জাতি গোষ্ঠী জড়ো হয়। রাওনি অ্যামাজন রেইনফরেস্ট রক্ষায় সংগ্রামের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এতে পপ তারকা স্টিংও অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা চিত্কার করে বলেন, ‘কার জন্য এই কাপ? এটা আমাদের জন্য নয়।’ তাদের একজন বলেন, ‘আমি কাপ চাই না, চিকিত্সা ও শিক্ষার জন্য অর্থ চাই।’ ২০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ব্রাজিলের ০.৩ শতাংশ লোকের শরীরে সম্পূর্ণ আদিবাসী রক্ত প্রবাহিত। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গতকাল পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। পুলিশ মিছিলে বাধা দিতে চাইলে বেশ কয়েকজন আদিবাসী তাদের ঘোড়া ছুটিয়ে দেয় ও পুলিশকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়ে মারে। এক পুলিশ সদস্যের পায়ে তীর বিঁধে গেলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটিকে অপসারণ করা হয়। কয়েকজন আদিবাসীকে স্টেডিয়াম পাহারারত পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় ৭০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ১২ জুন শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিল সরকার ১১০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছে, এই অর্থ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা উচিত ছিল। তবে যথাসময়েই, অর্থাত্ ১২ জুন পর্দা উঠবে ব্রাজিল বিশ্বকাপের। দেশগুলোও আসতে শুরু করেছে। সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকবেন সমর্থকরাও। সেই সমর্থকদের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

সাম্প্রতিক কিছু সহিংসতা, বিক্ষোভ সত্ত্বেও বিশ্বকাপে আগত অতিথি, পর্যবেক্ষকরা এখানে নিরাপদেই থাকবেন বলে দাবি জানিয়েছে আয়োজক দেশ ব্রাজিল। এতকিছুর পরে সব বাধাকে অতিক্রম করে বিশ্বকাপ সফল হবে বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের। এ সম্পর্কে মন্ত্রী হোসে এডুয়ার্ডো কারডোজোর বরাত দিয়ে নিউজ ওয়েবসাইট জিওয়ান জানিয়েছে, এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে ব্রাজিলের পুলিশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিচ্ছে। তাই এখানে আগত বিদেশিরা যে সম্পূর্ণ নিরাপদেই থাকবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল রডিরিগো জানোট বলেন, ‘এই বিক্ষোভে বিশ্বকাপের খেলা দেখতে আসার অপেক্ষায় থাকা ৬ লাখ বিদেশির ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। অতিথিপরায়ণ ও নিরাপদ দেশ হিসেবে ব্রাজিলের অতীত অনেক সুনাম রয়েছে। বিরোধিতা বিশ্বের সব দেশেই আছে।

(ওএস/এইচআর/মে ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test