E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্বকাপে আলো ছড়াবেন যারা

২০১৪ জুন ০৯ ১৩:৩৪:৩০
বিশ্বকাপে আলো ছড়াবেন যারা

স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপ! ফুটবল বিশ্বকাপ! ঘুমকে ছুটি দিয়ে, চোখের পাতা খুলে রাখার সেই রাতজাগা প্রহর। কোটি কোটি ফুটবল-পাগলের পথচেয়ে বসে থাকার ক্ষণ।

এই দিনগুলো ঘিরে গড়ে ওঠে কতশত অলিখিত কাব্য। যার বাতাস লাগে বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের ঘরেও। আজকের দিনে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার শৈশব কেটেছে ফুটবল বিশ্বকাপবিহীন। ঘরর কাজ ফেলে ‘বিটিভির যুগে’, বিদ্যুৎবিহীন গ্রামের পথ ধরে ব্যাটারি কাঁধে নিয়ে মজুদ করে রাখার স্মৃতি কার নেই! এ যে স্মৃতির চেয়েও বড় কিছু, আবেগের চেয়ে বেশি আবেগ। ম্যারাডোনা, পেলে, জিদান, ফিগো- এরা সেই আবেগের মধ্যমণি। আজ তারা মাঠে নেই। আছেন তাদের উত্তরসূরিরা। সব চোখ এখন তাদের ওপর। তারাও আলো জ্বেলে চোখগুলোকে বিমোহিত করার নেশায় বুঁদ। এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে পায়ের জাদুতে যারা আলো জ্বালতে পারেন, তাদের নিয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এই আয়োজন।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো : ক্লাব দল রিয়াল মাদ্রিদের গোলমেশিন। জাতীয় দল পর্তুগালের হয়ে তেমন সাফল্য না থাকলেও এখানে একেবারে কম যান না তিনি। দলের প্রতিটি ম্যাচের মধ্যমণি থাকেন তিনিই। তাকে ছাড়া পর্তুগালের শক্তি অর্ধেক। খবর বেরিয়েছে ইনজুরিতে পড়েছেন তিনি। জার্মানির বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচে নাও খেলতে পারেন। তবে এর মাঝে ফিট হয়ে উঠলে জার্মান কোচ জোয়াকিম লোর দুশ্চিন্তার কারণ যে তিনি হবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা এই তারকা গেল মৌসুমে করেছেন ৫৫ গোল! জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সিআর সেভেন কী করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সার্জিও আগুয়েরা : আর্জেন্টিার এই তারকা খেলেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। এই মৌসুমে করেছেন ২৮টি গোল। ইনজুরিতে জর্জরিত থাকা আগুয়েরা মৌসুমের মাঝামাঝি এসে ফিরে পান হারানো ছন্দ। ম্যান সিটির প্রিমিয়ার লিগ এবং ক্যাপিটাল ওয়ান কাপ জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সুয়ারেজের ঠিক পরের স্থান ধরে রেখে মৌসুম শেষ করেন তিনি। অভিশপ্ত ইনজুরি হানা না দিলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে করতে পারেন বড় কিছু।

লুইস সুয়ারেজ : লিভারপুল আর উরুগুয়ের ‘দুষ্টু ছেলে’। গেল মৌসুমে করেছেন ৩১ গোল। যারা গত বিশ্বকাপ দেখেছেন, তাদের কাছে সুয়ারেজকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো কিছু নেই। ম্যারাডোনার মতো তারও আছে ‘হাত-কীর্তি’। ম্যারাডোনা হাত দিয়ে করেছিলেন গোল, আর সুয়ারেজ হাত দিয়ে নিশ্চিত গোল খাওয়ার হাত থেকে দলকে বাঁচান। লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়াতে ছাড়তে তার সেই আশ্রুমাখা মুখের কথা আজও ভুলতে পারেন না উরুগুইয়ানরা। এবার সুয়ারেজের ভাগ্য আরো পরিহাস করছে তার সঙ্গে। পড়েছেন ইনজুরিতে। বিশ্বকাপে দলের হয়ে মাঠে নামতে পারেন কি না, সেই চিন্তায় পেয়ে বসেছে তাকে। তবে তাকে দলে রেখেছেন কোচ। কোচের আশা, প্রথম ম্যাচ থেকে না হোক, অন্তত দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে ফিট হয়ে মাঠে নামতে পারবেন সুয়ারেজ। কোচের আশামতো যদি তিনি মাঠে নামতে পারেন, তবে তার আলোয় আলোকিত হবে উরুগুইয়ে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

লিওনেল মেসি : ‘ছোটো ম্যারাডোনা’। খুদে জাদুকর। বার্সার প্রাণভোমরা। কেউ কেউ অভিমান করে বলেন, ম্যারাডোনা দেশের জন্য যা করেছেন, তার অর্ধেকও তো মেসি করেননি। ওকে ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করতে যাব কেন? বার্সার হয়ে ম্যাচের পরে ম্যাচ গোল করে যান মেসি, অথচ জাতীয় দলের হয়ে গোলের দেখা পেতে তাকে মাথা ঠুকে মরতে হয়। তার দুর্নামের তালিকাটা এখানেই একটু ভারী। ক্লাবের হয়ে যতটা তিনি উজ্জ¦ল, জাতীয় দলের হয়ে ততটা নিষ্প্রভ। কথাগুলো হয়তো সত্য, তবে বাস্তবতাও আছে। বার্সায় তাকে সঙ্গ দিয়েছেন জাভি, ইনিয়েস্তা, পুয়োল, আলভেজ, পিকের মতো প্লেমেকাররা। সেখানে তার পজিশনটাও গোল করার মতো যায়গায়। কিন্তু জাতীয় দলে তাকে খেলতে হয় একটু ভিন্ন স্টাইলে। নিজের মতো করে সেখানে অনেক কিছুই করা হয়ে ওঠে না। তবুও তাকে বিশ্বসেরা মানেন অনেকেই। পেলে, ম্যারাডোনোর থেকেও তাকে উঁচুতে বসাতে চান কেউ কেউ। আর তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ওই একটা যুক্তি- আর্জেন্টিনার জন্য কী করেছে সে? মেসি নিজেও এটা জানেন। কিছুদিন আগেও বলেছেন, এই কথাগুলো শুনতে অনেক কষ্ট লাগে। সেই কষ্টকে হয়ত বুকে পাথরচাপা দিয়ে রেখেছেন বাঁ পায়ের এই জাদুকর। সব না পাওয়া কি তবে ব্রাজিলেই পাওয়া হবে?

ক্লোসা : মিরস্লাভ ক্লোসার অবস্থা ঠিক মেসির বিপরীত। ক্লাব দলের হয়ে তাকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। রিজার্ভ বেঞ্চে তাকে বসে থাকতে হয়। অথচ জাতীয় দলের হয়ে তিনি দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য। বিশেষ করে বিশ্বকাপ এলে কেমন যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠেন জার্মানির এই স্ট্রাইকার। এবারের জার্মান দলে তার ডাক পাওয়াটাও অনেকের কাছে বিস্ময় হয়ে এসেছে। বয়স প্রায় ৩৫। এই বয়সে বিশ্বকাপে ডাক পাবেন তা হয়ত অনুমানই করেননি। কিন্তু কোচ তার ওপর ভরসা রেখেছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রথম একাদশে তাকে দেখাও যেতে পারে। কারণ জার্মানির ঘোষিত বিশ্বকাপ একাদশ থেকে দেখা গেছে, দলের মূল স্ট্রাইকার একমাত্র তিনিই। ক্লোসা আর মাত্র দুটি গোল করতে পারলেই ছাড়িয়ে যাবেন ব্রাজিলের রোনালদোর বিশ্বকাপে করা সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড। জার্মানি ভালো কিছু করতে না পারলেও মাত্র দুটি গোল করে বিশ্বকাপের সব আলো নিজের করে নিতে পারেন এই স্ট্রাইকার।

নেইমার : এবার ব্রাজিল দলের অন্যতম ভরসার নাম নেইমার। ক্লাব দল বার্সায় এখনো তিনি নবাগত। তবে সেখানেও নিজের অপরিহার্যতা বাড়িয়ে চলেছেন দিন দিন। শেষ হওয়া মৌসুমে করেছেন ১৩ গোল। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে পানামার বিপক্ষে খেলেছেন দুর্দান্ত। গোল করে আভাস দিয়েছেন আলো ছড়ানোর। দেখা যাক মূল আসরে কতটা আলো ছড়াতে পারেন এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়।

ডিয়াগো কস্তা : অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে অনেক চমক দেখিয়েছেন তিনি। মৌসুমে করেছেন ৩৫ গোল। ক্লাব খেলায় মেসি, রোনালদোদের ভিড়ে তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন দারুণভাবে। এ বছর লা-লিগা জেতা এই খেলোয়াড় মৌসুমের শেষ দিকে এসে ইনজুরিতে পড়েন। তাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে তেমন কিছু করতে পারেননি। খেসারত দিতে হয়েছে তার দলকে। রোনালদোদের কাছে সঁপে দিতে হয়েছে শিরোপা। ব্রাজিলে জন্মগ্রহণকারী কস্তা এবার স্পেনের হয়ে মাঠে নামতে উন্মুখ হয়ে আছেন। অপেক্ষায় আছেন ইতিহাস সৃষ্টি করার।

রবিন ভ্যান পার্সি : নেদারল্যান্ডসের পার্সি খেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। মৌসুমে করেছেন ২৪ গোল। তার ক্লাব দল এ বছর তেমন কিছু না করতে পারলেও পার্সি মোটামুটি সপ্রতিভই ছিলেন। নেদারল্যান্ডস প্রথম রাউন্ডে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে। এখানে পার্সিদের খেলতে হবে স্পেন, চিলি ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। প্রতিপক্ষ দেখে বোঝা যাচ্ছে, লড়তে হবে নেদারল্যান্ডসকে। সেই সঙ্গে পার্সিকেও।

রোমেলু লুকাকু : বেলজিয়ামের লুকাকু ক্লাবের হয়ে মৌসুমে করেছেন ১৮ গোল। বয়সে তরুণ হলেও তার খেলায় রয়েছে আগুনের ঝাঁজ। ব্রাজিল মাতাতে পারেন তিনিও। প্রস্তুতি ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে তিনি তার আগমনী বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন আগেভাগে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। সামনে যে যুদ্ধ!

(ওএস/এটিআর/জুন ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test